শীতের দুপুরে উষ্ণ রোদের ওম মেখে সবেমাত্র আচারের শিশিটা খুলেছে রিম্পি, এমন সময় কলিংবেলের টিং টং আওয়াজটা কানে এল। ছাদের পাঁচিল থেকে নিচের দিকে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কে...?" কোনো উত্তর এল না। মনে মনে একটু বিরক্তই হল রিম্পি। বাড়িতেও এখন আর কেউ নেই যে দেখতে বলবে। ওরও এখন এতগুলো সিঁড়ি ভাঙতে ইচ্ছা করছে না। এইসব চিন্তার মধ্যেই আরো একবার কলিংবেলটা বেজে উঠল। "ধুর বাবা! আসছি..." আচারের শিশিটা হাতে নিয়েই নিচে নেমে এল রিম্পি। কাঠের দরজাটা খুলে লোহার গ্রিলের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে একটু অবাক হল। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া একজন বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। "হ্যাঁ, বলুন", গলার স্বরটা নিজের অজান্তেই নরম হয়ে আসে রিম্পির। বৃদ্ধা আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকালেন। রিম্পির হাতের দিকে নজর পড়তেই বৃদ্ধার মুখটা অমলিন হাসিতে ভরে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে আচারের শিশিটার দিকে দেখালেন। "আচার। খাবে তুমি?" জিজ্ঞেস করল রিম্পি। বৃদ্ধা আচারের শিশিটার দিকে তাকিয়েই সম্মতি জানালেন। গ্রিলের তালাটা খুলে শিশিটা থেকে কিছুটা তেঁতুলের আচার বের করে সেই বৃদ্ধার হাতে দিল রিম্পি। খুশিতে ভরে উঠলো তাঁর চোখদুটো। তারপর অল্প একটু আচার মুখে দিয়ে আনন্দে, তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করলেন বৃদ্ধা। রিম্পি সেদিকে তাকিয়েই একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একঝলক ঠান্ডা বাতাস চোখে মুখে ঝাপটা দিতেই সম্বিৎ ফিরল ওর। ততক্ষণে সেই বৃদ্ধাও চলে গিয়েছেন সেখান থেকে। চারদিকে একবার তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরে চলে এল ও। মনটা একটু ভারি হয়ে গেল। ওর ঠাম্মাও তেঁতুলের আচার খেতে খুব ভালবাসতেন। আজ প্রায় ছ'মাস হয়ে গেল তিনি গত হয়েছেন। শীতকাল এলেই দুপুরবেলা নরম রোদ গায়ে মেখে ছাদের একপ্রান্তে বসে তেঁতুলের আচার খেতে খুব ভালবাসতেন তিনি। এই চেনা দৃশ্য দেখতে দেখতেই বড় হয়েছে রিম্পি। এইবারের শীতকালে ছাদের সেই চির পরিচিত দৃশ্যপট অচেনা হয়ে গিয়েছে ওর কাছে। ছাদের সিঁড়ির দিকে এগোতে গিয়ে একবার চোখ পড়ল ঠাম্মার ঘরের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিতে গিয়েই চোখ আটকাল টেবিলের উপর রাখা ঠাম্মার ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার দিকে। ভ্রূ কুঁচকে একবার তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল রিম্পি। ঠাম্মার মুখটা কেমন যেন হাসিহাসি লাগছে না! আর চোখ দুটো, একটু যেন কুঁচকে ছোট হয়ে আছে! আর ফটোতে কি লেগে আছে ওটা? এগিয়ে গিয়ে ফটোটার ঠিক সামনে দাঁড়াল রিম্পি। "তেঁতুলের আচার!" ফটোর কাঁচে লেগে থাকা জিনিসটা আঙুল দিয়ে তুলে নিয়ে অবাক হয়ে গেল রিম্পি।