কী যেন একটা বুনে যাচ্ছে রেণু হলুদ আর খয়েরি প্যাঁচের। কাঁটা উঠছে আর নামছে, দূর থেকে লাগছে ঠিক যেন ঝুলন্ত এক চিতি সাপ! অনন্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। ‘শালী ওর ছোটবাবুর জন্য পাগল! ওই ব্যাটারই কিছু হবে নির্ঘাত - এদিকে সে তো তোকে চাকরানি ছাড়া আর কিছু ভাবে না” মনে মনে ভেবে অনন্তর গা জ্বালা করে -- “আজ একটা মিস্তিরি নিয়ে এসো কিন্তু! খিড়কির জানলায় হাওয়া আসছে বড়বাবুর ঘরে!” রেণু আলগা করে বলল। “সবে তো ঠান্ডা পড়ল, বড়বাবু মরে যাবে না!” “মরণ! কথার ছিরি দেখ! আমরা তার খাই পরি মাইনে দিয়ে রেখেছেন তো...” “হ্যাঁ জানি! তুমি আর আমি বাড়ির চাকর চাকরানি আর তোমার বাবা গোমস্তা” “উফফ হয়েছে চুপ করো! কাল শোল মাছ পেলে এনো! ছোটবাবু ভালোবাসে!” “আগের দিন তো আদিখ্যেতা করে পাঁঠা কষা, পরোটা করলে, মুখে দিল? উলটে পরিষ্কার বলে দিল, ‘এসব রান্না কোরো না!”’ রেণু আহত হয়ে মুখ নিচু করে নিল স্বামীকে লুকিয়ে। কেন যে ছোটবাবু তাকে দূর ছাই করে কে জানে! বড়বাবু তাকে ভরসা করে বলে? কিন্তু তারা তো সেই ছোট থেকেই আছে এ বাড়িতে! তাদের আশ্রয় দেওয়া, বড়মার রোগে শোকে তার মায়ের সেবা, ছোটবাবুর বিদেশে পড়তে যেতে মার কী কান্না, একসঙ্গে মানুষ প্রায়, কত আর ছোট বড়! বড়মা আর মার মৃত্যু সব এ বাড়িতে! রেণুর চোখে জল উপচে এল তবু সে খুব খুব ভালোবাসে তার ছোটবাবুকে -- মাস তিন পরই রেণু খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। পোয়াতি ছিল, বাচ্ছাটা সাতমাসে নষ্ট হয়ে গেল কিন্তু রেণু যেন শোক থেকে আর উঠতেই পারছে না - যদিও অনন্তের মনে কিন্তু একটা স্বস্তি এসেছে, সন্দেহের ঘুনপোকা তাকে খেয়ে ফেলছিল এই বাচ্চাটার জন্য --- অনেকদিন বিয়ে হয়েছে তাদের, ছোটবাবু ফিরল আর অমনি তার বউ পোয়াতি হয়ে গেল! বিশ্বাস কী! তাই বাধ্য হয়ে মধু কবরেজের একটা শেকড় রেণুকে... রেণু হসপিটালে, অনন্তর কুটিল চোখখানি চিতি সাপের মতো দেখতে অসমাপ্ত মাফলারটার দিকে যায় আর সন্দেহ বুনতে থাকে। রেণু ফিরলে এই মাফলারটা দিয়েই ওকে এখন আলমারিতে পচা! আলমারির ঘাঁটতে গিয়ে অনেক ভেতরে একটা খাম তার মধ্যে... এ কী! অনন্ত চমকে ওঠে! আলমারিতে শাড়ির ভেতর ভাঁজে একটা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবি! রেণুর মা আর তাদের বড়বাবুর ঘনিষ্ঠ ফ্রেম! পিছনে লেখা মা আর বাবু... অনন্ত চমকে ওঠে। রেণু আর ফেরেনি। আধবোনা চিতি সাপের মত দেখতে মাফলারটা অনন্তকে খালি ফণা তোলে!