"মা আজ একটু দেরি করেও শুতে পারো, কাল থেকে আমাদের এই ক্যালিফোর্নিয়ায় উইন্টার টাইম অর্থাৎ শীতের সময় সেট হয়ে যাচ্ছে।" মায়ের ডিনার দিয়ে ছোট্ট খাপওয়ালা মেডিসিনের সারা সপ্তাহের নাম লেখা কৌটোগুলো থেকে রাতের ওষুধ বার করতে করতে মা তনুশ্রী দেবীকে কথাগুলো বলল তমালি। তনুশ্রী দেবী অশীতিপর বৃদ্ধা হলে কী হবে, সর্বদাই প্রাণশক্তিতে ভরপুর এবং কৌতুকপ্রিয়। মেয়ের কথা শেষ হতে না হতেই বলে উঠলেন, "অ, তার মানে তোরা আবার সেই খোদার ওপর খোদকারি করছিস। বুঝি না বাপু অ্যাতো হ্যাঙ্গাম কেন করিস। একবার একঘন্টা এগোও তো আবার একঘন্টা পিছোও। কার কী লাভ হয় এতে? একটু বুঝিয়ে বল তো!" মা কিন্তু ঠিকই বলেছে, ভাবে তমালি, এই এক ঢং আমেরিকার, উইন্টার টাইম আর সামার টাইম। উফ্, নাভিশ্বাস উঠে গেল! প্রথম প্রথম এসে তো কিছুতেই সে তাল মেলাতে পারত না। বড় বড় সব কথা, কী না, “ডে লাইট সেভিংস টাইম", অর্থাৎ যখন দিন ছোট আর রাত বড় তখন যাতে একটু বেশি করে দিনের আলো পাওয়া যায় এবং বিদ্যুতের অপচয় কম হয় তার ব্যবস্থা, আবার গরমকাল এসে গেলে একঘন্টা এগিয়ে যাওয়া। নভেম্বরে এদেশে সকলের মনটা খুশি হয়ে যায়, যেমন আজ অর্থাৎ ৬ই নভেম্বর আবার ওই গরমকালের এগিয়ে যাওয়া ঘড়ির কাঁটা রাত দুটোর সময় পিছিয়ে গিয়ে, "গেইন" করবে পুরো একটি ঘন্টা। আসলে পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু মানসিক। কোথাও কোনো সময় হারাচ্ছে না বা বাড়ছে না, একটা গোটা দেশকে ঘাড় ধরে একটু আগে বা পরে ঘুম থেকে ওঠানো হচ্ছে। এর ফলে এই যাঁরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে এদেশে এসেছেন, তাঁদের ও তাঁদের আত্মীয়দের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। অঙ্কে মাথা রীতিমত সাফ না থাকলে তাঁদের পক্ষে গোলার্ধের হিসেব সামলে তারপর এই উইন্টার ও সামার টাইমের উপরি ঝঞ্ঝাট বুঝে এদেশে ফোন করা খুবই গোলমেলে। আপাতত মায়ের কথায় হা হা করে হেসে ওঠে তমালি। এদেশে মাকে নিয়ে এসেছে প্রায় চার বছর হতে চলল, তবুও সারাক্ষণই মা বেটিতে লড়াই চলছে। তনুশ্রী দেবী যেই বলেন, "আমার ইন্ডিয়া তোদের এই আমেরিকার থেকে ঢের ভালো," অমনি তমালি সেটা খন্ডন করে আমেরিকার একটা বড়সড় প্লাস পয়েন্ট মায়ের সামনে এনে হাজির করছে। টম অ্যান্ড জেরির মতোই মা মেয়ের এই সংসার। মায়ের অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দিলেও তমালির সামনে এখন অনেক কাজ, ও জানে যে সকালে উঠে মোবাইলের সময় আর ঘড়ির সময় মিলবে না, সে জন্য রাত থাকতেই সব ঘড়িগুলোকে কান ধরে পিছিয়ে রাখতে হবে। আর ঘড়ি কি একটা? কমপক্ষে আট দশটা হাতঘড়ি, এরপর বেডরুম দুটোতে একটা করে, বাথরুমেও একটা আছে, বসার ঘরে আবার বিশাল একটা দেওয়াল ঘড়ি। এরপরেও আছে, মাইক্রোওয়েভ, আভেন এবং গাড়ির ঘড়ি। গায়ে জ্বর আসার মতোই ব্যাপার। মায়ের বিছানার ওপর হাল্কা লেপটা অর্ধেক বিছিয়ে দিল সে। এখনও তেমন শীত পড়েনি, অবশ্য স্যান ডিয়েগোতে কখনোই তেমন শীত পড়ে না। ওই ডিসেম্বরের শেষের দিকে যা একটু। এই দুকামরার অ্যাপার্টমেন্টটায় সেন্ট্রাল হিটিং থাকায় তনুশ্রী দেবীর কোনোই অসুবিধা হয় না। ওনার আবার ভোরবেলা উঠে একটু পুজো করার অভ্যেস। তমালি সারাক্ষণ গজগজ করে, "এই শরীরে সাতসকালে উঠে পুজো কি না করলেই নয়? ঠাকুর কি বুঝবে না তুমি বুড়ো হচ্ছ?" তনুশ্রী দেবী বলেন, "শোন, যত বয়স বাড়বে তত বেশি করে ঈশ্বর স্মরণ করতে হয়। যখন আর পারব না তখন করব না।" এর ওপর আর কথা চলে না। আরও বেশি যখন ঠাণ্ডা পড়ে, তখন তমালি আগে থাকতে উঠে গরম জলের কলটা একটু খুলে রাখে যাতে মা উঠেই জলটা গরম পান। এমনিতেই এই সময়ে হাঁটুর যন্ত্রণা ও অন্যান্য শারীরিক ব্যথা বেদনা তনুশ্রী দেবীকে কাবু করে ফেলে। রাতের বাকি কাজকম্ম সেরে মায়ের ঘরে উঁকি মারে তমালি, দেখে আলো নিভে গেছে, মায়ের অল্প অল্প নিঃশ্বাসের আওয়াজও ভেসে আসছে। ঘুমের ওষুধ ছাড়া তনুশ্রী দেবীর ঘুমই আসে না। রাতের এই সময়টুকু তমালির একান্ত এবং প্রিয়। যেহেতু কাল রবিবার এবং শীতের সময়ের প্রথম দিন হিসেবে এক ঘন্টা বাড়তি পাবে সে, তাই খুব রিল্যাক্সড লাগছে তমালির। সকালের জলখাবারটা মনে মনে ভেবে নিল, আলু, কড়াইশুঁটি, গাজর, টম্যাটো নুন গোলমরিচ দিয়ে বাটি চচ্চড়ি, ওপরে একটু লেবু চিপে দেবে, আর হানি হুইট ব্রেডটা সামান্য চিজ দিয়ে স্যান্ডউইচ করে নেবে। মায়ের জন্য জিঞ্জার টি আর নিজে নেবে ব্ল্যাক কফি। এদেশে তো আর কাজের লোক পাওয়া যায় না, গেলেও তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ, তাই এখানে জীবন যাত্রা খুব রুটিনমাফিক এবং পরিকল্পনা করে প্রতিটা মুহূর্ত চলতে হয়। পরিকল্পনা করেই তমালির জীবনটা অনেকদূর এগিয়েছিল। চার বছর আগে এইরকম নভেম্বরের এক শীতের রাতে জেকবের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা ছিল তমালির। সেটা ছিল থ্যাংক্সগিভিং সপ্তাহ। জেকব ছিল আমেরিকান, ওর মা মেক্সিকান আর বাবা আমেরিকান। জেকব স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে সার্জেন্ট ২ পদে আসীন ছিল। লম্বা, সুঠাম স্বাস্থ্য আর সদা হাস্যময়। তমালি তখন সবে পড়াশুনো শেষ করে এই অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরিটা পেয়েছে। অফিসের কাছেই একটা এক কামরার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকত, আর সেখানেই পাশের ফ্ল্যাটে জেকবের বন্ধু আফ্রিকান আমেরিকান ছেলে টোনিও থাকত। প্রতি শনিবার সন্ধেবেলা সিঁড়িতে জেকবের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যেত তমালির আর অনুভব করত এক তীব্র আকর্ষণ। একদিন টোনি ওকে বার্বিকিউ পার্টিতে আমন্ত্রণ জানালো আর সেই দিনই জেকব তমালিকে প্রোপোজ করে বসল। তমালি কেমন ভেসে গেল। আজ সবটাই স্বপ্নের মতো লাগে। চাকরিতে হু হু করে উন্নতি করতে লাগল জেকব। ভীষণ প্রাণবন্ত ছেলে সে, ফোন করে দেশে তনুশ্রী দেবীকেও পটিয়ে ফেলেছিল। নিজের মা বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গেও তমালির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তারপর ওরই উদ্যোগে এই ফ্ল্যাটটা কেনা, বেশিরভাগ টাকা জেকবই দিয়েছিল। ওরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করে এবং বিয়ের দিনক্ষণও স্থির করে ফেলে। চার বছর আগের সেই থ্যাংক্সগিভিংএ তমালি জেকবের বাবার বাড়িতে যেতে চায়নি, অফিসে অডিটের একটা কাজে খুব ব্যস্ত ছিল। নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার থ্যাংকসগিভিং, সেদিন এদেশে সকলে পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে টার্কি রোস্ট আর আলুভাতে খায়, সঙ্গে থাকে নানাবিধ স্যালাড, ফল আর পাই। এই জীবন, পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু প্রত্যেকের জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। খুব ভালো তমালির লাগে এদের নানাবিধ উৎসব, আর নভেম্বর, ডিসেম্বর এলেই একের পর এক উৎসবের মেলা বসে যায় এদেশে। জেকবের ফেরার কথা ছিল রবিবার, ফোনে কথাও হয়েছিল তার আগের শুক্রবার, ও মা বাবার সঙ্গে কথা বলে ডিসেম্বরের ২২ তারিখে বিয়ের দিন স্থির করে ফেলেছিল। ওদের দেশের বাড়ির পাশেই একটি চার্চে বুকিংও সেরে ফেলেছিল। তমালির কিন্তু খুব ভয় করছিল। একসঙ্গে আছে, ভালোবাসছে, দুজনে দুজনকে চিনছে, সব ঠিক আছে, কিন্তু একেবারে বিয়ে! ওকে যদি ধর্মান্তরিত হতে বলে? এমন অনেক গোঁড়া ক্রিশ্চান পরিবারকে ও চেনে যাঁরা বউ বা জামাইকে পরিবারের সদস্য করার আগে ধর্মান্তরিত করে নেন, তারা রাজি না হলে সে সম্পর্কও ভেঙে যায়! ওর কেমন হাত পা অবশ হয়ে আসছিল। ফোনের অপর প্রান্তে জেকবের উচ্ছ্বসিত গলার পাশে নিজের গলার স্বর কেমন ম্যাড়মেড়ে লাগছিল। ফোনটা রেখে দিয়ে ও পালিয়ে যেতে চাইছিল অন্য কোথাও। কী করবে বুঝতে না পেরে মাকে দেশে ফোন করে ফেলে তমালি, তনুশ্রী দেবীর তখন সাতাত্তর বছর বয়স। ফোনে মেয়ের গলা শুনেই আন্দাজ করেছিলেন সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে। সবটা শোনার পর শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন, "পালিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওকে তোমার মনের দোলাচলের কথা বল, ও সহজ মানুষ, বুঝবে।" সেদিন প্রচণ্ড শক্তি পেয়েছিল তমালি। রবিবার সন্ধেবেলা জেকব বাড়ি ফিরেই ওকে দুহাতে তুলে শূন্যে ছুঁড়ে আবার লুফে নিল, তমালির শরীরে এখনও সেই শেষ আদরের স্পর্শ লেগে আছে। তার কিছুক্ষণ পরেই সে জানাল এ বিয়েতে তার মত নেই, সে প্রস্তুত নয় এবং কিছুদিন সময় চায়। অসম্ভব ধাক্কা খেয়ে জেকব একটা পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল। তারপর নিজের কিছু দরকারি জিনিসপত্র একটা ব্যাগে ভরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তমালিকে বলে গেল, "এই অ্যাপার্টমেন্ট আর সব কিছু তোমার, আমি যৌথ মালিকানা থেকে আমার নাম তুলে নেব। তোমার যতদিন ইচ্ছে থাকো অথবা বিক্রী করে দিও। ভালো থেকো।" তমালি পাগলের মতো কেঁদেছিল সারা রাত। এর পরেই তনুশ্রী দেবী সিদ্ধান্ত নেন গ্রীন কার্ড করিয়ে মেয়ের কাছে পাকাপাকিভাবে চলে আসবেন। দুজনেরই আপনার বলতে আর কেউ রইল না। তমালি এই অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে যেতে পারেনি, মায়ায়। ভেবেছে হয়ত কখনো জেকব এসে বাড়ির মালিকানা দাবি করবে, হয়তো আবার দেখা হবে। কিন্তু হয়নি, বদলে একটি আইনি চিঠি এসেছিল, জেকব তার ভাগের অংশটুকু তমালিকে দান করছে এই মর্মে। জেকবের অনেক বন্ধুর সঙ্গেই তমালির যোগাযোগ ছিল, ব্রেকআপের খবর তারাও জানত। ওদের থেকেই শুনেছিল জেকব ইস্ট কোস্টে নতুন চাকরির আবেদন করেছে এবং পেয়েও গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তমালি জেকবের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। একমাত্র যোগসূত্র এই অ্যাপার্টমেন্ট, কিন্তু জেকব কখনও ফিরে আসেনি। রাত এখন গভীর, তমালি অতীতচারণ থেকে বেরিয়ে শুতে চলে গেল, যে গেছে সে আর ফিরে আসে না। পরদিন সকাল আটটায় মাকে চা দিয়েই সি এন এন নিউজ চ্যানেল খুলে দিয়ে সোফায় বসে কফির কাপে চুমুক দিল। হঠাৎ একটা খবর দেখে ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। আমেরিকার পূর্ব প্রান্তের একটি শহরের দোকানে একটি আতঙ্কবাদী ঢুকে পড়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, তখন সেখানে সকাল ন’টা, পাঁচজন বয়স্ক ক্রেতা ঘটনাস্থলেই মারা যান, জেকব জোন্স নামক এক পুলিশ কর্মী নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ওই ব্যক্তিকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হন এবং অগণিত মানুষের প্রাণ রক্ষা করেন। স্ক্রিনের পর্দায় জেকবের ঘামে ভেজা মুখ। তার জেকব! এক সৎ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুখ। এই মুখ তার বড় আপন, চির পরিচিত, একদিন নিজেই ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিল একে। আজ গর্বে বুকটা ফুলে উঠল তমালির, সেই সঙ্গে চোখের কোণটাও কেমন জ্বালা করতে লাগল, জেকব নিশ্চয়ই এতদিনে সংসারী হয়েছে, তাকে হয়তো ভুলেই গেছে অথবা মনে রেখেছে এক দুর্বলচিত্ত মানুষ হিসেবে! বলব না বলব না করেও তমালি ব্রেকফাস্ট টেবিলে মা কে বলেই ফেলল ঘটনাটা। তনুশ্রী দেবী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন, "তুই কি মানুষ? এটা শুনেও নির্বিকার চিত্তে ব্রেকফাস্ট করছিস? ওর এতো বড় একটা ফাঁড়া কাটল, পুরোনো বন্ধুত্বের খাতিরে অন্তত একটা ফোন কর, খোঁজ নে!" এই ঘটনার ফলে জেকব সারা দেশের হিরো হয়ে গেল। সেদিন সারা দিন শুধু ওরই খবর আর ইন্টারভিউ। খুব ভালো করে শুনেও ওর বান্ধবী বা স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারলো না তমালি, বুকের ধুকপুকুনি বড্ড বেড়ে গেল ওর। দুপুরে মা মেয়ের মত একটা খিচুড়ি অনেক সব্জি দিয়ে ইনস্টা পটে বসিয়ে দিল, যত যাই হোক, পেটে তো কিছু দিতে হবে! ইস্ট কোস্টে তখন রাত ন’টা, টিভির একটা টক শোয়ের হোস্ট জেকবকে একদম চেপে ধরেছেন, "আপনি একজন রিয়েল হিরো, তা আপনার জীবনে কেউ এমন আছেন যিনি আপনাকে অনুপ্রাণিত করেন?" জেকবের মুখে সেই পরিচিত উজ্জ্বল হাসি, "হ্যাঁ অবশ্যই আছেন।" "কে?" "আমার ফিয়ন্সে!" তমালি ভাবে এবার টিভিটা বন্ধ করে দেবে। তারপর কৌতূহলবশতঃ দেখতেই থাকে। জেকব বলে চলে, "নাম করলে উনি আবার রেগে যাবেন। এমনিতেই আমার ওপর রেগে আছেন বিয়ে করব বলেছিলাম বলে।" সঞ্চালক এবং জেকব দুজনেই অট্টহাস্য করে ওঠেন। তমালি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না, এই লোক এতদিনেও কাউকে বিয়ে করেনি? ও কি তার কথাই বোঝাতে চাইল? যে লোক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত মানুষের প্রাণ বাঁচাল সে কি তাকে বিয়ে করে তার ভালো লাগা মন্দ লাগার ওপর খবরদারি করত? সে কি একটু বেশীই ভেবে ফেলেনি? কেমন যেন শীত শীত করতে থাকে তমালির আর সেই সঙ্গে পেটের ভেতর সব হাল্কা হয়ে যায়। তনুশ্রী দেবীর কাছে ছুট্টে গিয়ে ওনার কোলে মুখ গুঁজে দেয় সে। মা স্নেহভরে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন, "আর কতদিন জেগে ঘুমিয়ে থাকবি মা? আমি জানতাম ও ছেলের অনেক বড় মন, নইলে এক কথায় সব তোকে ছেড়ে দিয়ে নিজে সরে যায়?" তমালি ভাবে এবার শীত পড়ুক, ডিসেম্বরের সেই হারিয়ে যাওয়া বাইশ তারিখ আবার নতুন রূপে দেখা দিক তার জীবনে। ধর্ম ও সংস্কারকে হারিয়ে ভালোবাসা জিতে যাক। আস্তে আস্তে সেলফোনে জেকবের নামের ওপর আঙুল দিয়ে "আনব্লক" টিপে দেয় তমালি। শীত যে এমন মধুর হতে পারে আগে বোঝেনি সে, বসন্ত কি না এসে থাকতে পারবে?