"শফিদা, ছেড়ে দাও। আমি একজনকে ভালোবেসে গ্রাম ছেড়েছিলাম। সে আমায় নষ্ট করেছে। ফল এই সন্তান। একে আমি ফেলতে পারিনি। নিজের গ্রামে ফিরে এসেছিলাম আশ্রয়ের খোঁজে। ছেড়ে দাও আমাদের।" বহ্নির কাকুতি-মিনতি শফিকুলের কানে বাজছিল। ওদের বল্লভদার গোডাউনে আটকে রেখে বাড়িতে এসছে শফি। শীতের রাত। আবার ফোন। "শফি! ও মেয়েছেলে আবার পালিয়েছে! তুই প্রত্যেক বাড়িতে খোঁজ করবি ওদের। ঠান্ডায় পালাতে পারবে না। এ পাড়ায় ওদের থাকা হবে না। ওদের লাশ দেখতে চায় দাদা। কাজের দায়িত্ব তোর।" বল্লভ ঠাকুরের চ্যালা কেটে দেয় ফোনটা। খেতে বসেছিল শফিকুল। লালবাগের শীত বিখ্যাত। সকালের ঠান্ডা-ভাত যেন বরফদানা। ফোনটা মেজাজটা খিঁচড়ে দেয়। দু-এক গ্রাস খেয়েই উঠে যায় শফি। প্যাকেটে ভরে নেয় সোয়েটার। একটা চাদর গায়ে বেরিয়ে পড়ে। বহ্নিকে খোঁজার আগে মসজিদে নামাজ পড়তে ঢোকে শফি। রাতের নামাজ। শুরু করার আগে কলের কাছে হাত ধুতে যেতেই চমকে ওঠে। বেড়ালছানার মত করে সন্তান আগলে বসে রয়েছে বহ্নি। কোলের শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে। বহ্নিও আধবোজা চোখে ঝিমোচ্ছে। শফির চাদরের তলায় মারণাস্ত্র। বল্লভ ঠাকুরের চ্যালা দিয়ে গেছে বন্দুকটা। দুটোকে সাবাড় করে এই শীতের রাতে গ্রামের জঙ্গলে ফেলে দিলে কেউ টের পাবে না। বদলে বল্লভ ঠাকুরের আরো বিশ্বস্ত লোক হয়ে ওঠা যাবে। এতে যা টাকা শফিকুল পাবে ,মায়ের চিকিৎসাটা স্বচ্ছন্দে চলে যাবে। শফির হাতদুটো এই শীতের রাতেও ঘামছে। এটা ওর প্রথম কাজ। তন্দ্রা কেটে যায় বহ্নির। শফিকে দেখে মেয়েকে আঁকড়ে ধরে। বহ্নির চোখদুটো অবিকল তার মত। বাদল। বহ্নির দাদা, শফিকুলের বন্ধু, যাকে বন্ধু বলে ভাবতে শফির ঘেন্না করে। ভালোবাসায় ভুলিয়ে শফির বোনকে নিয়ে গিয়ে বেচে দিয়েছিল। লজ্জায় আত্মহত্যা করে সে। বাদল পালায়। সন্তানের এমন পরিণতি সইতে না পেরে শফির বাবা চলে যায়। এরপর থেকে এই অঞ্চলের নেতা বল্লভ ঠাকুরের ডান হাত শফিকুল। আজ মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে ও। অন্তরে জমানো আগুন নেভানোর সুযোগ। বহ্নির চোখে ভয়। ঠান্ডায়, ভয়ে কাঁপছে। শিশুটাও কাঁদছে। শফির ইচ্ছে করছে সব চিৎকার থামিয়ে দিতে। "ওরা এই গ্রামে কোথাও নেই, আমি সব বাড়িতে খুঁজেছি।" বল্লভ ঠাকুরের চ্যালাকে কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দেয় শফি। "আমি বাইরে একটু দূরে বাইক নিয়ে দাঁড়াচ্ছি, এই কালো চাদর আর সোয়েটারটা ভালো করে জড়িয়ে বেরিয়ে এসে আমার বাইকে বসো। পাশের গ্রামে আমার বুয়ার বাড়ি। আপাতত ওখানেই থাকো, তারপর দেখছি।" প্লাস্টিকের প্যাকেটে থাকা সোয়েটার আর নিজের কালো চাদরটা বহ্নিকে দেয় শফি। ওরা বাইকে বসলে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায়। শীতের রাতের অন্ধকারে শফির বাইকটা যখন গ্রামের সীমানা পার করে, কুয়াশা তখন চারদিক ধোঁয়ার মতো ঢেকে ফেলেছে।
1 Response
আগামী দিনের শক্তিশালী লেখক payel chatterjee দারুণ লেখা