টাচ

বনগাঁ, উত্তর চব্বিশ পরগনা


হাঁটতে হাঁটতে তারা ব্রিজটার উপর এল। নীচে বয়ে যাওয়া টেমসের জল। তাকাতে এক ফেলে আসা দেশ ফুটে উঠল। যেন যে জলেই তাকাও, সেই মুখ! খানিক আনমনা হল শুভ। জীবনটায় আর মা নেই। বাবাও। শুধু গ্রামে রেখে আসা এক মিষ্টি ঠাকুমা। কে জানে কেমন আছে। মনে পড়তেই পাশে দাঁড়ানো আইরিশ বিদেশিনীকে জিজ্ঞেস করল, “দেখবে তাকে?”
নাম ডেইজি। এক স্ট্রিট ক‍্যাফেতে আলাপ। মোবাইলটায় সাগ্রহে ঝুঁকে বলল, 'তোমার? অভবিয়াসলি।'
শুভ ভিডিয়ো কল করল।
কলটি খাল, বিল, মাঠ, ঘাট পেরিয়ে ভারতবর্ষের এক অজ পাড়াগাঁয়ে গিয়ে পৌঁছল। সেখানে বেলা গড়িয়ে তখন লালচে বিকেল। চারদিকে ঝোপজঙ্গল, নিরিবিলি। একটা শুনশান চালাঘরের সামনে দুটি বৃদ্ধা মাদুর বিছিয়ে গল্প করছে। সাদা চুল, সাদা শাড়ি, ফোকলা দাঁত। সেই দাঁতে একগাল হেসে একজন বলে উঠল, “ওমা, শুভ তুই! পাশে ধবধবে মেয়েটি কে রে?”
ভেসে এল, “ঠাম্মি, ও ডেইজি।”
“কী সুন্দর রে! বল্ না তোকে বিয়ে করতে!”
 শুভ লজ্জা পেল। ডেইজিকে সেই কথা জানাল। ডেইজি সহাস‍্যে বলে উঠল, “ওকে ঠাম্মি, আই অ‍্যাগ্রি। বাট্ তোমাদের দুজনকেই তার আগে ব্লেস করতে হবে!”
পৃথিবীতে কত কিছু হয়, নড়ে। তারা কোত্থাও যায় না। পারে না। তারা শুধু বেলা গেলে, বিলের জল লালচে হলে, এই হদ্দপাড়াগাঁর ছায়া পড়া ছোট্ট উঠোনটায় মাদুর পেতে বসে। জীবনের দুটো কথা বলে। চারধারে ঝোপঝাড়, মাঠ। এই মাঠেই সে দৌড়ত। ঘুড়ি ওড়াত। কঞ্চির লাঠি দিয়ে সাইকেলের টায়ার চালাত। চার বছর হল চলে গেছে। শুভকে তাই ঠাম্মি বলল, “কিন্তু কী করে আমরা আশীর্বাদ করব রে!”
শুনে শুভ ভাবল, তাই তো! 
ডেইজি হঠাৎই তার সমাধান দিল। একটা ফ্লায়িং কিস্ দিয়ে বলে উঠল, “ওকে ঠাম্মি, তোমরা তাহলে এই মোবাইলেই আমাদের টাচ্ করো, ব্লেস করো!” বলে মোবাইল স্ক্রিনের ভিতর দুজনেই মাথাটা এগিয়ে দিল।
দুই বৃদ্ধা সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়াল। 
হাতদুটো লম্বা হল।
কিন্তু দু-চোখে জল। দু-গাল বেয়ে নামা অশ্রু। হাতদুটো যাচ্ছে আর যাচ্ছে...

বৈশাখী ২০২৪