"যাই বল বাপু, মুখুজ্যে গিন্নির রকমসকম মোটেও সুবিধের ঠেকছে না আমার," দত্ত গিন্নির কথায় ঘাটে ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেয়েবৌরা জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল। বিকেলের রোদ পড়ে গেলে পুকুরঘাটে গা ধোওয়ার জন্য ভিড় লেগে যায়। এরই মাঝে দত্ত গিন্নির কথাটায় সবাই নড়েচড়ে বসল। ব্যাপারটা জানার জন্য সকলে চেপে ধরল দত্তগিন্নিকে। হাতে পায়ে সাবান ঘষতে ঘষতে দত্তগিন্নি বললেন, "সবে কদিন আগে গোপালের বিয়ে হল, এখনও বৌটার গা থেকে বিয়ের গন্ধ যায়নি, আর এখন থেকেই কেমন খাটায় বৌটাকে, তোমরা লক্ষ করে দেখেছ? আর ওদিকে ভুবনের বৌটা দিব্যি পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। সেদিন তো আবার নতুন বৌকে কী একটা ফরমাশ করছিল, শুনলাম।" বিষয়টা সকলেই লক্ষ করেছে, কিন্তু মুখুজ্যে গিন্নির দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। "ঠিক কথা বলেছ দিদি। ভাগ্য করে এমন একটা শাশুড়ি পেয়েছে ভুবনের বৌ। গোপালের বৌটার জন্য কষ্ট হয় গো। আর ছোটবেলা থেকে গোপালকেও কী খাটান খাটিয়েছে! এবার বৌটাকেও পেয়েছে ওর সঙ্গে। যাক গে, বাদ দাও। ওর ছেলে বৌ, ও যা পারে করুকগে," প্রসঙ্গটা আর বাড়তে দিল না বোসগিন্নি। মুখুজ্যে গিন্নির কানে সব কথাই আসে, তিনি বিশেষ কর্ণপাত করেন না। গাঁয়েগঞ্জে অমন দুচারটে কথা সকলেই বলে, কালেদিনে আবার সব ভুলেও যায়। বেশ কিছু বছর পর ছেলেদের না জানিয়ে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিলেন মুখুজ্যে গিন্নি। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে লাঠালাঠি হওয়ার আগেই জমিজমা সহ বসতবাড়ি, সবকিছু ভুবন আর গোপালের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিলেন। ভুবনের বৌ বেশ কয়েক দিন ধরেই আলাদা হওয়ার ছুতো খুঁজছিল, ওর বর তো আর চাষাভুষো নয়। পড়াশোনা জানা লোক, হিসেবের খাতা লেখে। এখন আলাদা হতে পেরে সে আহ্লাদে আটখানা। সমস্যা দেখা দিল আলাদা হওয়ার পরেই, অতখানি জমি পেয়ে অকুল পাথারে পড়ল ভুবন। ও গাঁয়ে একটা মুদির দোকানে খাতা লেখে। চাষবাসের ধারেকাছে যায়নি কখনও, মা যেতে দেননি কোনও দিন। ভাই চাষবাস নিয়ে থাকত বলে 'চাষা' বলে কত অপমানটাই না করেছে ওকে! আর ভুবনের বৌ? সে পড়েছে আরো বিপাকে। বিয়ের পর থেকে কোনও কাজ করতে হয়নি ওকে, ছোট জাকেও বসে বসে হুকুম করত। এখন কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভুবনের রোজগারে এখন কোনও কাজের মেয়েও রাখা যাবে না। গোপালের বৌ কিন্তু দিব্যি গুছিয়ে সংসার করছে, গোপাল নিজের জমিতে ফসল ফলিয়ে ভালো রোজগার করছে। দু-তরফের সংসারের অবস্থা দেখে মুখুজ্যে গিন্নি তৃপ্ত। ভুবন যে মুখুজ্যে গিন্নির সৎ ছেলে।