বন্দি মুক্তি

চুঁচুড়া, হুগলি


ভাষা আন্দোলনের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে বর্তমান সরকার ছোটোখাটো রাজনৈতিক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তি দেবে বলে ঘোষণা করলেন। 
সেইমতো ভাষা আন্দোলন দিবসে জেলার সংশোধনাগারে একটি অনুষ্ঠান আহ্বান করা হল। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের বরণ, মাল্যদান, ও বক্তৃতার পর এক এক করে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের নাম ধরে মঞ্চে ডাকা হচ্ছিল। 
ডাক এল বন্দি ফয়জলের। ফয়জল মঞ্চে এলে কারামন্ত্রী ফয়জলের হাতে বন্দিমুক্তি পত্র ধরিয়ে দিলেন। হাত ঝাঁকিয়ে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানালেন।
মাইকে সঞ্চালক ততক্ষণে ফয়জলের দশ বছরের বন্দি জীবনের কর্মধারা পাঠ করছিল, "ফয়জল যখন সংশোধনাগারে এসেছিল তখন সে ভালো করে নিজের মাতৃভাষা বাংলাও লিখতে পড়তে পারত না। আজ ফয়জল বন্দি জীবনে পড়াশুনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে জেলের স্কুলের মাস্টারমশাই।" সঞ্চালকের বলা শেষ হলে জেলার সহ উপস্থিত মন্ত্রীরা হাততালি দিলেন। কিন্তু ফয়জল নিরুত্তাপ রইল। 
সঞ্চালক যখন ফয়জলকে কিছু বলতে বলল, তখন মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে ফয়জল কেঁদে চলল। মঞ্চে উপবিষ্ট ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা ফয়জলের কাছে এসে পিঠে হাত রাখল। কিছু সময় পরে ফয়জল নিজেকে সামলে মাইকে বলল, "আমার জেল হবার পর আমার মা-বাবা অপমানে আত্মহত্যা করে। তখন যদি তাদের কথা শুনে সক্রিয় রাজনীতি না করে পড়াশুনাটা করতাম।"
ভাষা আন্দোলনের যোদ্ধাটি কানে কানে বললেন, "প্রত্যেক ভালো কাজের পিছনে একটা কারণ থাকে। অপরাধ করে জেলে আসাটা তোমার জীবনের মোড়। তুমি সেই মোড়টাকে কাজে লাগিয়েছো।"
সেই মুহূর্তে অতিথির আসনে একজন মন্ত্রী এসে বসলে ফয়জলের চোখের জল নিমেষে রাগে পরিণত হল। সে ভেজা চোখে অতিথির আসনে উপিবিষ্ট সেই মন্ত্রীর দিকে ঘৃণার আর রাগের দৃষ্টিতে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। অনেকেই খেয়াল না করলেও সেই অতিথি কিন্তু বুঝতে পারল, ফয়জল ছাড়া পেয়েই প্রতিশোধ নেবার জন্য আবার অপরাধ করবে। 
রাগে গসগস করতে করতে ফয়জল যখন মঞ্চ থেকে নামছিল, সিঁড়িতে হোঁচট খেল, সামনে বসা সেই অতিথি আর জেলে যিনি ফয়জলদের পড়াতেন দু'জনই অতিথির আসন থেকে হাত বাড়িয়ে দিল ফয়জলের দিকে। ফয়জল কারও  হাত না ধরেই নিজেকে সামলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল।

বৈশাখী ২০২৪