সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিন্নমূল মানুষ এসে গড়ে তুলেছেন ‘হঠাৎ কলোনি।’ সেই সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মনে কোনো প্রশ্ন, অভিযোগ ছিল না। কেবল সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর স্বপ্নহীন শান্তির ঘুম ছিল। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কুঁড়েঘর তুলেছিলেন সব ধর্ম - সব সমাজের লোকজন। কলোনির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরবী নদী। নিস্তেজ সে নদীর জলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন কেউ কেউ। চাষের জলও মেলে ওখান থেকেই। জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে নদীটা। একদিন নদীর পাড়ের উঁচু টিলায়, ভোরবেলায় একটা ঝকঝকে লাল রঙিন জরি বসানো কাপড়ের লম্বা টুকরো বিছিয়ে থাকতে দেখে ওসমান আলির মগজে বিদ্যুৎ খেলে গেল। পাড়ায় ছুটে গিয়ে সে জাতভাইদের জানাল, "ভাই সকল! পির সাহেবের কবর জেগে উঠেছে নদীর ধারে। আসমানের বাণী শোনা মাত্র ,আমি সেখানে চাদর চড়িয়ে এসেছি। এখন চলো সবাই মিলে দোয়া করি। আর ঈদ আসার আগেই ওখানে নতুন দরগা নির্মাণ করি।" ঝড়ের গতিতে খবরটা ছড়িয়ে পড়লে, বিরোধী দলনেতা সুব্রত আগুনে শুধু মাত্র ঘি-ই ঢালল না তার ডান হাত রাজু কে আগুন ছড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি কাজে লাগিয়ে দিল। উদ্দেশ্য, ভোটে জেতার জন্য ওর প্রয়োজন একটা গণ্ডগোল। সেখান থেকেই বারুদের মতো ভটচার্যির এর কানে ব্যাপারটা উঠলে, মুহূর্তে তার সমাজের লোকজন সংক্রামিত হয়ে দল বেঁধে ছুটে গেল নদীর ধারে। সেখানে ওসমানদের জমায়েত দেখে ভটচার্যি নিদান দিল, "খবরদার! কেউ ছোঁবে না ওই কাপড়ের টুকরো! আমি স্বপ্নাদেশ পেয়েছি, ওই পবিত্র বস্ত্র স্বয়ং মা সন্তোষীর! মা নতুন মন্দির গড়াবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভাই সকল! এক্ষুনি তোমরা ওই জায়গার দখল নাও!" পরক্ষণে, দুই পক্ষই অস্ত্র হাতে, নিজের নিজের মালিকের জয়ধ্বনি আউড়ে মারমুখী হয়ে উঠল। আচমকা টিলার বিপরীত দিকের ঝোপের আড়াল থেকে ভেসে আসে এক করুণ আর্তনাদ। অবাক হয়ে,সকলে অস্ত্র হাতে সেই শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে গিয়ে দেখে, সেখানে বিবস্ত্র এক মৃত প্রায় যুবতী খাবি খাচ্ছে। এক নজরেই বোঝা যাচ্ছে, কে বা কারা তাকে ধর্ষণ করে ফেলে দিয়ে গেছে গত রাতে। মেয়েটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে, শেষ বারের মতো বলে ওঠে, “ওই লাল কাপড়, আমার!" এরপর ওসমান আর ভটচার্যি ভিড়ে কখন উধাও হল, কেউ টের পায় না। শুধু আপনা হতেই উত্তেজিত জনতার হাত থেকে খসে পড়ে অস্ত্র!