ঈশ্বরী

বারাসাত, উত্তর ২৪ পরগনা


টেকটনিক প্লেট ঘন ঘন সরছে, সংঘর্ষে হেরে যাচ্ছে শান্ত মাটি, শক্ত হাতে ঠেলে দিচ্ছে মাটিকে কৃষ্ণ গাড্ডায়। ওসানিক প্লেট দুহাতে ওলটপালট করে দিতে চায় জলকে - জল নিম্নগামী সে আধার চায়, কোল চায়, উপচে পড়লেও দুদিকে পলি দিয়ে মাখিয়ে দেয় কোমল ভালোবাসা। পৃথিবী বোঝে না তার মাটি জলের দু:খ সে দুনিয়া জুড়ে হাঙ্গামা জুড়ে দেয় চাই চাই চাই করে, দিল হ্যায় তো মানতা নহি! 
কী চাই এত? মাটি জল বিভ্রান্ত হয় এত অপরূপ প্রকৃতি বৃক্ষসারি জলের অমল স্পর্শ উপরে এমন অনন্তরঙা ঐশ্বরিক আকাশ, সব ছিন্ন ভিন্নকরে দেখতে হবেই? আকাশ ফুটো করে উল্কা হয়ে ব্রহ্মাণ্ড আবিষ্কার করতে হবে, মিসাইল উড়িয়ে শক্তি দেখাতে হবে! জলের নিচের গভীরে গিয়ে উপড়িয়ে দিতে হবে জলের প্রাণীর শান্তির জীবন? এত চাই? এত মেধা। এত শক্তি, এত কর্ষণের মাঝে শান্তি দূরে দাঁড়িয়ে থাকে, সে ভয় পায় হাত ধরতে, ভালোবাসা ভয় পায় পাশে বসতে, বিশ্বাস আর কোনো সাঁকো তৈরিকরতে পারে না কোনো সম্পর্কের - যন্ত্রজীবন টুক করে গিলে নেয় জীবনকে! পৃথিবী বুঝতে পারে না তার মধ্যে বড় হতে থাকা প্রতিটি  কোষ এখন রোবটের মত প্রাণহীন - রোবটও হয়ত বোঝে কিন্তু মানুষের যন্ত্রজীবন বুঝতে পারে না। পৃথিবী লোভীর মত জয়ী হতে গিয়ে ক্রমশ ডুবছে অতলে - -চাঁদ থেকে মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি না জানি আরো কত কী! এই বিপুল গ্যালাক্সির শেষ কে জানে? কিন্তু পৃথিবীর নিজের জায়গা কোথায় নিজের মাটিতে? এই বিশ্ব চরাচরে এত আনন্দধ্বনি, এত প্রাণ, এত হিল্লোল যেখানে ওঠে সেই ভুবনেও এত তিক্ততা! চেতনাহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে লিপ্ত! অন্ন নেই পেটে, ভূমিহীন, কর্মহীন অথচ প্রযুক্তির জয় জয়কার! যে প্রযুক্তিতে মানুষ এত অমানুষ নির্মম হয়ে ওঠে চরিত্র বদলায় গিরগিটির মত, এমন উন্নতিতে কিসের লাভ? কার লাভ? নাকি প্রযুক্তিকে বিভ্রান্তময় জগতে নিয়ে চলেছে মানুষের মুখোশধারী কোনো জীব!    
সুচেতনা এসে বসেন হৃদয়ের একধারে। ফিসফিসিয়ে বলেন, “পৃথিবী পালন করেন। তিনি আশ্রয়দাত্রী, ঈশ্বরী হতে ব্যর্থ?” পৃথিবী মুখ লুকোয়। এত স্থূল ভোগ সর্বস্ব হৃদয় কি বদলায়? বদলাতে পারে? সুচেতনা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করেন তার কপোল - পৃথিবী দেখে যীশু, বুদ্ধ, মহাবীর, কনফুসিয়াস মহানবীর মিছিল চলেছে এগিয়ে - মিছিল এগোচ্ছে কিন্তু কেউ ঢুকতে পারছেন না আর। পৃথিবী ডুকরিয়ে কেঁদে উঠল, দুহাত বাড়িয়ে ছুটে গেলে স্যাটেলাইটের নীল আলো এসে শুষে নিল সম্পূর্ণ পৃথিবীকে - গভীর রাত্রে পৃথিবীর খোলস পড়ে গেল ঈশ্বরের পায়ের কাছে - ঝরে পড়ছে ঈর্ষা, ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ, লালসা...সাজিতে পড়ছে আর ফুল হয়ে সেজে উঠছে ঈশ্বরের বাগানে! ভোরবেলায় পৃথিবী জেগে উঠছে, হর্ষের শঙখধ্বনিতে মুখরিত বিশ্বজগৎ!
কোনো এক কবি কলম ডুবিয়ে লিখে চলেছেন, "সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে এই পথেই ক্রমমুক্তি সম্ভব… এ বাতাস কী পরম সূর্যকরোজ্জ্বল!"

বৈশাখী ২০২৪