কিছুটা এলোমেলো সময়

ফোন্ডা, গোয়া


এক এক সময় ইচ্ছে করে দু হাত দিয়ে নিজেরই গলা টিপে ধরি৷ তারপর আয়নার সামনে শরীরটা টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দেখি কতখানি চোখ ঠিকরে এল কিংবা জিভটা বাইরে বেরিয়ে এলে মহাকালীর মতো দেখাচ্ছে কিনা৷ আবার দমবন্ধ হয়ে এলে কতটা শাদা হয়ে যায়। তারপর যদি মৃত্যু এসে পা জড়িয়ে ধরে হো হো করে হেসে উঠব। বলব, “ধোঁকা দিলাম!” 

ঘন অন্ধকার বহুবার টেনে নিয়ে গেছে প্রেতের দেশে৷ ক্ষতচিহ্নে ভরা যোনিপথে কিভাবে মলম লাগাতে হয় তখনও শিখিনি। শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে বুঝেছিলাম গঙ্গায় লোকে স্নান করার নামে পাপ ধোয়৷ গঙ্গা অপবিত্র নয়৷ কোনদিন নিজে বলেছে সে কথা? কিংবা প্রতিবাদ চিঠিতে লিখেছে, "তোমরা এতো নোংরা ঢেলো না আমার গায়ে ঘা হয়।" গঙ্গা আর বলবে কী? এত ভিড়ে তার এমনিতেই কন্ঠরোধ।  

মানুষ কখনও নদী হয় না৷ শুধু ভাবে। আর মনে মনে নিজেকে জুড়ে দেয় কোন স্বচ্ছ নদীর সঙ্গে৷ আমি কোনওদিন জুড়তে পারিনি৷ স্বচ্ছ তো অনেক পরের কথা৷ কীভাবেই বা জুড়ব? নদী হয়ে বইতে গেলে সাগরে মিশতে হবে৷ আমার সে ক্ষমতা কোথায়? এত পোড়া দাগ, সেই কবে থেকে ঘাড়ের ওপর কাঠবেড়ালি এসে বসে থাকে। ল্যাজ দিয়ে ঢেকে দেয় পৃথিবীর অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা। তাকে সরিয়ে দিলে যাই কোথায়! 

যাবার জায়গা নেই। নেই বলেই পড়ে থাকি নিজের মতো। আজকাল খুব ইলেক্ট্রিক চুল্লি দেখতে ইচ্ছে করে৷ ভেতরে গিয়ে৷ কীভাবে একটা মানুষ চোখ বন্ধ অবস্থায় পুড়ে যায়। তার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস,  প্রয়োজনের হাসিমুখটা - নির্বিকার৷ ঠিক বড় উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠা। ঠাকুমা মারা যাবার সময় আম কাঠের স্তূপে তুলে দেওয়া হয়েছিল৷ দূর থেকে দেখছিলাম তাঁর কপালে লাল সূর্যটা আস্তে আস্তে করে মুছে গেল। তারপর থেকে আমিও লাল টিপ পরি৷ আর মাঝে মধ্যে চওড়া করে আলতা৷ 

এই সব লিখতে লিখতে চোখ বুজে আসছে৷ বাইরে আজ বৃষ্টি নেই৷ রোদও নেই৷ একটা চাদর চাপা দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছি ভিড় বাসে মেয়েদের গোপনাঙ্গ ছুঁয়ে দেবার কৌশল। না আমি কারোর ইজ্জত ভ্রষ্ট করতে চাই না৷ তবে আত্মরক্ষার্থে প্রয়োজনে যদি কোনদিন লাগে৷ এখনও আমার চোখ বন্ধ। হ্যালুশিনেসন উৎসব চলছে৷ সামনে এসেছেন প্রসাধনী হাতে রাজার দূত। তার ঘোড়ার নালে হেমকুন্ডের বিশুদ্ধ আলো। আমার ছায়াজং ধরা মুখে বোধহয় ফুল ফোটাতে চায়। হলুদ হলুদ। উফফফ না! কী তীব্র এই রঙ। চোখ ঝলসে যায়। এ ফুল না, না আমার ক্ষতস্থানের উপশম৷  

চোখ খুলি, বিছানায় পড়ে আছে আমার অবশ পা৷ কোন দূত নেই৷ না আছে আলো। চাদরে মস্ত পুকুর ঘাট৷ হাঁস চরছে৷ সিঁড়ি ভেঙে আমিও নেমে যাই হাঁসের পেছনে। শামুক ঝিনুকের পা-প্রেম এড়াতে পারি না৷ রক্ত আলতার মেশামিশি গন্ধে মাছ পালিয়ে যায়৷ আমি আঁচল ছেড়ে ডুব দিই। এখন সব জলজ অন্ধকার।

বৈশাখী ২০২৪