লোভী

বেহালা, কলকাতা ৩৪


অঝোর বৃষ্টিতে ফুটপাথ ধরে নশ্বর মেয়েটা হাঁটছিল। আচমকাই একজন শ্যামবর্ণ ছিপছিপে চেহারার গাছ পথ আটকে দাঁড়ায়। দাঁড়ানোর এমন ভঙ্গি যেন তার‌ই সাহচর্যে মেয়েটার দিনের পর দিন কেটেছে। গাছটার মগডালে বাঁধা কিছু বিস্মৃত, নিস্তব্ধ সন্ধ্যা, ডালপালায় নিশুতি রাত, কাঠের বাকলে খোদাই করা চনমনে দিন, পাতার রক্তজালকে বিব্রত দুপুর... সব‌ই পুরোনো শাড়ির ঘ্রাণের মতো মেয়েটার বড় চেনা।

আকাশে সেই সময় ফাল্গুনী নক্ষত্র, ঈশ্বরের দেশ থেকে পাঠানো আলোর মতোই উজ্জ্বল। মেয়েটার খুব ইচ্ছে হল গাছটাকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যাবে।‌ কিন্তু এত বড় গাছ রাখবে কোথায়? বুকের হুক খুলে পাঁজরে বসিয়ে নেবে এমন উর্বর মাটি আছে সেখানে? আছে কোনো ঝরনা যার থুতনি টেনে এনে বলবে, "গাছটাকে জল দাও!" অথচ গাছটা মেয়েটার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটছে, তার নির্বিকার লাবণ্য মেয়েটাকে জড়িয়ে, পেঁচিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে।

এক্ষুনি যেন বলে উঠবে "দেহিপদপল্লবমুদরম" আর ঠিক তৎক্ষণাৎ মেয়েটার সমস্ত শরীর জুড়ে অবলীলায় ফুটবে হাজার হাজার সোনার বলের মতো কদমফুল।

মেয়েটা থমকে দাঁড়ায়, দিগন্তব্যাপী জনহীন সন্ধ্যায় হঠাৎ নশ্বর মেয়েটার বড্ড অমৃতে লোভ হয়!

1 Response

  1. Subir says:

    দারুন.. দারুন ভালো পড়লাম।। শব্দের অনায়াস

    বিন‍্যাস গল্পের বিষয়বস্তু কে মূর্ত করে তুলেছে পাঠকের কাছে।।

বৈশাখী ২০২৪