তোমায় পড়ি রবিঠাকুর। সেই কোন দুলে ওঠা ভোরবেলা থেকে। সহজপাঠের আলো এসে লাগে চোখে। ফুল ফোটে। পাখি গায় গান। সে গানের স্বরলিপি টুকে রাখি স্কুলের খাতায়। ছলাৎ ছল লাগে অঞ্জনা নদীর ঢেউ। ঢেউয়ের ভেতর চোখের জল। জলের ভেতর জীবন। জীবনের ভেতর পালতোলা নৌকা মহাজনি। হাল, দাঁড়ের ছপছপ শব্দ। বলে যায় কতদিনের সেই চন্দনী গাঁয়ের কথা। মনে হয়, এ পৃথিবীর নয় বুঝি। পৃথিবীর বাইরে দেশ-গাঁ যেন কোনো। আমরা ওরা ভাগাভাগি নেই সেখানে কোনো। কোনো দল। পতাকার নিত্যনতুন রং। মন্দির-মসজিদ চাপান উতোর। লোভ চিটচিটে পঞ্চায়েত কমিটির ঘর। গঞ্জের বাঁয়ে পোড়ো মন্দিরখানায় সন্ধ্যা নামলে চোলাইয়ের আসর নয়, গানের বাসর বসায় অন্ধ কুঞ্জ আজও। তার একতারা জোছনা হয়ে ওঠে তখন। সুরে সুরে রাধাকৃষ্ণ নাম। সে সুরে ভিজে যায় বনস্পতিরা কেমন। আবেশে দোলায় মাথা। ছোট ছোট ঘরবাড়ি পেরিয়ে সুর উড়ে যায় নিশাচর পাখিটির মতো দূরে, বহুদূরে। লেজকাটা ভক্ত কুকুরটির মুখে প্রসাদী ফলমূল ধরে কুঞ্জ। সে জানে, ভালোবাসা বৈষ্ণব করে তোলে সবাইকে অন্তরে। কুঞ্জবিহারীর গানের আশ্চর্য সরলতাকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি কোনোদিন। শুধু তার পাশে বসেছি জোড়হাতে। যদি তার দয়া হয় এতটুকু। শরতের সোনারোদ, আগমনি সুর, কাশের আলো যদি সে ঢেলে দেয় আমার কবিতার খাতায় দু'হাত ভরে। জানি, মৃত অক্ষর সব প্রাণ ফিরে পাবে আবার। সমস্ত ফুল। নদী। ধানক্ষেত। ব্যঞ্জনা। অঞ্জলি পেতে আছি, তাই নিরন্তর অঞ্জলি পেতে আছি...