লুকানো সম্পদ

দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান

-লোকজন খুব বেশি গুজবে কান দেয়। একটা কিছু পেলেই অমনি তাকে তাল বানাতে আরম্ভ করে। পরখ করে কিছু দেখবারও প্রয়োজন মনে করে না। তুমি কী বল?
-আমি আর কী বলব।  প্রথম থেকেই বলে আসছি, ওসব বাজে কথা। বাড়িটাতে থাকি, ভালো লাগা বা না লাগারও একটা ব্যাপার আছে।  
-না গো প্রথমে যেরকমভাবে সবাই এটা ওটা বলে ঘাবড়ে দিয়েছিল না, মন কু গেয়ে উঠেছিল। না হলে তো আমি এই সব কিছুই মানিনা।  পরমার শেষের কথাটার উত্তরে সুব্রত ঘাড় নেড়ে সম্মতি না জানিয়ে পারল না। টিপিক্যাল হিন্দু ঘরের মেয়েদের মত কোন দিনই মাথায় কাপড় দিয়ে শিবরাত্রি, মঙ্গলচণ্ডী বা অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি কোনটাই পরমা করে না।  বিয়ের আগে মা বলে বলে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কথায় কথায় বলত, ‘দাঁড়া বিয়ের পর শাশুড়ির কথা শুনে তবে তোর ঠাকুর ভক্তি হবে।’ কিন্তু সুব্রতকে বিয়ের পর হল তার ঠিক উল্টোটা।  বাবার বাড়িতে যদিও বা মা খিঁচ খিঁচ করত, এখানে তো এক্কেবারে কেউ নেই। তাছাড়া পুজো করলেই বা কখন করবে। সকাল ন’টার সময় দুজন মিলে চাকরিতে বেরিয়ে যায়, ফিরতে সেই রাত। তারপর কোন রকমে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেই ঘুম।  রুটিনের বাইরে আনন্দ বলতে শনি রবিবার বাইরে ছোটখাটো ঘুরতে যাওয়া, না হয় পড়ে পড়ে ঘুমানো। একে তো ভাড়া বাড়ি, তার উপর পাড়ার কারোর সাথে সেরকম সখ্যতা ছিলও না। সামনা সামনি দেখা হলে ঐ একটু হাসি।  তাও বিয়ের কয়েকমাস পরেই পরমা বলতে আরম্ভ করে, “তুমি একটু জোর দিয়ে চেষ্টা কর অন্য জায়গায় ভাড়া নেব।”  
তবে কথাগুলো পরমা যতটা সহজে বলে সুব্রত ঠিক ততটাই নিরাশ করে। 
 “এই শহরে ভাড়া পাওয়া কি এত সোজা? তাছাড়া আমরা থাকি কতক্ষণ। শনি রবিবারটাও তো কোথাও না কোথাও বেরিয়ে যাচ্ছি।”
পরমা এর পর আর কোন কথা বলেনি। বেশ ভালোভাবেই সব কিছু চলছিল। একটা অদ্ভুত ঘটনা সব কিছু অনেকখানি এলোমেলো করে দিল।  পরমার তিনমাসের মাথায় মিস-ক্যারেজ হল।  কয়েকটা দিন যমে মানুষে টানাটানিও চলল।  সে যাত্রায় প্রাণ বাঁচলেও ডাক্তারের পরামর্শে কাজ ছাড়তে হল।  দু’পক্ষের কারোরই মা বেঁচে নেই। দাদা বৌদি কত আর করবে? সুব্রত অফিস বেরিয়ে গেলেই সারাটা দিন এক্কেবারে একা থাকতে থাকতে পরমার দম বন্ধ হয়ে আসত।  সুব্রত অনেকগুলো ছুটি নিয়েছিল।  কিন্তু প্রাইভেট কম্পানি আর কত ছুটি দেবে? যদিও সুব্রত অফিস থেকে ফিরলেই পরমা প্রায় প্রতিদিন বলে, “তুমি তাড়াতাড়ি এই ঘরটা চেঞ্জ কর। আমি হাঁপিয়ে উঠছি। এখানে কথা বলবার মত কেউ নেই।”
এবার সুব্রত সিরিয়াসলি ভাড়া ঘর খুঁজতে আরম্ভ করে। আশেপাশের অনেককে বলে, দালালও ধরে।  কিন্তু পছন্দের ঘর আর পাওয়া যায় না।  ঘর ভালো তো ভাড়া বেশি, না হলে পজিসন একেবারে খুব খারাপ।  প্রতিদিন মুখ শুকনো করে পরমার মুখের সামনে দাঁড়াতেও খারাপ লাগে।  মাস দেড় পরে সুব্রতর অফিসের সেনদা বলে, “সুব্রত ভাই তুমি নাকি বাড়ি ভাড়া খুঁজছ?একটা রেডিমেড বাড়ি আছে, কিনবে?খুব কমে পাবে।” 
সুব্রত প্রথমে নিমরাজি ছিল।  পরমার শরীরের পিছনে অনেকগুলো টাকা খরচ হল।  
-আরে ভাই, এই সুযোগ আর পাবে না।  রেডিমেড বাড়ি, বাগান, শান্ত পরিবেশ, মাত্র পাঁচ লাখে পেয়ে যাবে।  
-পাঁচ লাখে!সুব্রত ভ্রু কুঁচকায়।  মগের মুলুক নাকি?কোন ডিসপুট কেস? দলিল হবে?
-সব পাবে।  
-তবে? 

সেনদা একটু আমতা আমতা করে বলে, “এমনি কিছু নয়,তবে সবাই বলে কেউ নাকি থাকতে পারেনা।  আমি কিন্তু তোমাকে আগে থেকে সব জানিয়েই দিচ্ছি।  পরে আমায় কিছু বোলো না।”
সুব্রত কিছু সময় চুপ থেকে উত্তর দেয়, “সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু প্রশ্ন হল টাকা কোথায় পাবো?পাঁচ লাখ টাও তো কম নয়।” 
বাড়ি ফিরে পরমাকে কথাগুলো বলতেই পরমা ভূতের ব্যাপারটা এক্কেবারে উড়িয়ে দিল।  কিন্তু টাকার কথাতে একটু চিন্তা হল।  কিছু গয়না বন্ধক রেখে আর অফিস থেকে কিছু টাকা লোন করে বাড়িটা কিনে নিল। কেনার সময় আরো পঞ্চাশ হাজার কমও দিল।  কেনার আগে অবশ্য দুজন বেশ কয়েকবার এসে বাড়িটা দেখে গেছে।  আশেপাশের সবার সাথে কথাও বলেছে। শহরের কাছে হলেও ঠিকানাটা কিন্তু পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে।  আশেপাশের সবাই চাকুরিজীবি।  জমির দামের ছ্যাঁকার ভয়ে দিব্যি জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকছে।  একটা সমস্যার কথা অনেকেই বললেন,‘বৃষ্টি হলে নাকি জল জমে যায়।’
সে তো শহরের অনেক জায়গাতেই জমে।  বাড়ি দেখতে এসে পাড়াটা পরমারও খুব ভালো লাগে, তবে বাড়িটার কথা শুনে অনেকেই বলে উঠলেন,‘বাব্বা ওই বাড়িটা!ওটাতো সেই বোসদা করেছিল।  ওরাও ছেড়ে চলে গেল।  তারপর ওখানে তো কেউ থাকতে পারেনা।  কয়েকঘর ভাড়াটে এসেছিলেন কিন্তু সবারই এক অবস্থা।  একটু পুজো করে ঢুকবেন তাহলে আর কিছু হবে না।  ’
পরমা পুজোর কথা শুনে সেখানে কিছু না বললেও বাড়ি এসে বলে, “একটা ব্যাপার ভালো হবে আমি সারাদিন একা থাকব ভূতের সাথে গল্প হবে, আর ভূতের বাড়ি বলে সেরকম কেউ হুট হাট করে চলে আসবে না।”
কিছু ফর্মালিটি শেষ করে বাড়িটা কেনা হল। আশে পাশের লোকজনদের গৃহপ্রবেশের দিনে প্রসাদও দেওয়া হল।  পরমার বৌদি কয়েকটা দিন থাকলেন। তবে পরের দিন থেকেই পাড়ার দোকানে কোন জিনিস কিনতে গেলে দোকানদার থেকে প্রতিবেশী সবাই একটাই প্রশ্ন করে,‘দাদা, কোন কিছু হয়নি তো?’
-কি হবে? দিব্যি তো আছি।  কিছু সমস্যাতো ফেস করিনি।” 
সুব্রত প্রায় পরমার সাথে আলোচনা করে।  এই রকম একটা বাড়ি এত কম দামে পেয়ে যাওয়ার জন্য ভাগ্যের সাথে অফিসের সেনদাকেও ধন্যবাদ জানায়।  সেনদাকে একদিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর কথাও বলে।  
নতুন বাড়ির আনন্দে পরমা আবার কনসিভ করে।  দুজনেই আনন্দিত হবার পাশে নতুন বাড়িটাকে পয়মন্ত ভাবে।  ডাক্তারকে দেখানোর পর উনি প্রিভিয়াস হিস্ট্রির কথা ভেবে বেড রেস্ট প্রেসস্ক্রাইব করেন।  পরমা অফিস ছাড়লেও একটা ব্যাপারে বেশ চিন্তিত হয়ে ওঠে, বাড়িটাতে একা থাকবে কি ভাবে।  
কয়েকটা দিন সুব্রত ছুটি নেয়।  কিন্তু প্রাইভেট কম্পানি তো আর বারো মাস ছুটি দেবে না। পরমা তার বৌদিকে আবার আসতে বলে।  কিন্তু বৌদি জানিয়ে দেয় কষ্ট হলেও এই মুহূর্তে সংসার ফেলে আসা সম্ভব নয়।  মাথার উপর আকাশটা কেমন যেন ঝনঝন করে ওঠে।  এই প্রথম পরমা সুব্রত দুজনেই এক অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।  পরমা তো একদিন সুব্রতর হাত ধরে প্রায় কেঁদেই ফেলে, “হ্যাঁ’গো আবার ওরকম হয়ে যাবে না তো?”
সুব্রত আশ্বাস দেয়, “না’গো ও’রকম হবে কেন তুমি চিন্তা কোরো না।  একটা সব সময়ের জন্য কাজের মেয়েকে পাওয়া যায় কিনা দেখছি।”
সেদিনই বাজারে এসে প্রায় জনে জনে সবাইকে সব সময় থাকবার জন্যে একটা কাজের লোক দেখে দিতে বলে।  কিন্তু এই পাড়ার এই এক সমস্যা কাজের লোক পাওয়া যায় না।  সুব্রত তাও চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখে  না।  দু’এক জন যাও বা পাওয়া যায় তারা আবার বাড়িটার কথা শুনেই পিছিয়ে যায়।  “বাব্বা!ঐ বাড়িতে কেউ যায় নাকি, ভূত আছে তো।”

বাধ্য হয়ে সুব্রতকে কাজের লোকের আশা ছেড়ে নিজের কাজ নিজে নিজেই করবার কথা ভাবতে হয়।  বেচারাকে ভোরে উঠে রান্না করে অফিস বের হতে হয়।  পরমার খাবার সব ঢাকা দিয়ে রেখে যায়।  পরমা শুধু উঠে স্নান করে ঢাকা সরিয়ে খাবার খায়।  গরমও করে না।  বাকি সময় বই পড়ে, গান শোনে, আর এক্কেবারে হাল্কা কিছু কাজ করে সময় কাটায়।  এমনকি সুব্রত অফিস বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে চাবিও দিয়ে যায়।  একটা চাবি পরমার কাছেও থাকলেও বেরোনোর সময় বলে যায়,‘দরজা খুলবে না, কেউ আসলে বলবে পরে আসতে।  ’
এমনি ভাবে কয়েকটা দিন কাটানোর পর একদিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে পরমার সবে চোখটা লেগেছে এমন সময় কলিং বেলটা বেজে ওঠে।  আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে দাঁড়াতেই দেখে একটা ষোল সতেরো বছরের মেয়ে দরজার ওদিকে দাঁড়িয়ে আছে।  পরমাকে দেখতে পেয়েই মিষ্টি হেসে বলে, ‘বৌদি তোমরা এই পাড়াতে নতুন এসেছ?আমি টুম্পা, এই কয়েকটা বাড়ি পরে থাকি।  আগে তোমাকে দেখেছি।  কয়েকদিন না দেখতে পেয়ে সোজা বাড়ি চলে এলাম।  আলাপও করা যাবে, কথা বলা যাবে।  বিরক্ত করলাম না তো?’ 
পরমা প্রথমে একটু অবাকই হয়ে যায়।  এখানে আসার পর থেকে দু’এক জন এক আধ দিন যাও বা এসেছিল পরমা বা সুব্রতর সাথে দু’একদিন কথা বার্তা বলেই চলে যায়।  তারপর থেকে আসা যাওয়াও কমে যায়।  সবারই সময় সমস্যা।  তাই প্রথম দিনেই মেয়েটিকে দেখে একটু অবাকই হয়।  জিজ্ঞেস করে,‘তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।  ’ 
-চিনতে পারবে কি করে আমি তো তোমার কাছে কোন দিন আসিনি।  আজই প্রথম ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম।  পরমা ভিতর থেকে অনেক কথা বলবার পরেই দরজা খোলে।  মেয়েটি সোজা ঘরের ভিতর এসে পরমার সাথে গল্প করতে আরম্ভ করে।  ঠিক বিকালের আগে চলে যায়।  
সুব্রতকে ফোনে খবরটা দিতে ও প্রথমে একটু চিন্তাই পড়ে যায়, তারপরে অবশ্য বলে ওঠে,‘যাক ভালোই হয়েছে।  তুমি দুপুর বেলাটাতে একজনের সাথে গল্প করতে পারলে।  প্রতিদিন এলে আমারও চিন্তা কিছুটা কমবে।  তবে খুব সাবধানে।  ’পরের দিন ঠিক দুপুর বেলা আবার ঐ মেয়েটি আসে।  পরমা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।  না হলে বাথরুমে গেলেও ফোন হাতে করেই যেতে হয়।  
দেখতে দেখতে মেয়েটি প্রায় একমাস ধরে প্রতিদিনই এসেছে।  অদ্ভুত ব্যাপার হল শনি রবিবার বা অন্য ছুটির দিনে মেয়েটি আসে না।  অন্যদিন সুব্রত ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করে,‘কি গো আজ তোমার বোন এসেছিল?’ পরমা হ্যাঁ বললেই সুব্রতর কথার মধ্যে একটা স্বস্তির ছাপ ফেলে।  তবে ছুটির দিন না আসাতে পরমাকে জিজ্ঞেস করে,‘তোমার বোনের সাথে দেখা হলে একটু আমার সাথে আলাপ করতে বলবে তো।  একটা বড় থ্যাঙ্ক ইউ দেব, শুধু মাত্র তোমাকে সময় দেওয়ার জন্য।  ’পরমা মেয়েটিকে বলেও,‘তোর দাদা তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে সময় করে একদিন আসিস তো।  ’ উত্তরে মেয়েটি শুধু হাসে, বলে,‘আসব আসব, আসলে শনি রবিবার দাদা থাকে তো তাই গরজ হয় না।  ’ 
পরমা তারপরেই সব ভুলে যায়।  এর মাঝে অবশ্য সুব্রত বাজারে বেশ কয়েকবার পরমার মুখ থেকে শোনা মেয়েটির বর্ণণা শুনে মেয়েটির পরিচয়ের খোঁজ করেছে।  সেরকম কেউ বলতে পারেনি, কেউ বলেছে,‘ও, কালো মতন?মনে হচ্ছে মণ্ডলদার মেয়ে।  ’তার মধ্যে একজন আবার একটু সাবধানে থাকতে বলে একটা গল্পো শোনায়।  
কয়েকদিন পরে একরাতে শুয়ে শুয়ে সুব্রতর সাথে কথার প্রসঙ্গে পরমা বলে ওঠে,‘জানো টুম্পা বলছিল এই বাড়িটার পিছন দিকে নাকি গুপ্তধন পোঁতা আছে।  সেই জন্যে সবাই ভূত ভূত বলে।  ’ 
সুব্রত প্রথমদিকে কথাগুলো উড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘ও সব বাজে কথা।  ’
-আরে তুমি বিশ্বাস কর,ও বলছিল, আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি।  

আমি কোথায় বাড়িটা সম্পর্কে কত সব কথা শুনেছি তার আর হিসাব নেই।  যাক তবু তুমি  গুপ্তধনের কথাটাও শুনলে।  ’
-তুমি কি শুনলে শুনি।  
-বাদ দাও।  একা থাক ভয় পাবে।  
-হ্যাঁ ভয় পাবে!ভয় পেয়ে আমি উল্টে যাচ্ছি কিনা।  তুমি আবার নতুন কিছু শুনলে?
-নতুন না পুরাতন জানিনা।  তবে সেই প্রথম দিন থেকেই শুনে আসছি।  শুনলাম কয়েকবছর আগে এই বাড়ি থেকে একটা মেয়ে নাকি আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন এই বোস না কারা যেন থাকত সম্ভবত বাড়ির কাজের লোক ছিল।  কেউ বলে এবাড়ির ভূতটা নাকি মেরে দেয়,তবে সত্যি মিথ্যা জানিনা।  এর পর থেকে ঐ বোসবাবুদের ফ্যামিলিও মিসিং হয়ে যায়।  
পরমা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,‘দুর!যতসব বাজে গাঁজাখুরি,গাল গপ্পো।  বাড়িটাতে কিছু থাকলে তো আমরা তো একটুও টের পেতাম।  আমি তো সারাদিন একাই থাকি।  ’ 
কিছু সময় পরমা বলে ওঠে, ‘শোন না সামনের রবিবার একবার দেখবে, সত্যি কিছু গুপ্তধন পাওয়া যায় কিনা?এমনিতে পিছনের দিকের বাগানে কিছু খোঁড়া খুঁড়ি করলে আশেপাশের কেউ দেখতে পাবে না।  কিছু পেলে লোনটা শোধ তো করা যাবে।  ’কয়েকদিন পর থেকে আবার টুম্পা আসা বন্ধ করে দেয়।  সুব্রত পরমাকে জিজ্ঞেস করে, বাজারে খোঁজ নেয়, কিন্তু কোন খবর পায় না।  
 আরো কয়েকটা দিন কাটে।  সুব্রতর আনিচ্ছা সত্ত্বেও এক রবিবারের দুপুরে খাওয়ার পর, সুব্রত খুঁড়তে আরম্ভ করে।  পরমা প্রথমে হাল্কা হাত লাগালেও পরে চেয়ারে বসে যায়।  কিছুটা খোঁড়ার পর একটা ধাতব কিছুর ওপর ঘাতের আওয়াজে পরমার সাথে সাথে সুব্রতরও খুব আনন্দ লাগে।  চমকে ওঠে।  পরমার দিকে তাকিয়ে বলে,‘সেকি গো সত্যি গুপ্ত ধন নাকি?’একটা আশার আলো দেখা যায়।  পরমারও চোখ-মুখ চক চক করে।  চিত্কার করে ওঠে,‘আর একটু খোঁড়ো।  ’
আস্তে আস্তে আরো কিছুটা খুঁড়লে একটা কালো বাক্স দেখতে পায়।  উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়।    বলে ওঠে,‘দেখলে তো আমার কথা বিশ্বাস করছিলে না।  ’
সুব্রত আরো তাড়াতাড়ি বাক্সের গায়ে লেগে থাকা ধুলো বালি ঝেড়ে বাক্সর দরজাটা একটু জোর দিয়ে খুলতেই চমকে ওঠে।  কোথায় সোনাদানা গুপ্তধন!বাক্সের ভিতর কয়েকবছর আগেকার একটা লাশ।  পরণে সালোয়ার, তখনও পুরোটা কঙ্কাল হয় নি।  তবে মুণ্ডুটা খুব ভয়ঙ্কর দেখতে লাগছে।  সুব্রত কোন রকমে আবার বাক্সটা বন্ধ করে দিয়েই পরমার দিকে তাকায়।  পরমা তখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছে।  চোখ দুটোও নিজের থেকে বন্ধ হয়ে আসে।  পা দুটো কাঁপতে থাকে দাঁড়াতে পারে না।  মাটিতেই বসে যায়।  এমন সময় কানের কাছে একটা মেয়ের গলার আওয়াজ পায়,‘বৌদি আরেকটু খোঁড়ো, আরেকটা বাক্স পাবে।’ 

বৈশাখী ২০২৪