কালপুরুষ

বোলপুর, বীরভূম

লিফটের দরজাটা খুলতেই সুমন দ্রুতপায়ে পার্কিংয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করতে করতেও সেই দেরি হয়ে গেল। সুমন একবার তার হাতঘড়িটা দেখে নেয়। সাড়ে আটটা বাজে। সে গাড়িতে উঠতে যাবে ওমনি তার পকেটে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠে।  আকাশ ফোন করেছে। কিন্তু এখন...! 
ফোনটা রিসিভ করে সুমন, "হ্যাঁ রে আমি আসছি...এইতো গাড়িতে উঠছি, ডোন্ট ওয়ারী! এখনো অনেক সময় আছে..."
ফোনের ওপাশ থেকে আকাশের গলা ভেসে আসে, "শোন না, একটু সমস্যা হয়ে গেছে। প্লিজ হেল্প কর ভাই..."
--- "হেল্প! কি হেল্প? কি হয়েছে?"
--- " আর বলিস না, ক্যাটারিঙের লোকেরা এই শেষমুহূর্তে এসে আমাকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে। ওরা পুরো টাকাটা এখন ক্যাসে চাইছে। আমি বারবার বলছি আমার কাছে অতো লিকুইড ক্যাস নেই আমি কার্ডে পেমেন্ট করে দিচ্ছি, কিন্তু ওরা কিছুতেই শুনছে না... ওদের ক্যাসই চায়, আর পার্টি শুরুর আগেই। আমি এখন গেস্টদের ছেড়ে কীভাবে বেরোবো বলতো? "
--- " হুঁ, কিন্তু আমি কি করবো?"
--- " বলছি তুই কিছুটা লিকুইড ক্যাস নিয়ে আয় না বন্ধু, রহিত কিছুটা দিয়েছে তুই হাজার চারেক নিয়ে এলেই হবে!"
---" আচ্ছা! তুই চিন্তা করিস না। আমি আনছি... এখন ফোনটা রাখ।"
--- "দেরি করিস না, তাড়াতাড়ি চলে আয়।"
সুমন গাড়িতে স্টার্ট দেয়। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, আবার দশতলার নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা খুলে আলমারি থেকে টাকা আনার চাইতে রাস্তার ধারের কোনো এটিএম থেকে টাকাটা তুলে নেওয়াই সুবিধাজনক।
সারাটা শহর যেন দুর্গাপুজোর মতোই আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে। চারপাশের সবাই সেলিব্রেশনের মুডে। জায়গায় জায়গায় পার্টি মজা হৈ-হুল্লোড়ে। সবাই খুশিতে মেতেছে। মাতবে নাইবা কেন? আর মাত্র দু-তিন ঘন্টার পর নতুন একটা বছর পড়বে। নিউ ইয়ার! শহরের এই আনন্দ মজা ছেড়ে আকাশ কোথায় কোন ভাগাড়ে ওর ফার্মহাউসে পার্টি রেখেছে। কেনো বাবা? পার্কস্ট্রিটের কোনো রেস্টুরেন্টে বা কোনো ক্লাবে পার্টি রাখলেই পারতো! কিন্তু না... তাহলে তো আর শো-অফ করা যাবে না! ও তো আসলে শো-অফ করতেই চায়... নতুন ফার্মহাউস কিনেছে সেটা লোকজনকে দেখানোর জন্যই তো এতো আয়োজন! এই পার্টি!
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে এদিক ওদিকে তাকায় সুমন। কি আশ্চর্য! একটা এটিএম-ও যে চোখে পড়ছে না, দু-একটা যদিবা নজরে আসছে সেগুলো আবার বন্ধ। এদিকে গাড়িটা শহরের রাস্তা ছাড়িয়ে বাইপাসের দিকে এগোচ্ছে। বাইপাসের রাস্তাটাও এবার একটু একটু করে ফাঁকা হতে শুরু করেছে। হঠাৎ সামনে একটা পেট্রোল পাম্প দেখে সুমন ভাবে এখানে আশেপাশে হয়তো কোথাও এটিএম থাকলেও থাকতে পারে। পেট্রোল পাম্পে গিয়ে গাড়িতে কিছুটা তেল ভরে নিয়ে পাম্পের ছেলেটিকে সে জিজ্ঞেস করে, "এখানে রাস্তায় কাছাকাছি কোনো এটিএম আছে? "
ছেলেটা ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ না কি যে বললো সুমন তার কিছুই বুঝতে পারেনা। আর একবার কি তবে জিজ্ঞেস করে দেখবে? না থাক! এটিএম থাকলে তো সে দেখতেই পাবে। সুমন আর কিছু জিজ্ঞেস না করে গাড়িটা ঘুরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।
হাইওয়ের ফাঁকা রাস্তা ধরে কিছুটা এগোবার পরেই রাস্তার ধারে একটা এটিএম দেখতে পায় সে। উফ! বাঁচা গেল। সুমনের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। এই এটিএমটা না দেখতে পেলে আকাশের সামনে গিয়ে সে কোন মুখে দাঁড়াতো? গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করায় সুমন। গাড়ি থেকে নামতেই শীতের কনকনে ঠান্ডা বাতাস যেন বিরোধী পক্ষের সৈন্যদলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর। সুমন তার লেদার জ্যাকেটের চেনটা গলা অব্দি টেনে নিয়ে হাত দুটো পকেটে ভরে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সামনের এটিএমের দিকে।
রাস্তার ধারে ছোট্টো একটা এটিএম। এটিএমের সামনে কাঁচের দরজার উপর উজ্জ্বল লাল আলোয় ব্যাঙ্কের নাম লেখা। তার নিচের সাদা টিউবটা দপ্ দপ্ করে একবার জ্বলছে একবার নিভছে। দরজার একপাশে একজন সিকিউরিটি গার্ড ম‍্যাঙ্কি টুপি আর সোয়েটারের ওপর চাদর জড়িয়ে একটা টুলে বসে আছে। লোকটা কি ঘুমে ঢুলছে? বুঝতে পারেনা সুমন। লোকটাকে পাশ কাটিয়ে সে এটিএমের ভেতরে ঢুকে যায়। জিন্সের পকেট থেকে পার্সটা বের করে কার্ডটা এটিএম মেশিনে রাখে সে। তারপর পাসওয়ার্ড টিপে টাকার অঙ্ক প্রেস করার কিছুক্ষণ পরেই মেশিন থেকে টাকার বদলে ট্রেনের টিকিটের মতো দেখতে একটা কাগজ বেড়িয়ে আসে। সুমন কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে তাতে এক অজানা ভাষায় কিছু একটা লেখা আছে। এরই সাথে সামনের এটিএম মেশিনের স্ক্রিনে গোটা গোটা বাংলায় ফুটে উঠলো-
"আপনার অন্তিম যাত্রা শুভ হোক।"
হোয়াট ননসেন্স! এইসবের মানে কি? মাথাটা গরম হয়ে যায় সুমনের। সে আবার চেষ্টা করে... কিন্তু মেশিন এবার আর কোনো কাজ করে না। বিরক্ত সুমন এটিএম কার্ডটা হাতে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। তার সব রাগটা গিয়ে পড়লো সিকিউরিটি গার্ড লোকটার ওপর। সে বেশ চড়া গলায় লোকটার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, "তোমাদের মেশিনটা যে খারাপ সেটা তো বাইরে নোটিশ বোর্ড দিয়ে জানিয়ে দিতে হয় নাকি? এই যে শুনছো, হ্যাঁ তোমাকেই বলছি..."
ম্যাঙ্কি টুপিটা সামান্য সরিয়ে লোকটা সুমনের দিকে তাকায়, তারপর চাপা গলায় হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বলে, "মেশিন তো একদম ঠিক আছে বাবু... কুচ গরবর না আছে... একদম ঠিকঠাকই তো চলেছে মেশিন!"
" ঠিক আছে! ঠিকঠাকই চলছে মেশিন? তাহলে এসব কি? টাকা কোথায়? টাকার জায়গায় এসব কি বেরোচ্ছে?" - এটিএম মেশিন থেকে বেরিয়ে আসা টিকিটের মতো কাগজটা সুমন লোকটার সামনে ধরে।
কাগজটা সুমনের হাত থেকে নিয়ে লোকটা খ্যাক খ্যাক করে দাঁত বার করে হেসে বলে ওঠে, " ঠিকই তো আছে বাবুজী। এই এটিএম থেকে টাকা পাওয়া যায়না। পাওয়া যায় কেবল টিকিট... মৃত্যুর টিকিট। আপনি টিকিট পেয়ে গেছেন, আবার চিন্তা কিসের? আপনি এখন নিশ্চিন্তে যেতে পারবেন। অল দ্যা বেস্ট বাবুজী।"
লোকটাকে ওভাবে খ্যাক খ্যাক করে বিশ্রিভাবে হাসতে দেখে সুমন নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।সে লোকটার কলার ধরে চিৎকার করে ওঠে, "ইউ স্কাউন্ড্রেল, ডিউটির সময়ে নেশা করেছো? আমার সাথে এভাবে কথা বলার তোমার সাহস হয় কীভাবে? তুমি জাননা আমি কে! আমি তোমার নামে কমপ্লেন করবো। তারপর দেখ তোমার এই চাকরিটা কীভাবে থাকে... এর উপযুক্ত শাস্তি তুমি পাবে..."
আর কথা বাড়ায়না সে। একটা নেশাখোর মাতালের পিছনে নষ্ট করার মতো সময় তার হাতে নেই। লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সুমন ।
লোকটা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সুমনকে বলতে থাকে, "কমপ্লেন করবেন? বহুত আচ্ছা... কিন্তু কার কাছে কমপ্লেন করবেন বাবুজী? ভগবানের কাছে!... করুন গিয়ে। তবে কিনা বাবুজী, আপনার কমপ্লেনে কোনো কাজ হবে না। কারণ মালিক জানে‌ আমি আমার ডিউটি ঠিকই পালন করছি। কাজে ফাঁকি আমি দিইনা বাবুজী।"
পাগলের মতো হাসতে থাকে লোকটা। লোকটাকে ওভাবে চেঁচামেচি করে হাসতে দেখে সুমনের রাগ নয় বরং হাসি পেলো। লোকটা নিশ্চয় পাগল তা না হলে রাতের বেলা এরকম একটা অচল খারাপ এটিএম কেউ পাহারা দেয়? গাড়িতে বসে সে তার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। দুরন্ত গতিতে গাড়িটা আবার অন্ধকার রাস্তার বুকচিরে চলতে শুরু করেছে। একটু হতাশ হয় সুমন। নিজেকে সান্তনা দিয়ে ভাবে সামনে নিশ্চয় অন্য কোনো একটা এটিএম পাওয়া যাবে। তার দু'চোখ সামনের রাস্তার দিকে।
হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ ঢোকার একটা বিপ্ আওয়াজ হতেই সুমন মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নম্বর থেকে একটা মেসেজ এসেছে । অচেনা নাম্বার থেকে কে তাকে মেসেজ করলো? তবে কি কেউ তাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠালো! তাই হবে। কিন্তু মেসেজটা খুলতেই... এসব কি? এবার তার কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। মেসেজে লেখা আছে " গুড বাই... আপনার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত আসতে আর মাত্র দশ মিনিট সময় বাকি। " 
কেমন যেন একটা অজানা আশঙ্কায় তার সারাটা শরীর হিম হয়ে যায়।
গাড়ির স্পিডটা বাড়িয়ে দেয় সুমন । যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে আকাশের ফার্ম হাউসে পৌঁছাতে হবে। কয়েকমিনিট পর আচমকা পকেটের ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের শব্দে সে চমকে উঠে‌। নিশ্চয় আকাশ হবে... । ফোনের স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই ফোনটা রিসিভ করে সুমন, "হ্যালো!..."
একটা ভাঙা ভাঙা যান্ত্রিক গলায় ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে, " এখন আপনার কাছে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে..."
সুমনের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। এটা তো ঐ এটিএমের পাগল সিকিউরিটি গার্ডটার গলা! গাড়ির স্পিড আরো... আরো জোরে বাড়িয়ে দেয় সে। আর ঠিক তখনি কথাটা মাথায় আসে... তাইতো এটা... এটা কীভাবে সম্ভব? ঐ লোকটা তার ফোনের নম্বর জানালো কীভাবে? তবে কি সে কোন বিপদে পড়তে চলেছে? কিন্তু কি বিপদ? একত্রিশে ডিসেম্বরের ঠান্ডার মধ্যেও সুমনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে। 
প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই গাড়ির ডান দিকের জানালাটা দিয়ে সুমন যা দেখে তাতে তার হাত পা অবশ হয়ে যায়। একটু আগে সে তার গাড়িটা যেখানে দাঁড় করিয়ে এটিএম গিয়েছিল গাড়িটা এখনো ঠিক সেইখানেই দাঁড়িয়ে... সেটা একচুলও সামনে এগোয়নি। তার মানে এতক্ষণ সে যে গাড়ি চালাচ্ছিল সেসব তবে মিথ্যা? নাকি ভয় পেয়ে সে এইসব হ্যালুসিনেট করছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে সুমন আবার ভয়ে ভয়ে সেদিকে তাকায়। নাহ! ভুল নয়! হ্যালুসিনেশন নয়! ঐ... ঐতো এটিএমের বাইরের টিউবটা এখনো দপ দপ করে একবার জ্বলছে একবার নিভছে, আর তার সামনে সেই ম্যাঙ্কিটুপি পড়া সিকিউরিটির লোকটা একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। উফ! কি সাংঘাতিক সেই দৃষ্টি! সুমন দেখে গাড়ির স্পিডের কাঁটা চর চর করে বাড়ছে অথচ গাড়ি একচুলও এগোচ্ছে না। এক প্রচন্ড অমানুষিক ভয়ে তার মুখখানা বিবর্ণ হয়ে যায়। এটিএমটাকে পিছনে ফেলে লোকটা এবার একপা একপা করে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। 
লোকটার চোখদুটো...! অমন নিষ্ঠুর চোখ কোনো মানুষের হতে পারে না! ঐ চোখ দিয়ে যেন কোনো শয়তান, কোনো পিশাচ তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটার শ্বপদের মতো জ্বলজ্বলে হিংস্র চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সুমনের শিরদাঁড়া বেয়ে বরফ ঠান্ডা একটা হিমস্রোত নেমে যায়। আঁতকে উঠে সে! লোকটা এবার এগিয়ে এসে গাড়ির বন্ধ জানালার ওপাশে দাঁড়িয়েছে। ধীরে ধীরে সে তার মুখটা নিচু করে ঘরঘরে গলায় বলে, " আর মাত্র দু'মিনিট বাবু, তারপরেই..."
না আর নয়... কিছু একটা করতেই হবে... কিন্তু কি? সুমনের মনে হলো গাড়ির ওপাশের দরজাটা খুলে এক ছুটে সে যদি পালিয়ে যায়? হ্যাঁ, যেভাবেই হোক তাকে পালাতে হবে... পালাতেই হবে। হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে দরজাটা খুলতে যেতেই... একি! দরজাটা লক হয়ে গেল কীভাবে? সুমন সর্বশক্তি দিয়ে দরজাটা খোলার চেষ্টা করে... একবার... দুবার... তিনবার... কিন্তু না! প্রাণপণ চেষ্টা করেও কোনোভাবেই সে খুলতে পারেনা দরজাটা । সে এখন একটা লক হয়ে যাওয়া গাড়ির ভেতরে বন্দি, ঠিক খাঁচায় আটকে পড়া কোনো ইঁদুর।
ভয়ে আর বিস্ময়ে সুমনের গলাটা শুকিয়ে আসে। কাঁদো কাঁদো মুখে সে শেষবারের মতো তাকায় বাইরের সেই বিভীষিকার দিকে... 
ও কে? 
ত্রিকালদর্শী দুঃস্বপ্নের মতো ও এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে...  তবে কি ও এখানে তারই প্রতীক্ষায় ছিল? 
ও কি তবে মৃত্যু? কালপুরুষ?
মুহূর্তে একটা আলোর ঝলকানিতে সুমনের সম্বিত ফিরে আসে। সে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বড়ো ট্রাক তার গাড়ির দিকেই দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে। নাহ! এখন আর কিছু সম্ভব নয়... 
সামনের বড়ো ট্রাকটা মরণের রূপ ধরে একটু একটু করে সুমনের গাড়ির দিকে লঘু পায়ে এগিয়ে আসতে লাগে... কাছে... আরো কাছে... আরো আরো কাছে...

বৈশাখী ২০২৪