সম্পর্ক

কোন্নগর, হুগলি

  
উত্তরবঙ্গে বড় হয়ে ওঠা। কিন্তু ক্লাস টুয়েলভের পর দক্ষিণবঙ্গে চলে এসেছে তমা। এখন এদিকেই থাকা লেখাপড়ার জন্য। এখানে পাঁচ বছর হয়ে গেল তবুও তমার উত্তরবঙ্গের প্রতি টান একটুখানিও কমেনি। প্রায়ই উদাসী হাওয়া ছুঁয়ে যায় ওকে। তখন হস্টেলের ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। মনে কত পুরনো স্মৃতির মেঘ জমে। সেই মেঘ জল হয়ে অবশেষে ঝরে পড়ে গাল গড়িয়ে। ওখানকার কত টুকরো টুকরো ছবি  মনের ক্যানভাসে জীবন্ত।কত জিনিস জীবনের সাথে লেপ্টে আছে। অনেক কিছুর ভিড়ে যে বস্তুটি সচরাচর মাথা উঁচু করে দেখা দেয় সেটা হলো একটা মাঝারি সাইজের বাক্স। আজও সেই বাক্স ঘিরে একটা কিছু ভাবছে তমা।
বাক্সটা বাড়ির সামনের দিকে যে বৈঠকখানা ঘরটা ছিল তার দেওয়ালে আটকানো ছিল। বাক্সটার সামনের পাল্লায় লাগানো ছিল একটা কাচ। তমার মনে পড়ে ওই বাক্সটায় পিওন জ্যাঠু চিঠি রেখে দিয়ে যেত‌। প্রতিদিন তমার বাবা একবার করে চেক করতো বাক্সটা। কিন্তু ধীরে ধীরে বাক্সটার ব্যবহার কমতে লাগল। আলেকালে আসত চিঠি। ক্রমেই বাক্সটা হয়ে উঠেছিল তমার পুতুলের ঘর। কিছুদিন পর তমা যখন আরো বড় হল তখন পুতুলগুলোও আর সেই ঘরে থাকল না। তারাও কোথায় চলে গেল! সময় যায়, বাক্স পড়ে থাকে একলা। যাতায়াতের সময় মাঝে মাঝে চোখ পড়ে যেত তমার বাক্সটার দিকে। হঠাৎ একদিন তমা লক্ষ্য করে বাক্সটার ভেতরে কিছু একটা আছে। কাছে গিয়ে তমা দেখল কাচের পাল্লার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে একটা ছোট্ট বাক্স। একটু ইতস্তত করে বের করলো বাক্সটা। দেখল একটা নতুন মোবাইলের বাক্স। আনন্দে আত্মহারা তমা ভাবল নিশ্চয়ই বাবা ওকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে যা বেরোল তা দেখে তমা অবাক!বের হলো একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা, "তুমি নিশ্চয়ই খুশি না এটা পেয়ে। ভেবেছিলে আধুনিক যন্ত্র হাতে পাবে। সুইচ টিপলেই সবার কাছাকাছি চলে যেতে পারবে,কথায়,মেসেজে। কিন্তু জানো সে আনন্দ ক্ষণিকের কারণ তাতে কোনো অপেক্ষা নেই, ধৈর্য্য নেই। এক নিমিষে পুরো পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় আনার হয়তো অনেক সুবিধা আছে কিন্তু...
তোমার বিছানায় একটি নতুন মোবাইল রেখেছি। তোমার জন্মদিনের উপহার। উপহার কেমন লাগলো জানিও।অপেক্ষায় রইলাম।ইতি বাবা" 
খানিকক্ষণ চুপ করে বসে ছিল তমা। তারপর সে ও একটা চিঠি লিখে রেখে দিয়েছিল দেওয়ালের সেই বাক্সটায়।
বাবার দেওয়া জীবনের প্রথম মুঠো ফোন খারাপ হয়েছে কিন্তু বাবার দেওয়া ওই চিঠিটা অক্ষত আছে তমার কাছে। বাবার গন্ধ পায় চিঠিটায় ও।বাবা এক বছর আগে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

বৈশাখী ২০২৪