সন্ধ্যা নামছে শৈলশহরে। যদিও পাহাড়ি জায়গায় এমনিতেই সন্ধ্যা বড় তাড়াতাড়ি নেমে আসে। রাস্তা, বাগান এমনকি বিবর্ণ বসু বাড়িটাও সেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। বিশাল বড় বাগানটার বাইরে যে নির্জন অন্ধকার পথটা চলে গেছে,তার পাশেই রয়েছে একটা গভীর খাদ,যা হাঁ করে আছে,যেন গিলে খাবে। রাস্তার অবস্থা বর্ষার কারণে ভালো নয়।কোন গাড়ি ভালো করে যেতে পারে না। এই রাস্তা দিয়ে নীচে নামতে গেলে হাঁটা পথে যেতে হবে। কিন্তু একটা কুকুরের ডাকের শব্দ অন্ধকার রাস্তার নীচের দিক থেকে আসছে। বড় চেনা লাগছে শব্দটি। কিছুটা এগিয়েও থমকে দাঁড়াল। কি করবে বুঝতে পারছে না ইন্দ্রজিৎ। একবার ভাবল ফোন করে তপনকে ডেকে নিক। কিন্তু শুধুমাত্র একটা কুকুরের ডাক কোথা থেকে আসছে সেটা খোঁজ করার জন্য তপনকে ডাকবে,এত বড় ভীতুও তো সে নয়। তবে ইদানিং এই অঞ্চলে হঠাৎ করে রাহাজানি আর হত্যা বেড়ে গেছে। গত পরশুদিনই তো এক ভদ্রলোকের ক্ষতবিক্ষত দেহ খাদের ধারে পাওয়া গেছিল। যেন কেউ ইচ্ছা করেই দেহটি খাদে না ফেলে উপরে রেখে দিয়েছিল যাতে সবাইকার চোখে পড়ে। এরপর থেকে অঞ্চলটিতে আতঙ্ক আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে। এসমস্ত কথা মনে পড়তেই ইন্দ্রজিতের মনের মধ্যে ভয় আরো দ্বিগুন হয়ে চেপে বসলো। মনে হতে লাগলো দরকার নেই যাওয়ার। কিন্তু কুকুরের ডাকটা যে এখনও থামছে না। বিরক্ত হয়ে ইন্দ্রজিৎ চিন্তা করল যা থাকে কপালে একাই যাবে। টর্চ আর একটা মোটা গাছের ডালকে লাঠি বানিয়ে হাতে নিয়ে একাই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলো। চারিদিক নিস্তব্ধ।জনহীন সংকীর্ণ রাস্তা। তার উপর ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক। মাঝে মাঝে কুকুরটির ডাকও ভেসে আসছে। হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হলো সামনে কোনো বিপদ নেই তো? হঠাৎ চোখ গেল ডান পাশের ঝোপের দিকে। অন্ধকার যেন আগুনের ভাটার মতন কিছু জ্বলে উঠল। কুকুরের চোখ? জংলি কুকুর? তাকে কি আক্রমণ করবে? একহাতে টর্চ টাকে শক্ত করে ধরল আর ডান হাতে লাঠি নিয়ে সাবধানে ঝোপের দিকে এগোতে লাগলো। চারিদিক এত নিস্তব্ধ যে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। ইন্দ্রজিতের ভয় অমূলক বলে প্রমাণিত হলো। পাতলা ঝোপঝাড়ের মধ্যে আলো ফেলতেই দেখলো অনেক কটা হিংস্র কুকুর দাঁত বের করে এগিয়ে আসছে। আতঙ্কে ইন্দ্রজিতের হাতের টর্চ গড়িয়ে নীচের খাদে পড়ে গেল। বুঝতে পারল তার বোধহয় আর বাঁচার কোন রাস্তা নেই। আগামীকালের সূর্যোদয় আর ও জীবনে দেখতে পাবে না। ঠিক এমনি সময় খুব কাছ থেকে এলো সেই চেনা ঘেউ ঘেউ আওয়াজটি। এবার একদম তার ঘাড়ের কাছে। যেন কেউ বলে উঠলো,ভয় নেই আমি আছি। ইন্দ্রজিৎ ঘাড় ঘোরাতে দেখতে পেল সেই টানটান চেহারা, চোখের মধ্যে রয়েছে সেই নরম বন্ধুত্বের আভাস, তার বহু দিনের সঙ্গী বুনো,জাতে অ্যালসেশিয়ান। এবার বুনো গগনভেদী চিৎকার করে উঠল..."ভৌউউউউউউউউউ"। তার সেই আকাশফাটানো চিৎকারে বুনো কুকুরের দল পেছন ফিরে পালিয়ে গেল। ইন্দ্রজিতের কাছে এসে সেই আগের মতই মুখ ঘষতে লাগলো বুনো। না, ইন্দ্রজিতের মধ্যে ভয় নামক বস্তুটা একবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল না, একবারও মনে হলো না যে বুনো আজ এক সপ্তাহ হল এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছে।বরং অনুভব করল যখনই কোনো বিপদে পড়বে সে বুনো ঠিক এই ভাবেই ছুটে আসবে তাকে বাঁচাতে। তবে এই জংলী কুকুরদের কাজে লাগিয়ে কেউ যে রাহাজানি করে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করছে সেটা সে বুঝতে পারল। আজ যখন এই কুকুরদের জব্দ করতে পেরেছে তাহলে এর পেছনে যে বা যারা আছে তাদেরকেও খুঁজে বার করতে পারবে। বুনোর দিকে তাকিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলল, “কিরে আমরা পারব তো?" বুনো শুধু একবার ভৌউউউউউ করে উঠল।
1 Response
বাঃ! সুন্দর একটা পজেটিভিটি আছে লেখাটার মধ্যে।ভালো লাগল।