এখন প্রতিটি দিনই বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশেষ রূপে উৎসর্গীকৃত অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে, চিলড্রেনস ডে, ফাদারস ডে, মাদারস ডে থেকে প্রেমের দিনও। আমাদের ন্যাপলাদা কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজকে তৈরি করতে পিছপা হননি। এখন ভ্যালেনটাইনস ডে-র প্রয়োজনের বিষয়ে জানেন এবং পাড়ায় নিজের পপুলারিটি বিশেষ করে বৌদি-সমাজে বজায় রাখতে বিভিন্ন সময়ে অভিনব পরিকল্পনার প্রযোজনা করেন।উনি জানেন কান টানলে মাথা হাসতে হাসতে আসবেই। ওই মাথারা আর যাই করুক ন্যাপলাদার বিপক্ষে যাবে না। ভ্যালেনটাইনস ডে নিয়ে অনেক ধরনের গল্পকথন আছে। ন্যাপলাদা বলল, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী থাকতেন, যিনি চিকিৎসকও ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। উনি বন্দী থাকাকালীনই, এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়ের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনেন। ফলস্বরূপ সেন্ট ভ্যালেনটাইনের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। রাজা রেগে গিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। দিনটা ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এরপরে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিয়াস ও ১ম জুলিয়াস, ভ্যালেন্টাইন’ স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। ন্যাপলাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "মজার বিষয়, অনেক খৃষ্টান মনে করেন এই উৎসব মানুষের ধর্ম ও চেতনা বিনষ্ট করে। শুনলে অবাক হবি, ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেইনটাইন উৎসবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ইংল্যাণ্ডের ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আবার অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি,জার্মানি,পাকিস্তানে এই দিবসের মান্যতা দেয়নি।" ন্যাপলাদা মুচকি হেসে বলে, "অথচ এখন বিভিন্ন দেশে এই দিনে প্রিয়জনের জন্য অগুনতি টাকা ঢালে। দুষ্ট লোকেরা বলে, ব্যবসায়ীরাই বুদ্ধি খাটিয়ে ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপনকে জনপ্রিয় করেছে তাদের বাণিজ্যের জন্য।" ন্যাপলাদার পরিকল্পিত অনুষ্ঠান এখন জমে ক্ষীর “রয়েল ক্লাব” এর আঙিনায়। বৌদিদের স্পেশাল লাঞ্চ, প্রেম দিবস উপলক্ষে। লাঞ্চ শুরু হওয়ার আগেই ন্যাপলাদা ঘোষণা করল, "আমারা জানি উপস্থিত বৌদিরা তাদের পতি দেবতাদের মধুর থেকে মধুরতর ভালোবাসেন। আপনাদের কোনো খামতি নেই। কিন্তু স্বামীরা কত ভালোবাসে তার প্রতিযোগিতা হবে। আপনারা আপনাদের স্বামী দেবতাকে মোবাইলে মেসেজ করুন -- আমি তোমাকে ভালোবাসি। যার পতিদেবতা সব থেকে সুন্দর উত্তর দেবে, সেই জুটি কে পুরস্কৃত করা হবে। মোবাইল আমার কাছে জমা রাখতে হবে।" বোস বৌদি বুকের শাড়ির ভাঁজ ঠিক করতে করতেই ফোঁস করে উঠলেন, "মোবাইল কেন জমা রাখব? ব্যক্তিগত প্রাইভেসি ফাঁস হয়ে গেলে তখন কে সামলাবে? ন্যাপলাদা ক্যাবলা নয়, জানে, কোভিড ১৯ এর থেকেও বড় বড়ো ভাইরাস মোবাইলে জমানো থাকে। ওসব দিনের আলোয় প্রকাশিত হলে রিখটার স্কেল কেঁপে উঠবেই, ভূমিকম্প হবেই হবে। ন্যাপলাদা বলে, "মোবাইল আপনাদের কাছেই থাকবে কিন্তু কি মেসেজ এল তা বিচারককে আপনারই দেখাবেন।" সুন্দর করে, “আই লাভ ইয়ু” কেউ ইংরাজিতে, কেউ শুদ্ধতম বাংলায় স্বামী দেবতার উদ্দেশ্যে মদন বাণ নিক্ষেপ করল। উত্তর আসতে লাগল। প্রথম উত্তর এল বোস বউদির। “বুড়ির আদিখ্যেতা দেখে শরম লাগে।“ বোস বউদি রাগে ফোঁসফোঁস করে গোঁজ হয়ে বসে পড়লেন। ঘোষ বউদির বরের লিখিত ঘোষণা এলো – "বুঝেছি, আর কিন্তু টাকা দিতে পারব না।" বসাক বৌদির - "গত মাসে হিরের নাকছাবি কিনে দিয়েছি ভুলে গেলে? এখন কিছু হবে না।" চট্টরাজ বৌদির – "কতবার বারণ করেছি অফিসের সময় ডিসটার্ব করবে না।" উত্তরটি দিয়েছে স্বামীর পার্সোনাল সেক্রেটারি মিস প্রিয়াঙ্কা। কারক বৌদির - "ভ্যানতারা রেখে কী কারণে মেসেজ করলে সেটা জানাও।" এরপর মিত্র বৌদির। পুরস্কৃত করার মত মেসেজ – "আই অলসো লাভ ইউ। আমি মিত্র, আমি আপনার মত মিতাকে হার্দিক ভালোবাসা জানাই। কোথায় দেখা করব জানান। প্লীজ, কিছু মনে করবেন না আপনার পুরো নামটা মনে পড়ছে না।"