গোঁসাইবাগানের ভূত – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

ভবানীপুর, কলকাতা


     ভেলু ডাক্তারের ছেলে বুরুন বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে ১৩ পেয়ে একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়লো। বাকি সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেয়ে নতুন ক্লাসে উঠলেও অঙ্কে ১৩ যে তার জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছিলো সেটাই এই উপন্যাসের মূল কাহিনী। 

      বাড়ির সবাই বুরুনকে এড়িয়ে চললেও তার দাদু গঞ্জের অন্যতম বিখ্যাত চিকিৎসক রাম কবিরাজ নাতির পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু তবুও তাঁর ছেলে ১৪৪ ধারা জারি করে যেসব নিয়ম তৈরি করেছিলেন বুরুনের জন্য তার বিরোধিতা রাম কবিরাজ করেন নি।
   
   এই নিয়মের মধ্যে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বাড়ি থেকে আড়াই মাইল দূরে কামড়াডাঙায় অঙ্কের এক আধপাগলা অথচ পাকাপোক্ত মাস্টারমশাই 'করালী বাবু'- র বাড়ী হেঁটে যাতায়াত করা। ভারী কড়া অথচ মজার মানুষ করালী বাবু। বুরুন শুনেছে অঙ্কের ঘোরে পায়েসকে দই না দইকে পায়েস বলে সেটাও উনি ভুলে যান। আবার বাজার করতে গিয়ে অঙ্কের এই বিশিষ্ট্য শিক্ষকটিই হিসাব মিলাতে পারেন না , শেষমেশ ভরসা তাঁর দোকানীই...। সে আরও শুনেছে করালীবাবু নাকি রাতে ঘুমের ঘোরে যেসব অঙ্ক স্বপ্নে পান ; সেই অঙ্কগুলোই তাঁর ক্লাশে সমাধান করান ছাত্রদের দিয়ে। বুরুন পারবে তো তা করতে ?
 
    এসব সমস্যা নিয়ে বুরুন যখন দুঃখে কাতর ঠিক সেই সময়েই বাড়ির পোষা টিয়াপাখির মুখে নিজের অপমান সে আর মানতে পারলো না। রাগ করে সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভৌতিক বদনাম আছে জেনেও সে চলে যায় গোঁসাইবাগানে। কারণ কোনোকিছুই যে আর তার মনে প্রভাব ফেলবে না । সেখানে গিয়ে তার আলাপ হয় নিধিরামের সাথে। কে এই নিধিরাম ? সে কি আদৌ মানুষ না অন্য কিছু ? 
   
    শোনা যায় গঞ্জের এককালের বিখ্যাত ডাকাত 'হাবু'- র আড্ডাখানা ছিলো এই গোঁসাইবাগান। তন্ত্রসাধনার জোরে হাবু ভূত পুষতো বলেও শোনা যেতো। এহেন হাবুকে পুলিশের হাতে তুলে দেবার জন্য দায়ী ছিলেন বুরুনেরই দাদু রাম কবিরাজ।

   এদিকে নাতির চিন্তায় ভারাক্রান্ত মনে কবিরাজ মশাই তাঁর বৈঠকখানা তথা ঔষধালয় তে সমবয়সীদের সাথে আড্ডাচ্ছলে জানতে পারেন তাঁর সবচেয়ে বড়ো শত্রু হাবুর খুব তাড়াতাড়ি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বদলা নেবার খবর যা ভাবিয়ে তোলে রাম কবিরাজ কে।
   
         ওদিকে সেদিন ভরদুপুরে গোঁসাইবাগানে নিধিরামের সাথে দেখা হবার পর বাড়ি ফিরে আসে বুরুন কিন্তু আমূল বদলে যায় সে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুতে তার সেরা হয়ে ওঠার চেষ্টা করালী স্যার সহ নজরে পড়ে সকলের । কিন্তু সেটা কি সত্যিই তার নিজস্ব চেষ্টা নাকি অন্য কারোর প্রভাব ? আসল রহস্যটা কি ? 

অবশেষে দোলের দিন মুক্তি পায় হাবু আর সেই দিনেই আচমকা গঞ্জ থেকে বুরুন আর তার বন্ধু ভুতুম একে অপরকে রং দেবার খেলায় মেতে উঠে ছুটতে ছুটতে গিয়ে আবারও ঢুকে পড়ে গোঁসাইবাগানে। 
কি হয় তারপর ? গোঁসাইবাগান কি সত্যিই ভূতের বাসা ?
রাম কবিরাজ কি পারবেন হাবুর সাথে লড়াইয়ে জিততে ? বুরুনের হঠাৎ পরিবর্তন এবং গঞ্জের সেরা হয়ে ওঠার রহস্য কি ভেদ হবে ? 

বলাবাহুল্য এই উপন্যাসটি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা কিশোর উপন্যাস গুলির মধ্যে একটি। অদ্ভুতুড়ে সিরিজের মধ্যে জনপ্রিয় এই উপন্যাসের লেখা এতোই সাবলীল যে শুধুমাত্র ছোটোদের না বড়োদেরও সমানভাবে আকৃষ্ট করবে এই উপন্যাস।


বইয়ের নাম : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গোঁসাইবাগানের ভূত
বইয়ের ধরণ : অদ্ভুতুড়ে কিশোর উপন্যাস
বইয়ের লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
বইয়ের প্রকাশনা : আনন্দ পাবলিশার্স
বইয়ের মূল্য : ১২৫ টাকা ( ভারতীয় মুদ্রা)   

বৈশাখী ২০২৪