কথকতা

সল্টলেক সিটি, কলকাতা

 
[১]

জলের ধারা নেমে আসছে - গরম জলের ধারা। সবটুকু রক্ত রস নিঃশেষিত করে নেমে আসছে অবিরল স্রোত। 
পৃথিবীর সব লাভা গলে গলে চারিদিকে শুধু আগুনের কোলাহল - দু/এক ফোটা জল তাতে বাষ্প হয়ে উবে যায়। 

একদিন ছিল এ শহর মসৃন মমতায় পূর্ণ - পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় রূপের ছটা। সেদিন বলেছিলে হাত দুটি ধরে ''কি নরম তোমার হাত যেন গোবিন্দভোগ আতপ চালের ভাত রেঁধে গোপালের ভোগ দিয়ে এলে।''

সব কিছু প্রহেলিকা! জাদুবাস্তবতার পাতা পড়ে আজ সব বুঝি, বুঝি যে এ অবুঝ মন ও প্রাণ দেহবল সব ভঙ্গুর - কুয়াশা। 

তবুও বসুধারা আজো কখনো সখনো তাপিত চিত্ত জুড়িয়ে দিতে ঝরিয়ে দেন রসধারা- অকাল বৈশাখে নামে কালবৈশাখী।

ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় সব আড়ষ্টতা - সব কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটার লজ্জা।
তপ্ত শরীরের জন্য কৃত্রিম প্রযুক্তিতে নয়- ঠোঁটে ধরে রাখি তোমার চোখের ভিজে কোল।

আর ঠিক তখনই নামিল অমৃত ধারা।

[২]

আত্মজীবনী আসলে কি? শুরু কোন দিন থেকে আর শেষ বা কোথায়? আদৌ শেষ আছে কি! নাকি পুরোটাই একটি জার্নি যার আদি অন্ত কিচ্ছু নেই আছে শুধু এক অবিরত অবিরাম পথ চলা। 
মিথ্যের মোড়কে পুরে তো সে জীবন বইয়ের দুই মলাটের মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। বরং সে জীবন যদি হয় ' দোয়েলের ফড়িং' এর তবে তার রঙ বেরঙের টুকরো কাটা কাপড়ের কুচির মতো ছড়িয়ে দেওয়া যায়। 
একটি পাহাড়ের কোলে চূড়ায় উঠতে না পারার ক্লান্তি নিয়ে অদ্ভুত এক নিরালায় বাস করতে পারার শান্তি পাই, মনে হয় কি আশ্চর্য রকম এক  পাওয়া আচমকা হাতের মুঠোয় এনে দিলো দিনটা। 

যারা উঁচুতে উঠে আছেন তাদের- ফিরতে দেরি হয় তো হোক্ না- ততক্ষণ এই তো ভালো একলা বসে একলাটি দেখা। ছোট্ট ছোট্ট হাত পা ওয়ালা একটা মানুষ খুদি খুদি চোখ দুটো ভাসিয়ে কখনো আকাশ, কখনো খুব কাছের জমকালো খাদ দেখতে পারে একমনে।

কতো দূরে এসে বসে আছে সে- মন রে বলো অচিন পাখি তুমি - ঘর বাঁধা হয় নাই কেন? 

এমন কি ভাবা যায় যে আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু ফুল চন্দনের ছোঁয়ায় গোপালের বাল্য দিয়ে এক কাপ দুধ চিনি বিনা চা নিয়ে বসে রুটির সঙ্গে একটু আলুর চোখা খাওয়ার পরে যে জীবন সেই জীবনের কথাক'টি আত্মার কথা হয়ে উঠলো। 
বাসি তিনটি লুচি'র একটি পেয়ে গুড়ো গুড়ো দানাগুলো অল্প চিনির সঙ্গে চেটে পুটে খেয়ে হলুদের ছোপ ফেলে সেই কাপড় রোদে কড়কড়ে করে শুকনোর নাম আত্মজীবনী! 

বেলা পড়ে আসা গরমের দুপুরে আলতো টোকায় কপালের ঘাম সরিয়ে পাশ ফিরে বসতেই সেই মিষ্টি গান - ''বেলা বয়ে যায়/ ছোট্ট মোদের পানসি তরী সঙ্গে কে কে যাবি আয়।”

বেলা যে যায়, এবার জমে যাবে আত্মজীবনী'র খাতাখানা।
 

বৈশাখী ২০২৪