কল্পবিজ্ঞানের গল্প: বিদ্যের গুণ

কলকাতা ৭০০০৫৯

বিদ্যাচরণ বিদ্যাপতির পুরোটাই বিদ্যার বহরে ঠাসা। তিনি ঠিক কতটা বিদ্যার পরিবাহক, তা তাঁর অত্যন্ত নিকট কিছু মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। বলতে গেলে বিদ্যা তাঁর চরণেই লুটোপুটি খেয়ে স্থান দখল করে মুখ লুকিয়েছে অবশেষে। ছোটোবেলা থেকে তাঁর বিজ্ঞানী হওয়ার শখটা মাঝেমধ্যেই কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলেও তাকে থামায় কার সাধ্য। নিরলস প্রচেষ্টায় গিনেস বুকে নাম তোলা বা নোবেল পাওয়াই তাঁর লক্ষ্য। আর আছে কিছু বিজ্ঞানের ছাত্র। নিজের আবিষ্কারের পর ওদের ঘষতে মাজতেই সময় চলে যায়।

এখন পাড়া ছাড়িয়ে আশেপাশে তাঁর বেশ নামডাক আছে। তিনি রিসার্চ করে সেই বিচিত্র অদৃশ্য কোট আবিষ্কার করলেন যবে তারপর পাড়া থেকে বিশাল সম্বর্ধনা পেলেন। এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথেও বেশ সখ্যতা হয়েছে। কারণ কোটটি ইনভেস্টিগেটরকুলকে অন্তরালে রেখে তাদের অল্প আয়াসেই আসল চোর ধরতে সাহায্য করছে। নানা স্ট্রিং অপারেশন, ক্রিমিনাল প্ল্যান ভণ্ডুল করতে তার ডাক পড়ে।

একটু খ্যাপাটে পাগলাটে ধরণের চরিত্র বিদ্যাপতিবাবুর। মাথায় জল, চিরুনি দেন না। জামাকাপড় ও রোজ বদলান না। এসবে নাকি সময় নষ্ট। না, না, এসব পরচর্চা লোকে করে, আর তাতে তাল দেয় চাকর রামু ও স্কুলের ছাত্রগুলো। দোষের মধ্যে দিনে বারো চোদ্দবার তিনি নস্যি নেন। আর হাঁচেন। এ নস্যিরও এক ইতিহাস আছে। বিদ্যেপতির মতো লোক কি আর বাজার চলতি জিনিসে চলে? তা যাকগে পরে বলব সেসব। এই নস্যির উৎপাতে কফ, থুতু মিলেমিশে একাকার হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় চারপাশে।

এতবছরে রামু মানে রামধন তার সঙ্গে থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে। তার বহুমূল্য ফর্মূলার দিস্তাকাগজের ফাইল, খাতাপত্তর - যা সময়ের ছাপে হলদে হয়ে গেছে, তা সংরক্ষণ করে রামু। বিভিন্ন জিনিস নিয়ে রিসার্চ ও তার ফলাফল সারাদিন ওই গুদাম ঘরের মতো ঘরটাতে বসে করতে থাকেন তিনি। এবং সবটুকু নিপুণ হাতে লিখে রাখাই তাঁর সুঅভ্যাস। সে ঘরের ভেতরে কখনো উজ্জ্বল, কখনো মৃদু নীলচে আলো জ্বলে। বিচিত্র পেন্ডুলাম, উল্টো ঘড়ি, ভাঙ্গা সাইকেল, নারকেল দড়ি , চেন আরো অচেনা কতো কী চারপাশে ছড়ানো ছিটানো। সামনে যাওয়ার উপায় নেই কারোর। পচা ডিমের গন্ধ থেকে শিয়ালের গায়ের গন্ধ - সময়ে সময়ে সবই পাওয়া যায়। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ভেসে আসে "ইউরেকা ইউরেকা" চিৎকার। প্রতিবেশীরাও নালিশ জানিয়ে গেছে কয়েকবার।

সময়ের খেয়াল তাঁর থাকে না। বহুবার ডাকতে এসে অবশেষে ঘরের ধোঁয়া-ধুলো সরিয়ে রামু যখন তেনাকে উদ্ধার করে, ভুষোকালিমাখা আতঙ্কের প্রতিরূপ ছাড়া আর কিছুই লাগে না তাঁকে। বলাবাহুল্য মাথার জায়গায় জায়গায় খাবলা করে চুল লোপাট হয়েছে এসব বীভৎস রাসায়নিকের ধোঁয়ার চক্করে। ছাগল এবং নেউলের লালা , ভুতোরিয়া পাহাড়ের অদ্ভুতুড়ে শ্যাওলা ও ম্যাগনেশিয়াম সালফেট যৌগের সংমিশ্রণে একরকম যুগান্তকারী লজেন্স আবিষ্কার করেছেন, নাম অষ্টকর্ম গুলি। এর বিটকেল টেষ্ট ও গন্ধ হলে কী হবে! খেলে দীর্ঘক্ষণ খিদে মেটে তো বটেই, শরীরে আরো নানা সদর্থক আটরকম পরিবর্তন হয়।

এ বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতের তেমন আনাগোনা নেই, কারণ তিনি অকৃতদার। নিজের এক বোন আছে, বিদ্যাপতির মাথাব্যথা উপশমকারী নব উদ্ভাবিত বামের চক্করে পড়ে তাঁর ছেলেমেয়েদুটো একবারে খোয়াতেই বসেছিলেন। বিদ্যাপতি যদিও খালি বামের কৌটো রোয়াকে গড়াতে দেখে অনুমান করেছিলেন। এবং নিমেষে নস্যির ঢেলা নাকে পুরে গরম গোলার্ধ ও ঠাণ্ডা গোলার্ধ থেকে দুটোকে বোনের কাছে এনে দিয়েছিলেন। বোন বেচারি ততক্ষণে "এ আমার কী শনি লাগলে গো" বলে কপাল চাপড়াতে শুরু করেছিলেন। সেই যে বোন গেছে আর এমুখো হয় না।

দরকারে কেউ এলে সব দেখেশুনে বিচিত্র সংগ্রহশালা নাম দিতে চায় বাড়িটার। তিনি তাই সম্পর্ক টম্পর্ক ছেঁটে ফেলেছেন। বিদ্যাচরণ বিজ্ঞানীর ল্যাব পেরিয়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে আছে নানা দেশ থেকে সংগ্রহ করা অদ্ভুত কিছু রেয়ার জিনিস। যেমন নাগাল্যান্ড থেকে আনা আমুর ফ্যালকন পাখি। অদ্ভুত ক্ষিপ্রতা এ বাজের। চোখের দিকে তাকালে হলদে কোটরাগত জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে যে কেউ ভয় পাবে। দৃষ্টি আকর্ষিত হয় তার উজ্জ্বল নীলচে ধূসর পালকে। কিন্তু মাথার ওপরের অংশ সাদাটে পালকে ঢাকা, আসলে নিজের আবিষ্কৃত ইনফরমেশন স্টপার চিপ লাগানো সেখানে। প্রয়োজনীয় কাজে, যেমন রহস্য উদ্ঘটনে গেলে তিনি নিয়ে যান পাখিটিকে। দুর্ভেদ্য জায়গার খবর সংগ্রহ করে লোকচক্ষুর অগোচরে জমা রাখার জন্য এ ব্যবস্থা।

আর আছে ছোটবেলায় খেলার ছলে বানানো মিঃ টিকটক। অকৃতদার বিজ্ঞানীর তখন থেকে এখন বড় ভরসার বন্ধু সে। কিন্তু ওকে তিনি ছাড়া কেউ দেখতে পায় না! দিনের বেলা আনাচ কানাচে লুকিয়ে থাকে। কথা বলতে ইচ্ছে হলেই পালক দিয়ে সুড়সুড়ি দেয়। রুমের লাইট নিভলেই টিকটকের আসল খেলা শুরু। তারের মতো প্যাঁচালো গোল চাকতিগুলো সমেত চোখের তারা উজ্জ্বল নীলচে আলোতে জ্বলে। মাথায় জেগে ওঠে স্প্রিংয়ের মতো শিং টাইপের অ্যান্টেনাগুলো। বানানোর পরে প্রথমটায় ছোট বিদ্যা ভয় পেত। পরে জেনেছে অ্যন্টেনার গোলাকার পিংপং বলদুটো দিয়েই ইথার তরঙ্গে নাকি ও খবর পাঠায়। অমনি লিকলিকে হাত-পা-ওলা পেটমোটা জেলি শরীরের টিকটকের নানারঙের বন্ধুরা দুলেদুলে এসে সার দিয়ে দাঁড়ায়। সকলের চোখের জ্যোতিতে ভরে ওঠে বাউন্ডারি। ওদের শরীর তৈরী হয়েছে একরকম অদ্ভুত চিপ ও জোড়া দেওয়া স্প্রিংয়ের যন্ত্রাংশ দিয়ে। যা অতিবেগুনি রশ্মিতে অ্যাক্টিভেটেড হয় ও কাজ করে। ওরা সুপার পাওয়ার পৃথিবীর কাজ করতে জানে। মানুষের সামনে পড়লেই টিকটক গোটা আমলকি নতুবা টমেটোর মতো আকার নেয়। সত্যিটা কারো নজরে না পড়ে, তাই এ রূপ পরিবর্তন। ওকে ভিনগ্রহী বলে ভুল হলেও আসলে কিন্তু বিদ্যাপতির সায়েন্টিফিক ক্রিয়েটিভিটির নিদর্শন এসব।

এহেন ব্যস্ত বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য পেতে এখন সকলেই তৎপর। প্রতি কাগজের প্রথম পাতায় তাঁর নাম। কাগজ বিক্রি হচ্ছে হটকেকের মতো। বিজ্ঞানী বিদ্যাপতি অল্পদিনেই নাসার বিজ্ঞানীদের নিয়ে পাড়ি দিতে চলেছেন মহাকাশে,  স্পেসএক্স ফ্যালকন (৯) রকেটে চেপে।

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, বাড়ির যত ফেলে দেওয়া রাবিশ একত্রিত করে রিসাইক্লিং মেথডে বহুদিনের প্রচেষ্টাতে বানিয়েছেন এ রকেট। সঙ্গে নিচ্ছেন দরকারি যন্ত্রাংশ, খিদে মেটানোর অষ্টকর্ম বড়ি, আমুর ও টিকটককে। কোন সহকারী কখন কাজে লাগে, তা তো আর বলা যায় না! তার উদ্দেশ্য বড় সুদূরপ্রসারী। পৃথিবীর যা জনঘনত্ব, তাতে স্থান সংকুলানই সম্ভব নয়, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পরিষেবা সকলকে পৌঁছে দেওয়া তো দূর অস্ত। চাঁদে তিনি একটা বিস্ময় ঘটাতে চান। 

তাঁর পরীক্ষাগারে মৌল-যৌগের খিচুড়ি কম্পোজিশনে হঠাৎই জেগে ওঠা প্রাণীটির সাহায্যে চালাবেন কাজ। বেশ যত্ন করে একে তিনি সংরক্ষণ করেছেন। সন্তানসম আবিষ্কার বলে কথা! মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখেছেন বেশ ভাল্লুকের মতো বড়সড় মুখটা। থাবাওয়ালা আটপেয়ে জীবটি আকারে এক মিলিলিটার। বিস্ময়কর প্রাণীটাকে জলে ফোটাও বা ডিপ ফ্রিজে রাখ, তেনার নো পরিবর্তন। শুকিয়ে ফেল বা গুটলি পাকাও - তাতেও সে নিজেকে অপরিবর্তিত রাখতে জানে। কারণ তখন ভল্লুক-সদৃশ বুদ্ধিমান প্রাণীটি বিপাকের হার দশভাগের একভাগ করে ফেলে বেঁচে থাকে। ১৫০ ডিগ্রি থেকে চরম শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রাতেও এরা ছানাপোনা নিয়ে দিব্য থাকে। 

তিনি টিকটকের কম্পাঙ্ক রেডারের দ্বারা খবর চালাচালি করে জেনেছেন বছরের পর বছর এমন প্রাণী নাকি চাঁদে দিব্য প্রাণধারণ করে ঘুরেফিরে বেড়াতে পারে। তাই মানব কল্যাণে তড়িঘড়ি এ যাত্রার আয়োজন। ওকে চাঁদের মাটিতে ছেড়ে কিছুদিন অপেক্ষা করবেন সত্য বিজ্ঞানীর টিম। খবরের সত্যতা যাচাই করতে। তারপর কাজ কি কম!...কম জলে কী করে শুধু বেঁচে থাকা যায়, সেটার পরেও কম জলে তুলোর চাষ... ঐ, মানে খাদ্য বাসস্থান তো হল, বাকি থেকে যাওয়া বস্ত্রের যোগানের সন্ধানটাও করবেন। 

××××××

বেশ কিছুদিন হল তিনি সফল হয়ে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। এক একটা এত বড়সড় প্রজেক্ট-ওয়ার্ক নামানো কি মুখের কথা! এবার একটু বিশ্রাম নেবেন কিছুদিন। চুল- দাঁড়িটাও কাটিয়েছেন। বড্ড বেড়েছিল। ডঃ কেশবন্ত সতপতির কাছে একটু চুলের ট্রিটমেন্টটাও করাবেন ভেবেছেন। মাথার যা করুণ পরিস্থিতি, চুল চলে গিয়ে ধূসর মরু বেরিয়ে পড়লো বলে। নিজের তৈরী দূরবীনটাতে চোখ লাগিয়ে দূরবর্তী কিছু দেখার চেষ্টা করছেন। আর ভাবছেন প্রাণঘাতী এই মারণ ভাইরাস ছেয়ে ফেলেছে দেশ। বিদেশেও একই অবস্থা। সেখান থেকেও অনুরোধ এসেছে তাঁর উদ্দীপক কিছু আবিষ্কার আসুক প্রাণিজগতকে বাঁচাতে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান এগুলোকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে গেলে প্রাণীকুল উপকৃত হবেন - পুরোনো ফর্মূলার খাতা ঘাঁটছেন তিনি। পাখিটাও কড়িকাঠের ওপর বসে নিজের বাসায় ক্লান্তিতে ঝিমোচ্ছে। হঠাৎই কান বিদীর্ণ করা আওয়াজে টেলিফোনটা বেজে উঠল। কষ্ট করে গাত্রোথ্থান করলেন বিজ্ঞানী। পুলিশ ইন্সপেক্টর মিঃ পাকরাশী। এমন এক সমস্যা নিয়ে এসেছেন, যার আশু ব্যবস্থার বিশেষ প্রয়োজন। আঙুল ভর্তি করে নস্যির ডিবে থেকে নস্যি নিয়ে চালান করে দিলেন নাকের বড় গর্তদুটোতে। বুদ্ধির গোড়াকে উদ্দীপিত করাই উদ্দেশ্য। কিছুক্ষণ আড্ডার পর মিঃ পাকরাশীর থেকে সব শুনে ভাবছেন, কোন মাস্টার মাইন্ডের কাজ এটা, যে নব নব উপায়ে এই করোনাকালেও মাদক পাচার করে!

অন্য কী অভিনব উপায়ের আশ্রয় তিনি নেবেন, যাতে সহজেই কাবু করা যায়, বন্ধ হয় এ ব্যবস্থা! যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বুদ্ধিতে শান দিতে বসলেন।

জরুরি পণ্য পরিবহনের ট্রাক, লাশবাহী গাড়ি, তেলের লরি, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনব কৌশলে মাদক পরিবহন করা হচ্ছে দেশময়। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারিতে মাদকসেবীদের চাহিদা যেন বেড়ে গেছে। তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে মাদক আনছেন কারবারিরা। ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, গাঁজা, অ্যামফিটামিন, আইসএর পর এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে ভয়ংকর মাদক এলএসডি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত থেকে গাঁজা এবং বেনাপোল সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল আসছে। আর মিয়ানমার থেকে বার্মা রোড বা সরকারি খতিয়ে স্টিলওয়েল রোড হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। প্রতি জায়গার টহল জোরদার করা সত্বেও আটকানো যায়নি।

বিজ্ঞানী বিদ্যাচরণ এসব জায়গা পুলিশের সাথে ঘুরে এসে রিপোর্টগুলো দেখলেন। চিন্তিত মুখে বাড়ি এসে বহুবছর বাদে আলমারিতে হাত দিলেন। আঁতিপাতি করে খুঁজছেন তাঁর অদ্ভুত কোটটা আর রামুর নাম ধরে চেঁচাচ্ছেন। অবশেষে রামুর হস্তক্ষেপে মিললো কোটটি। খুলে গায়ে দিতে গিয়ে দেখলেন, এ তো ইঁদুরে নানা জায়গায় কেটে, খুবলে খেয়ে রেখেছে! আবার এর মধ্যস্থিত তার ও কয়েকটা কাটা! এটা দিয়ে কি আর কাজ হবে...! আর এ পরিস্থিতিতে সারানো মুশকিল। ভাবতেই চোখ ফেটে জল আসছে। মুষড়ে পড়েছেন বিজ্ঞানী।

গত বুধবার বিকেলে ডিবি রাজধানীর রায়েরবাগে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কারকে জব্দ করা হয়। ওই গাড়ি থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে একটি পলিথিনে মোড়া ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে তাদের দল।

একই দিন ডিবির আরেকটি দল খিলক্ষেতের শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে জ্বালানি তেল বহনকারী একটি লরির ট্যাংকের ভেতর থেকে ৩৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। কিন্তু তাতে যাকে পাকড়াও করার কথা, তাকে ধরা যায়নি।

কোটের আশা ছেড়ে বিজ্ঞানী অগ্রসর হলেন অন্য পথে। রাতদিন পরিশ্রম করে, খাতা ঘেঁটেঘুঁটে বিজ্ঞানীর নতুন আবিষ্কার অদ্ভুত মাল্টিট্রুথ ডিরেক্টর চিপ। ঠিক হলো টিকটক টমেটোর আকার নিয়ে প্রতি গাড়িতে লাগিয়ে দেবে চিপটি। আর আমুর উড়তে থাকবে ক্রমাগত আশেপাশে। ওর মস্তিষ্কের মেশিনেও সব তথ্য জমা হবে। এরপর ও মুখে করে টমেটোকে, মানে টিকটককে তুলে দেবে সন্দেহজনক গাড়িতে। এভাবে অপারেশন চালিয়ে ফিরে আসবে ওরা।

××××××××

অভিযান তদারকির কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার বলেন, টেকনাফের উখিয়া থেকে গাড়ির মালিক জাকির হোসেন গ্যাস সিলিন্ডারে ২০ হাজার ইয়াবার চালান নিয়ে গাজীপুরে যাবে। সেখান থেকে ভারতবর্ষে ঢোকার কথা। মাদক কারবারের জন্য তিনি সম্প্রতি গাড়িটি কিনেছিলেন এবং ইয়াবা বহনের জন্য পেছনের ডালায় খালি গ্যাস সিলিন্ডারটি রাখেন। আর পাম্পের জন্য পেট্রল বহন করলেও এর আড়ালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ ও তার চারপাশ গাঁজার চালান নিয়ে আসছিলেন।

××××××××

রাতের অন্ধকারে ভাঙা সাইকেলটাতে চাপলেন বিজ্ঞানী। আরো বুদ্ধি চাই তার। আসলে এটা টাইম মেশিন। আগে বিশাল বড় আকৃতির ঢাউস থাকলেও এক বিপজ্জনক ঘটনার পর তিনি এর মিনি মডেল বানিয়েছেন। যা শব্দহীন। প্যাডেলে চাপ দিয়ে মেশিন চালু করতেই আওয়াজ ভেসে এলো " ছুঁচো, বেল্লিক তোর টিকটক কে বল ইথার তরঙ্গে খবর পাঠাতে। সাহায্য চেয়ে ফেল নানা ভিনগ্রহীর। যে করেই হোক দমন করতেই হবে।"

তিনি আর একধাপ বাড়ালেন প্যাডেল। টিপলেন অধৈর্য হয়ে লাল-নীল সবকটি সুইচ একসঙ্গে। এবার গমগমে শব্দে কম্পাঙ্ক বাড়ছে। কান মাথা আটকে আসছে, যেন শারীরিক যন্ত্রাংশ কিছুই কাজ করছে না বিজ্ঞানীর। চোখের সামনে দেখছেন অন্ধকার। আবার প্রচন্ড ঝাঁকুনি। তড়িৎএ এসে পড়েছেন একদম অন্য গ্রহে। চোখ চালিয়ে বুঝলেন গ্রহটির নাম GJ-২৭৩ বি। সেখানের বিজ্ঞানীদের সাথে একদফা আলোচনা করলেন। আরো একধাপ এগিয়ে চরকিপাকে পৌঁছেলেন পুলটন নামে অন্য এক নক্ষত্রে। সেখানের বিজ্ঞানীরা প্রায় সকলেই রোবট সমান। সব যান্ত্রিক বুদ্ধিবৃত্তির। তিনি হতাশ হলেন।

হঠাৎই কান বিদীর্ণ করা আওয়াজ। ঘরের ছাদ ভেঙ্গে পড়ার জোগাড় প্রায়। দেওয়ালে দেওয়ালে বড় বড় ফাটল হয়ে গর্ত হয়ে গেছে। পরিত্রাহী চিৎকারে ঘুম চোখে ছুট এসেছে রামু। অবশেষে দেখেন ঘর ভর্তি বালি সিমেন্ট। বিজ্ঞানী আজ সিমেন্ট বালিতে গড়াগড়ি যাচ্ছেন। ঢেকে গেছেন প্রায়। তাঁকে তুলে মাঝরাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তবে রামুর ছুটি। বিরক্তিতে বিড়বিড় করছেন।

××××××××××

পরের দিন মনস্থির করে টিকটককে ডাকলেন, সারাদিন আলোচনা করলেন। কিছুক্ষণ বাদে আকাশের কড়কড়ে আওয়াজে সকলের ঘুম ছুটে যায় প্রায়। বড় চাকতির মত উড়ন্ত যানটা ইউ. এফ. ও. এসে থামে ওদের বারান্দায়। লাল টুকটুকে পরিধেয়তে একজন ফ্লাইং সসার থেকে রোবটের মতো এগিয়ে আসছে। মাথার মুকুটে ট্রাপিজের চিহ্ন। এক অদ্ভুত জ্যোতি বেরোচ্ছে তার শরীর থেকে।

পেছনে ইলেকট্রনিক দড়িতে বাঁধা এই মহাযজ্ঞে জড়িত অভিযোগে কুমের খান ও পশুপতি শিকদার নামের দুই ব্যক্তি সমেত তিরিশটা লোক। মাটিতে ছ্যাঁচড়াচ্ছে। ঐ দড়ি থেকে কারেন্ট লাগছে ওদের গায়ে। চিৎকার করছে আর প্রাণপণে ক্ষমা চাইছে। টিকটক ও আমুরের চিপ অভিযান সাকসেসফুল। ঐ তো মিটিমিটি হাসছে টিকটক। রাজার নির্দেশে ঐ যানে আসা তার পেয়াদারা লেজার গান থেকে গুলি ছুঁড়ছে। চরম পিটুনি দিচ্ছে দুষ্টুলোকগুলোকে। কারেন্টের তাড়নায় সামনেই স্বীকার করছে তারা নিজেদের দোষ। ফোন পেয়ে পুলিশও এসেছে ফোর্স নিয়ে। 

বিজ্ঞানী বিদ্যাচরণ বিদ্যাপতির বিদ্যার সদ্ব্যবহার এতোদিনে সার্থক। রাজা হাত মেলাচ্ছেন। বাহবা দিচ্ছেন বিজ্ঞানীকে। এবার রাজা সৈন্যদল সমেত চড়ে বসেছেন যানটাতে। রাজার যান ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশে। ওরা হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে। আবার দেখা হবে। 

বৈশাখী ২০২৪