মনের ভীতি

বাগবাজার রোড, কাঁচরাপাড়া

ভয় - সে তো আমি অনেক কিছুকেই পাই। এই যেমন-ভূতের ভয়-রাতের অন্ধকারে একা-একা বাথরুমে যেতে ভয়। আর যদি বাথরুমে গিয়ে মাকড়সা দেখি –তাহলে তো হয়েই গেল।
কিন্ত এই সব ভয়ের থেকেও আমার একটা বড় ভয়ের গল্প আজ তোমাদের কে বলব।
এই ভয়ের নাম  -মঞ্চ ভীতি।
সবাই বলে আমি বাড়িতে সারাক্ষণ বকবক করতে থাকি। আমি নাকি নাচি ভাল। একটু-আধটু গান আর আবৃত্তিও মোটামুটি করে থাকি।
তাহলে গন্ডগোলটা কোথায় বলো তো?
 আমি যে কিছুতেই মঞ্চে উঠতে পারি না। আমি যা করব সব বন্ধ ঘরে। ঐ তো সেদিন আমার এক বন্ধুর জন্মদিনে আমাদের ছোটোদের একটু নিজেদের মত করে নাচ-গান করতে বলা হয়েছিল। সবাই কী সুন্দর এক এক করে নাচ-গান করছে আর আমি মনে মনে ঠাকুরকে ডাকছি আমাকে যেন না ডাকে কিছুতেই যেন না ডাকে। আমি মাকেও ফিসফিস করে বললাম, “আমি পারব না…”
কিন্তু মা যে ভাবে বড় বড় চোখ করে তাকাল আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না।
শেষ পর্যন্ত আমার চান্স আসল, আমি একটা  রবিঠাকুরের গান করলাম, “ও..রে.. গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল..”
কী যে গাইলাম সে  শুধু আমি জানি। গলা শুকিয়ে কাঠ, পা-হাত শক্ত হয়ে ঠক্ ঠক্ করতে লাগল। মুখের সামনে মাইক ধরে গান করলেও কেউ কিছু শুনতেই পেল না। জানি না কেন শেষে গলা বুজে ভীষণ কান্না পেল আমার। মার কাছে দৌড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। 
মা কিন্তু আমাকে বার বার বলল, “ভাল হয়েছে, পরের বার আরো ভাল হবে শুধু বেশি করে প্র্যাকটিস করতে হবে আর নিজেকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে।”
তবুও এইরকম অভিজ্ঞতা আমার বেশ কয়েকবার হল।
এরপর যদিও আমি খুব চেষ্টা করি যেন মঞ্চে উঠে ভাল করে গান বা পাঠ করে সবার মন জয় করতে পারি। আসলে আমি যে কিছুতেই বুঝতে পারি না আমার মনের কী যে অভিমান! আমি নিজেও জানি না।
আমি কিন্তু ভয়ে ভয়েই মায়ের চোখ রাঙানিতে এটা লিখলাম।

সাঁঝবাতির বয়স: ৯

বৈশাখী ২০২৪