উপকারী ভূত

দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গ


রূপপুর ভারি অদ্ভুত এক জায়গা। আশেপাশের সব গ্রামে চুরি ডাকাতি হলেও তারা কিন্তু কিছুতেই রূপপুরের পথ মাড়ায় না। এর পেছনে আছে দিনুবাবুর কীর্তি কাহিনী। এই গ্রামেরই বাসিন্দা দিনুবাবু পড়াশোনায় তেমন ভালো না হলেও ব্যবসা বুদ্ধিতে ছিলেন তুখোড়। কয়লাখনির ঠিকাদারিতে পয়সা কামিয়ে ছিলেন দেদার। জমিদারি প্রথা উঠে যাচ্ছে খবর পেয়ে প্রায় জলের দামে কিনে নিয়েছিলেন রূপপুরের জমিদার বাড়ি। জমিগুলো হাতছাড়া হলেও পেয়েছিলেন বাড়ি সমেত মস্ত বড় এক বাগান। ঐ বাগানে ছিল বিশাল একটা পুকুর।
সবুজ গাছগাছালিতে ভরা এই জায়গার পাশ দিয়েই বয়ে যায় রূপমতি নদী। সন্ধে থেকেই বইতে শুরু করে ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস। রূপপুরের সৌন্দর্যে মন মজে গিয়েছিল দিনুবাবুর। আর ফিরে যাননি। সঙ্গে রয়ে গেছিলেন জমিদারি আমলের পুরোনো কর্মচারি হরিকাকা। উনি বাগানের কাজের পাশাপাশি রান্নাটাও সামলাতেন। 
 দিনুবাবু ছিলেন পরোপকারী মানুষ। পুরোনো জায়গায় ফিরে মেতে উঠেছিলেন সমাজসেবায়। গ্রামের মেয়েদের বিয়েতে চলে আসত ওনার পুকুরের মাছ। পার্বণের সময় পাঠিয়ে দিতেন বাগানের ফলমূল। লোকের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কারোর অসুখবিসুখে ডাক্তারের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই শুরু করে দিতেন চিকিৎসা। দানধ্যান তো ছিলই। অল্প সময়েই গ্রামের সবার প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
  দুর্বলতা বলতে ছিল একটু ভালো মন্দ খাওয়ায় লোভ। ওনার দুই বন্ধু কানাই নিতাইও তার ভাগ পেত। আর ছিল তাস খেলার নেশা। সন্ধ্যা হলেই বসে পড়তেন চণ্ডীতলার উঠোনে। রাত অবধি সে খেলা চলতে থাকত। ওনার সব সময়ের সঙ্গী ছিল একটা শক্তপোক্ত ছাতা আর একটা হ্যারিকেন। অন্ধকার জঙ্গলের রাস্তায় এরাই ছিল বন্ধু। সাপের থেকে বাঁচতে ছাতা ঠুকে-ঠুকে মাটিতে আওয়াজ তুলে বাড়ি ফিরতেন। 
  এভাবেই কেটে গেল দশ দশটা বছর। তাল কাটল হরিকাকা মারা যেতেই। দিনুবাবুর তিনকুলে কেউ নেই। আপনজন বলতে ছিল একমাত্র হরিকাকা। তাকে হারিয়ে দিনুবাবু শোকে পাথর হয়ে গেলেন। আনমনা হয়ে থাকতেন। কোন কিছুর খেয়াল রাখতে পারতেন না। তবে গ্রামের লোকেরা পালা করে ওনাকে খাবার পাঠিয়ে দিত।
  একটু ঠিক হতেই আবার শুরু হল চণ্ডীতলা আসা যাওয়া। তখনও গ্রামের লোক খাবার পৌঁছে দেয়। কিন্তু বর্ষাকাল চলে এল। যখন তখন বৃষ্টি নামে। রাস্তা কাদায় ভর্তি। সাপ খোপের ভয়। কে আবার এই দুর্যোগের রাতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেবে? তাস খেলে ফিরছিলেন। মাথায় ছাতা, একহাতে হ্যারিকেন অন্যহাতে খাবার ভর্তি ভারি টিফিনবক্স। ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে মাঝে মাঝে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। দুহাতে জিনিস থাকায় মাটি ঠুকে যাওয়ার উপায় ছিল না। তাও বাড়ি অবধি পৌঁছে গেছিলেন।
 এদিকে গ্রামের লোকেরা দেখে দুদিন ধরে দিনুবাবুর পাত্তা নেই। তাস খেলতেও আসেন না। শেষে আর থাকতে না পেরে পরের দিন সকালে গিয়ে দেখে সিঁড়িতে পড়ে আছে দিনুবাবুর প্রাণহীন দেহ। শরীর সাপের বিষে নীল। হ্যারিকেন তখনও হাতে শক্ত করে ধরা। দেখে নিতাইবাবু কেঁদে ফেললেন, "আহা রে! বড় বিষধর সাপ ছিল। একটুও সময় দেয়নি।" কানাইবাবুও চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না।
একে অপঘাতে মৃত্যু তারপর তিন তিনটে রাত পেরিয়ে গেছে,  গ্রামের লোকজনের চোখে মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ। শবদাহের ব্যবস্থা করে অনেক পুজো অর্চনা হল। কিন্তু লাভ হল না। কদিন বাদেই লোকেরা দেখতে পেল কেউ যেন রাতের বেলা হ্যারিকেন নিয়ে ঘুরে বেরায়। ঠুক ঠুক করে শব্দ করে। ঠিক যেন মাটিতে ছাতা ঠুকে কেউ সাপ তাড়াচ্ছে। লোকে বলাবলি শুরু করল, " দিনুখুড়ো মরে গিয়ে এবার ব্রহ্মদত্যি হয়েছে।" এতে গ্রামের লোকেদেরই মুশকিল বাড়ল। জমিদার বাড়ির পাশ ঘেঁষে ফেরিঘাট। ওখানে থেকে গ্রামে ঢোকার দুটো রাস্তা। দুটোই মিলেছে চণ্ডীতলার সামনে, তিনমাথার মোড়ে। একটা ঘুরপথ আর অন্যটা দিয়ে গ্রামে পৌঁছতে আধঘন্টাও লাগে না।  কিন্তু বিপদ হল, ঐ পথেই পড়ে জমিদার বাড়ি আর জঙ্গল। সন্ধ্যের পর কেউ আর ও পথ মাড়ায় না।
  নীলু, ভোম্বল সমবয়সি। বয়স হবে কুড়িবছর। গলায়-গলায় ভাব। একসঙ্গে দূরের হাটে যায়। সেদিন বেচাকেনা সেরে ওরা যখন ফেরিঘাটে ফিরল তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। খিদেতে চুঁইচুঁই করছে ভোম্বলের পেট। জমিদার বাড়ির দিকে ইশারা করে বলল, "চল, আজ এই পথ ধরি।"  নীলু বলল, "আর যদি খুড়োর ভূত চলে আসে?" ভোম্বল বলল, "ভয় কী? আমি তো আছি।"     
 আলো কমে আসছে। দুজনেই পা চালাল। ক্রমাগত গাছের সংখ্যা বাড়ছে। জমিদার বাড়ির সামনে জঙ্গল অনেক ঘন। বর্ষার জল পেয়ে গাছেরা দত্যির মতো ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে জমাট অন্ধকার। কেমন যেন ছমছমে পরিবেশ। ভোম্বল তাড়াহুড়ো করে এগোতেই হোঁচট খেয়ে পড়ল। ছিটকে গেল হাতের ব্যাগ। ভোম্বলের কাতরানি দেখে নীলু সেবা শুশ্রূষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ তুলে জমিদার বাড়ির ভারি গেটটা খুলতে শুরু করল। ওরা দেখল এক ছায়ামূর্তি হ্যারিকেন হাতে এগিয়ে আসছে আর বলছে, "ওরে! আমার হ্যারিকেনটা নিয়ে যা রে! অন্ধকারে তো তোরা পড়ে মরবি।" চেনা গলা শুনে নীলু আঁতকে উঠল, "ভোম্বল রে! এ তো দিনু খুড়োর ভূত!" এরপর নীলু আর দাঁড়ায়নি, প্রাণপণে দৌড়াচ্ছিল। ভোম্বলও ব্যাগের মায়া কাটিয়ে পড়িমরি করে চণ্ডীতলার দিকে দৌড়াতে শুরু করল।
কিন্তু দিনু খুড়োর ছিল পরোপকারের শখ। মরলেই তো আর এইসব গুণ চট করে চলে যায় না। ভোম্বলরা ততক্ষণে জঙ্গল পেরিয়েছে। একহাতে হ্যারিকেন অন্যহাতে ব্যাগ নিয়ে উনিও পিছু নিলেন। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। পরিত্রাহি চিৎকার করে ফাঁকা মাঠে দুজন ছুটে চলেছে আর পেছনে ভেসে আসছে একটা জ্বলন্ত হ্যারিকেন আর একটা ব্যাগ। সবে রাত নামছে। চণ্ডীতলায় তখনও কিছু লোকের ভিড়। দুজনের উর্ধ্বশ্বাস দৌড় আর পেছনে উড়ন্ত হ্যারিকেন দেখে নিমেষে চন্ডীতলা খালি। যে যেমন করে পারল পালিয়ে বাঁচল।
 শোরগোল পড়ে গেল রূপপুর গ্রামে। নিমাইবাবু আর কানাইবাবু অবশ্য এসব কথায় কান দেননি। হাজার হোক দিনুবাবু তো ওদেরই প্রিয় বন্ধু ছিলেন। শীতের মরশুম চলে এসেছে। চারদিকে বিয়েবাড়ির ধুম। সেদিন ছিল নদীর ওপারের এক গ্রামে নিমন্ত্রণ। দিনুবাবুর কাছে খাওয়াদাওয়া করে এমনিতেই ওনাদের লোনা বেড়েছিল। বিয়ে বাড়িতে একপেট খেয়ে আর নড়তে চড়তে পারছিলেন না। ফেরার পথে, রাতে ফেরিঘাটে নেমে জমিদার বাড়ির রাস্তাটাই ধরলেন। ঢেঁকুর তুলে বিয়ে বাড়ির পোলাও, মাংসের খুব প্রশংসা করছিলেন। হঠাৎ গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক ছায়ামূর্তি। করুণ সুরে বলল, "তোরা পারলি, আমাকে ছেড়ে একা একা বিয়ের নেমতন্ন খেতে যেতে?" কে বলে বয়স্ক মানুষেরা দৌড়াতে পারে না। নিমাইবাবু আর কানাইবাবু এমন দৌড় লাগালেন যেন রেসের ঘোড়া। পেছন থেকে ভেসে এল, "ওরে খেয়েছিস তো খেয়েছিস। হজমের ওষুধটা তো নিয়ে যা।" আর হজমের ওষুধ! বেঁচে থাকলে এমন অনেক ওষুধ পাওয়া যাবে। নিমাই বলল, "ছোট, ছোট, কানাই আরও জোরে ছোট।" দিনুখুড়োর জেদও কিছু কম নয়; উনিও ওষুধ না খাইয়ে ছাড়বেন না। দূর থেকে শূন্যে ভাসা হ্যারিকেন আর দুজনের দৌড় দেখে এদিন আর চন্ডীতলার লোকেরা অপেক্ষা করেনি। দোকানের ঝাঁপ না ফেলেই পালিয়েছিল।
এই ঘটনার পর গ্রামে সন্ধ্যের পর বাইরে থাকার পাঠ চুকল। এদিকে দিনু খুড়োর তো উপকার করতে না পারলে ঘুম হয় না। অনেক ভেবে ফন্দি আঁটলেন এবার অদৃশ্য হয়েই থাকবেন। হ্যারিকেনটাও আর সঙ্গে রাখবেন না।
                        রাত আটটায় গ্রামে ঢুকে দেখলেন রাস্তাঘাট একদম শুনশান। অনেক ঘুরে দেখলেন শুধু গোলুদের বাড়িতেই আলো জ্বলছে। গোলু ওর মা, বাবার বেশি বয়সের সন্তান। তাই আদর যত্ন একটু বেশি। গোলুর মা মিনতি দেবী ছেলেকে খাওয়াতে খুব ভালোবাসেন। সুযোগ পেলেই ঠুসে ঠুসে খাওয়ান। এদিকে ছেলে যে এই ছবছর বয়সেই ফুটবলের মতো গোল হয়ে উঠেছে সেদিকে দৃষ্টি নেই।
উনি ছেলেকে দিনু খুড়োর গল্প শুনিয়ে ভয় দেখিয়ে খাওয়াচ্ছিলেন। নিজের নাম শুনে দিনু খুড়ো আর স্থির থাকতে পারলেন না। ভেতরে ঢুকে দেখলেন মিনতি দেবী ভাতের থালায় বড় বড় ডলা বানাচ্ছেন আর ছেলের মুখে ঠুসে দিচ্ছেন। ছেলের যে গলায় খাবার আটকে দমবন্ধ হয়ে আসছে সে দিকে নজর নেই।
 দিনুখুড়ো উপকারি মানুষ। কুঁজোর থেকে জল গড়িয়ে গোলুর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিলেন। শূন্যে গ্লাস ভেসে আসা দেখে গোলু খিক খিক করে হেসে উঠলেও মিনতি দেবী এমন ভুতুড়ে কাণ্ড দেখে সেই যে থালায় মুখ গুঁজে আঁ আঁ করতে শুরু করলেন বাড়িসুদ্ধু লোক ছুটে না আসা অবধি থামলেন না। সে রাতে দিনু খুড়োর কপালে কম শাপশাপান্ত জোটেনি!
 গ্রামের লোক এখন দিনু খুড়োর ছলচাতুরি ধরে ফেলেছে। আজকাল যে উনি হ্যারিকেন ছাড়াই গ্রামে ঢোকেন তা বুঝে লোকে এখন সন্ধে হলেই খিড়কি অবধি বন্ধ করে রাখে। অন্ধকারে বিস্তর ঘোরাঘুরি করেও কারোর নাগাল না পেয়ে মন অপ্রসন্ন। পরোপকার করতে না পারার দুঃখে উদাস হয়ে মাঝরাতে দিনু খুড়ো ফেরিঘাটে বসেছিলেন। পেল্লাই আকৃতির এক মালবাহী নৌকা এসে তীরে ভিড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই বেজায় শোরগোল। একজন বলে উঠল, "সর্দার এ তো ভুতুড়ে গাঁ। শুনেছি দিনু খুড়ো নামের ভূতটা সারারাত এখানেই ঘুরে বেড়ায়। আবার জমিদার বাড়িতে থাকে।"  বিনু সর্দার আর চুপ থাকতে পারল না; বলল, "আমাদের মতো চোরেদের কি আর ভূতের ভয় পেলে চলে? গ্রামের লোকেরা অন্ধকার নামলেই ভয়ে ঘরের ভেতরে সেঁধিয়ে যায়। বাইরে বেরোবার নাম করে না। গোরু মোষগুলো খোঁয়াড়ে একাই ঘোরাঘুরি করে। কটা ধরতে পারলেই আমাদের ছমাস পায়ের উপর পা তুলে কেটে যাবে।" বিনু চোরেদের কাছে গ্রামের পথঘাটের খোঁজখবর ঠিক মত ছিল না। ওরা জঙ্গলের রাস্তার বদলে ঘুরপথটাই ধরল।
 গ্রামের কাজ সেরে বিনু চোর দলবল নিয়ে ফিরছিল। আজ সে বেজায় খুশি। যা গোরু মোষ পেয়েছে তাতে ছমাস নয় একবছর পায়ের উপর পা তুলে কাটাতে পারবে। কিন্তু তিনমাথার মোড়ে এসে রাস্তা গুলিয়ে ফেলল। কোন রাস্তা যে ধরবে তা অন্ধকারে ঠাহর করে উঠতে পারল না। দেখল তিনমাথার মোড়ের সামনে চণ্ডীতলায় একটা লোক বসে আছে হ্যারিকেন নিয়ে। চোর বলে প্রথমে ধরা পড়ার ভয় পেলেও বুঝতে পারল ইনি একজন বয়স্ক লোক। গায়ের জোরে পেরে উঠবে না। নিশ্চিন্তে এগিয়ে গিয়ে বলল, "কর্তা, ফেরিঘাটের রাস্তাটা একটু দেখিয়ে দেবেন।"
              কর্তা বললেন, "আমি তো ও পথেই যাব। চলো, তোমাদের এগিয়ে দিই।" বিনু চোর ঘাড় হেলিয়ে পিছু নিল। জমিদার বাড়ির সামনে আসতেই কর্তা থেমে গেলেন। বিনু চোরের কানে এল জলের ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ। মনে ফুর্তির ফোয়ারা। এখন শুধু গোরু, মোষ গুলোকে নৌকাতে তোলার অপেক্ষা। 
খুশিতে ডগোমগো হয়ে বলল, "কর্তা, আপনি মানুষটা কিন্তু খুব ভালো। কী উপকারটাই না করলেন! অথচ আপনার পরিচয়টা জানা হল না।”
 কর্তা সবগুলো দাঁত বের করে হেসে বলল, "আমি দিনুখুড়ো রে। এই জমিদার বাড়িতেই থাকি। আজকের রাতটা এখানেই থেকে যা না।"
                 ইশ, বলে কিনা ভূতের সঙ্গে থাকতে! বিনু চোরের দল সেই যে বনবাদাড়, ঝোপঝাড় ভেঙে পালালো আর এ মুখো হয়নি। 
 তবে এভাবে গোরু মোষ হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ ওরা চেপে রাখতে পারেনি।

4 Responses

  1. Abhijit says:

    Nice . chotobelar suktara te golpo porar katha mone pore galo

  2. Goutam Roy says:

    Khub bhalo lekha!

    Congratulations.

বৈশাখী ২০২৪