আষাঢ়ে গপ্পো

বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি টাউনশিপ, কলকাতা

সন্ধ্যে হয় হয়। জ্ঞানবিবেক রায় ওরফে গ্যাঁড়া,  মেঝেয় হাত পা ছড়িয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। জার্নির পরিশ্রমে হা-ক্লান্ত গ্যাঁড়া দুদিন ধরে কেবল ঘুমিয়েই চলেছে,অনেকটা জেটল্যাগের মতো ব্যাপার আর কী! হঠাৎ একটা জবরদস্ত ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখলো সামনেই লাঠি হাতে, যমদূতসদৃশ এক ছায়ামূর্তি। আঁতকে উঠে প্রায় মুচ্ছো যাবে,এমন সময় কানে এল, “আ মোলো যা, নিজে ভূত হয়ে এখনও ভূতের ভয় গেল নি! এসে ইস্তক দুদিন ধরে কেবল ঘুমিয়েই চলেছিস যে!"


 গ্যাঁড়ার মনে পড়ে গেল দিন দুয়েক আগে সে নিজেই তো ভূত হয়ে চলে এসেছে এই ভূতপতরীর দেশে!

"নে নে, জলদি ওঠ্, রাজামশাই এত্তেলা দেছেন, কী নাকি একখান্ খুব জরুরি কাজ দেবেন তোরে।"

"ও বাবা, এখানেও কাজ?"

"নয়তো কী ভেবেছিলি, শুয়ে বসে মানুষকে ভয় দেখিয়ে মজায় দিন কাটাবি! ভূতের‌ও বেগার খাটতে হয় জানিস না?
 চটপট উঠে তৈরি হয়ে চলে আয়।"

"যাসসি যাসসি,” পেল্লায় একখানা হাই তুলতে তুলতে বলল গ্যাঁড়া।

"আচ্ছা দাদা এখানে বাথরুমটা কোথায় বলতে পারেন?" বিনীত স্বরে জিজ্ঞেস করলে গ্যাঁড়া।

"ঈঃ, নবাবপুত্তুর এক্কেবারে। এই পোড়ো বাড়িতে ওনার জন্য একেবারে ফাইভস্টার বাথরুম তোয়ের থাকবে যেন। তাও যদি নামটা গ্যাঁড়া না হত। যা, বাইরে গিয়ে ঐ ডোবাটায় ডুব মেরে আয়। মনে রাখিস রাজামশাই এমনিতে সদাশয় কিন্তু কুপিত হলে দুর্ভোগের আর অন্ত থাকবে না। আর হ্যাঁ, ঐ ছেঁড়া গিঁটমারা লুঙ্গিখানা পরেই র‌ওনা দিও না যেন, রাজসভায় একটু ভব্যিযুক্ত হয়ে যেতে হয়।"
 
দূতের হতচ্ছেদ্দায় গ্যাঁড়ার মনে খুব দুঃখ হল, ঐ নামটার জন্য‌ই তো উকিল হলেও গ্যাঁড়াকে নিয়ে অনেকেই আড়ালে হাসাহাসি করে। সব‌ই তো ঐ বজ্জাত খোকন সরকারটার জন্য। ও-ই তো, একটু বেঁটে বলে তার অত সুন্দর নামটার পরিবর্তে গ্যাঁড়া নামটা চালু করে দিয়েছিলো।   
নেহাতই সে শান্তিপ্রিয় মানুষ , তাই দোর্দন্ডপ্রতাপ ঐ খোকন সরকারকে মনে মনে খোক্কস বলে ডাকা ছাড়া আর কিচ্ছুটি করে নি। ভেবেছিল সুযোগ বুঝে মজা দেখিয়ে ছাড়বে। কিন্তু এখন তো আর ---মস্ত একখানা দীর্ঘশ্বাস পড়ল...

বাড়ির পাশেই আঁশশ্যাওড়া গাছ। তার‌ই একখানা ডাল ভেঙে দাঁতন করে, গ্যাঁড়া ডোবাটায় নামল,গোটাকতক ডুব দিতে ।
 
গ্যাঁড়ার মাথায় কোনো‌ওদিন‌ই বেশি চুল ছিল না। ডোবার গোটাকতক ব্যাঙাচি তাকে পেয়েই মাথায় চড়ে বসল কিন্তু গ্যাঁড়ার টাকের উপর টিঁকতে না পেরে, স্লিপ করে জলে পড়ে গেল,তারপর আর তাদের পায় কে! মহা আহ্লাদে পার্কের বাচ্চাদের মতো স্লিপ কেটে কেটে খেলা শুরু করে দিলো তারা।
 নতুন জায়গায় ঝামেলা পাকানো সমীচীন হবে না, তাই গ্যাঁড়া চুপচাপ স্নান সেরে নিল। 
তবে সব কিছুর‌ই একটা ভালো দিক থাকে, তাই একটু পরেই ভূতুড়ে ব্যাঙাচিদের সঙ্গে  গ্যাঁড়ার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
 ব্যাঙাচি হলেও বন্ধু তো বটেই, নতুন দেশে গ্যাঁড়ার  প্থম সুহৃদ। এতক্ষণে তার মনটা একটু শান্ত হল।
 
ঘরে চলে এল গ্যাঁড়া। এখন সমস্যা হচ্ছে কী পরে সে রাজসভায় যায়! আসার সময় তো আর স্যুটকেস ভরে জামাকাপড় সঙ্গে আনেনি, কেবল পরনের ঐ উকিলি পোশাকখানাই সম্বল! কোর্টরুম থেকে সোজাই এখানে চলে আসতে হয়েছিল তাকে। এখানে এসে ঐ গাছের ডালে ঝুলন্ত লুঙ্গিখানা পেয়ে সেটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছিল। অত‌এব গ্যাঁড়া এখন বাধ্য হয়ে উকিলি ধরাচুড়ো পরেই র‌ওনা দিলো রাজদর্শনে।
সন্ধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাঁশবনে জোনাকির আলোয় পথ খুঁজে গ্যাঁড়া রাজসভায় উপস্থিত হল।
ছায়া ছায়া পরিবেশে শূন্যে ভাসমান রাজদরবার। চারপাশে ভিড় করে রয়েছে অজস্র ছায়ামূর্তি, দেখেই গ্যাঁড়া আবার মুচ্ছো যায় যায়, হঠাৎ কানে এল, "কাঁছে আয় ,কাঁছে আয়।" 
ওমা, এ-তো সেই চেনা সুর! বুকে বল এলো গ্যাঁড়ার। পায়ে পায়ে সামনে গিয়ে বললে "পেন্নাম হ‌ই মহারাজ।"
 
রাজামশাই তার আপাদমস্তকে নজর বুলিয়ে বললেন, "এই লম্বশাটপটাবৃত হ‌ইয়া কোথা হইতে আসিতেছ বৎস? যাত্রার আসর হ‌ইতে?" 
বিদঘুটে একখানা শব্দ শুনে থতমত খেয়ে গ্যাঁড়া বললে, "এ্যাঁ, মানে না, মানে ইয়ে আর কী।"
"কিছুই তো বোধগম্য হ‌ইল না।"

নার্ভাস গ্যাঁড়ার কাছে একমাত্র পরিচিত শব্দ হলো যাত্রা। রাজামশায়ের প্রশ্নের মানেটাই তো সে বুঝতে পারেনি অথচ
 চুপ করে থাকাটাও অভব্যতা, তাই সাহসে ভর করে সে আবার শুরু করলে, "না মানে কোর্ট থেকে। শার্টটা একটু লম্বাই বটে, তার‌ উপরে এই কালো কোটখানা, ওকালতি করতে এই পোশাক‌ই আবশ্যক স্যার।"
 
"হায় রে, কী কথার কী জবাব! কোথায় মৃণালিনী আর কোথায় মুসোলিনি!"
পরিস্থিতি সামলাতে এবারে মহামন্ত্রী আসরে নামলেন।

'আঃ মহারাজ, পরিহাসের‌ও তো সময় অসময় থাকে। যখন তখন সংস্কৃতে কথা কওয়া বন্ধ করুন।"

"এটা সংস্কৃত নয় হে, এ হল সংস্কৃতের ঝাল দেওয়া বাংলার ধোঁকা। এই লোকটিকে এনে হাজির তো করলে, পরীক্ষা করে নিতে হবে না, যে কাজে ওকে লাগাবে, তার কতখানি যোগ্য ও! পরিস্থিতি সামলাতে এলেম লাগে হে।"

বিরক্ত মহামন্ত্রী বললেন, “আমি অনেক দেখে শুনেই এটাকে পছন্দ করে এনেছি মহারাজ, এটা মহা মিচকে...”

গ্যাঁড়া বাধা দিয়ে বলল, "শুধু শুধু গালাগালি দিচ্ছেন কেন স্যার!"

" না রে বাবা, তোর বুদ্ধির প্রশংসাই করছি।"

"কিন্তু এইমাত্র রাজামশাই যা বললেন সেই শব্দের মানেটাও তো জানা দরকার!"
 
মহামন্ত্রী বললেন, "সব হবে, আগে কাজটা সেরে এসো দিকিনি। মন দিয়ে শোনো। মহারাজের‌ অধস্তন চারশো উনিশতম বংশধরটি, গভীর চক্রান্তের শিকার হয়ে মহা ফাঁসান ফেঁসেছে। আধুনিক কালের মোবাইল আর ইন্টারনেটের বজ্জাতির ব্যাপারটি তো জানো নিশ্চয়ই, এর‌ই চক্করে ফেলে কোটি কোটি টাকা তছরূপের দায়ে, সৎ, নিরীহ ছেলেটিকে জেলে পাঠাতে চাইছে একদল বদমাইশ। কেন, কী ব্যাপার, ওসব তোমার না জানলেও চলবে। মোটকথা ওর বিপক্ষের উকিল খোকন সরকার, মোটা টাকা ঘুষ নিয়ে, ভুরিভুরি মিথ্যে তথ্য সাজিয়ে ওকে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছে। ওর পক্ষের উকিলরা, ধুরন্ধর খোকন সরকারের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। আজ‌ই  ফাইন্যাল বক্তৃতায় দোষী সাব্যস্ত করে ছেলেটিকে জেলে পাঠানোর কাজটা সারবে। তোর কাজ হবে সেটা ঠেকানো।"

শুনেই গ্যাঁড়া হাইমাউ করে উঠল, "আর লোক পেলেন না স্যার, ঐ বাঘের মুখে আমায় ফেলে দিলেন! আমার মতো ব্রিফলেস উকিল যার কিনা নিজের‌ই সংসার চলত না  নেহাত একটু যাত্রাপালা লিখতে পারতাম তাই..."
"এ্যাই চোপ্ ।।এক ধমকে থামিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বললেন, “তোকে আমি চিনি না! তুই ব্যাটা মহাধুরন্ধর, কুঁড়ের হদ্দ, শ্বশুরের অগাধ পয়সায় বসে বসে খেতিস আর শখ মিটিয়ে যাত্রাপালা লিখতিস। নেহাত দজ্জাল বৌটা চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করত, তাই মাঝে মাঝে  কোর্টে যেতিস।"

"তাহলে সব জেনেশুনেও আমার মতো পাতি উকিলকেই বা বাছলেন কেন?"

 "শোন্ বোকা তোর ঐ গ্যাঁড়া নামটা চালু করার জন্য খোকন সরকারের উপর প্রতিশোধ নিবি না?"

"আহা, আপনার যেন আমার কথা ভেবে ঘুম হচ্ছিল না! ওই মিথ্যুক, বজ্জাত খোক্কসটার সামনে আমি দাঁড়াতে পারব না।"

"আরে তোকে থোড়াই ওকালতি করতে পাঠাচ্ছি! ভূতের ওকালতি কে কবে গ্রাহ্য করেছে! তুই তো যাবি কেসটা বানচাল করতে। এইসব বদবুদ্ধিতে তোর জুড়ি নেই!"

মহারাজ বললেন, “ও কী পারবে?" 

"মহারাজ, ব্যাটার চেহারাটা নিরীহ কিন্তু পুলিশকেও গোল খাওয়ানোতে ওস্তাদ। একবার পথে পুলিশ ওর আইডেন্টিটি কার্ড দেখতে চেয়েছিল, বৈধ কার্ড থাকা সত্ত্বেও আচমকাই দৌড় লাগিয়ে পুলিশদের আধমাইলটাক পিছু ধাওয়া করাল, আবার প্রকৃতির ডাকের‌ অজুহাতে ছাড়াও পেয়ে গেল। সাধে কী আর এটাকে ধরে এনেছি! নে, যা এবারে কাজে লেগে পড়!"
উপর্যুপরি অপমানে গ্যাঁড়া খানিকক্ষণ থম্ মেরে থেকে বললে, "দাঁড়ান আগে একটু খেয়ে দেয়ে, গায়ে জোর করি। আপনার আর কী, আপনি তো আমায় খোক্কসের মুখে ঠেলে দিয়েই খালাস। তাছাড়া এই কাজের বিনিময়ে আমারও কিছু চাই!"

"তোর সাহস তো কম নয়! দেখেছেন মহারাজ এটা কী জিনিস! ব্যাটা ভূতের কাছেও ঘুষ চায়!"

মহারাজ পান খাচ্ছিলেন। পানের  পিকসহ মুখটা আকাশপানে তুলে বলেলেন, "কটো?"

"আরে না না, টাকা চাইনে! আপনি শুধু আমায় ঐ বিদঘুটে শব্দের অর্থটা বুঝিয়ে বলুন তো। গালাগালি দিলেন কিনা সেটাও তো জানা দরকার।"

"আরে বাবা ওর মানে হল, জমকালো পোশাক পরিধানপূর্বক...নে, এবারে যা তো বাপ্ আমার।"
 "হ্যাঁ, এইভাবেই সম্মান দিয়ে অনুরোধ করবেন, তবেই যাব।"

 সোমবার সকাল। কোর্টরুম লোকে লোকারণ্য। অদৃশ্য গ্যাঁড়া, কোর্টরুমের প্রশস্ত জানলার ধাপে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসেছে। পকেটে, ডোবার ব্যাঙাচি দল। কেস্ বানচাল করার ফুলপ্রুফ প্ল্যান তার মগজে ছকা।

আজ জজসাহেবের মেজাজ খুব খারাপ। তাঁর বড়ো সাধের পুরুষ্টু গোঁফজোড়ায় সম্প্রতি টাক পড়তে শুরু করেছিল। জজসাহেবের জাঁদরেল গিন্নির চাপে কাল সেটি  বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছেন। কোন মুখে যে কোর্টে যাবেন সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল, নেহাত মুখে মাস্ক থাকে তাই বাঁচোয়া। তিরিক্ষি মেজাজে জজসাহেব আসন গ্রহণ করলেন।
 দুঁদে উকিল খোকন সরকার বক্তৃতা শুরু করবেন, কোর্টে পিনপতনের নীরবতা।
হঠাৎ কী যে হল, উকিলবাবু হাসতে শুরু করলেন, দমকে দমকে সে কী হাসি, হাসতে হাসতে বেদম হয়ে পড়ছেন তবু থামছেন না।
 আসলে সূক্ষ্মশরীরে গ্যাঁড়া তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। উকিলবাবুর সর্বাঙ্গে অনর্গল সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে নাজেহাল করে ফেলছে, থামার নামটি নেই। 
ওদিকে জজসাহেব ভাবলেন তাঁর গোঁফ কামানোর ব্যাপারটা ধুরন্ধর উকিলটা ঠিক বুঝে ফেলেছে। রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললেন, "অর্ডার -অর্ডার।"
একটু বাদে গ্যাঁড়া থামতে উকিল‌ও হাসি থামাল। 
জজসাহেব বললেন,"জানেন আপনার এই আচরণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে পারি?"
ঠিক তক্ষুনি গ্যাঁড়া ফিসফিসিয়ে বললো "আবার একবার শুরু করব?"
উকিলবাবু রেগেমেগে বললেন, "ফাইজলামি নাকি?" 
জজসাহেব একনিমেষের জন্যে একটু হতভম্ব হলেন। তারপরই দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন, "মানে? জানেন না আমার কী ক্ষমতা!"

গ্যাঁড়া আবার বলে উঠল, "সামান্য একটু সুড়সুড়ি দিই?"
উকিল বলল, "খবরদার"।
থতমত খেয়ে জজসাহেব বিষম খেলেন।
সভাগৃহে সবাই স্তম্ভিত। 
বেজায় রেগে অপমানিত জজসাহেব উকিলকে টাইট দিতে নিজেই শক্ত হাতে হাল ধরলেন।
 "আচ্ছা বলুন তো, এযাবৎকাল যা যা সাক্ষ্যপ্রমাণ আপনি পেশ করেছেন--"
ঠিক তক্ষুনি গ্যাঁড়াও বলল, “আপনার কোটি টাকার ঘুষ নেবার ব্যাপারটা  সিবিআই জেনে ফেলেছে, আপনার হাতে হাতকড়া পড়ল বলে।"
খোকন সরকার চিৎকার করে বলে উঠল, “মিথ্যে, মিথ্যে সব ডাহা মিথ্যে।"
 
 বিস্মিত জজসাহেব বললেন,  "আর ইউ সিয়োর?"
গ্যাঁড়াও অমনি এক‌ই প্রশ্ন করতেই উকিলসাহেব উঁচু গলায় বললে, "ইয়েস, হান্ড্রেড পার্সেন্ট।"

জজসাহেব বললেন, "আপনি কি কারোও চাপে পড়ে এই ধরনের আচরণ করছেন?"

"হ্যাঁ স্যার বিবেকের তাড়নায়।"

"এতদিন আপনার বিবেক কোথায় ছিল?"

তখন‌ই আবার ব্যাঙাচিরা তাদের "অনুস্বার ব্যান্ড" নিয়ে গান শুরু করেছে --
খোকন সরকারের কান ঝালাপালা। কোর্ট আর গ্যাঁড়া দুদিক সামলাতে সে নাজেহাল। 
 ওদিকে গ্যাঁড়া আবার‌ও একখানা বকের পালক নিয়ে এগিয়ে আসছে, দেখেই আতঙ্কিত উকিল সাহেব চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, "আঃ ছেড়ে দে না মাইরি।"

জজসাহেব আর রিস্ক নিলেন না। চটপট শুনানি মুলতবি করে দিলেন। 
 খোকন সরকারকে মস্তিষ্ক বিকৃতির দায়ে বরখাস্ত করা হল।
  
 এই তালেগোলে‌ অপর পক্ষের আইনজীবীরাও সময় পেয়ে ‌বিবিধ সাক্ষ্য প্রমাণ জুটিয়ে ফেলে নিরপরাধ
 ছেলেটিকে নির্দোষ প্রমাণ করে দিল। অবশেষে রাজামশায়ের বংশধর বেকসুর খালাস পেয়ে মুক্তি লাভ করল।

গ্যাঁড়া এখন ভূতরাজ্যে পার্মানেন্ট সিটিজেনশিপ পেয়ে গেছে। মহাসুখে যাত্রাপালা লেখে  সেইসব পালা নিয়মিত অভিনীত হয়। নেপথ্য সংগীতে ব্যাঙাচিদের "অনুস্বার ব্যান্ড।"
তবে সর্বসুখ তো কারও কপালে লেখে না। গ্যাঁড়ার আজকাল রাজভোগেও অরুচি। গিন্নির হাতের নিরামিষ রান্না,আর পিঠে পায়েস খুব মিস্ করছে। কবে যে তার গিন্নিটা বেড়া টপকে এপারে আসবে...!

বৈশাখী ২০২৪