কাজের ফাঁকে নির্জনতা খোঁজেন মানুষ। আর এই নির্জনতা খুঁজতেই তার ঝালং এর কথা মনে পড়ে। আমি সুমনদাকে বললাম,সুমনদা চলো আমরা বেড়াতে যাই ঝালং এ। আমি সুমনদার সঙ্গে ছায়ার মত থাকি তার পরিবারের একজন হয়ে। শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। রাত সাড়ে আটটায় ছেড়ে পরের দিন দুপুরে পৌঁছবে নিউ মাল জংশন। এখান থেকে ঝালং ৪৫ কিলোমিটার। গাড়ি রিজার্ভ করে আসতে হবে। হাজার দেড়েক টাকা ভাড়া পড়বে। এ ছাড়া, নিউ জলপাইগুড়িতে নেমেও আসা যায় ঝালং। নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজিপি থেকে ঝালংয়ের দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার। ঝালংয়ে সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা হল পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তাঁবু। নদীর ধারে পরপর কয়েকটি তাঁবু রয়েছে। যেন প্রকৃতির কোলে বসবাস। সুমনদার এক বন্ধু বললেন, "গরম অনেকটাই কমে গিয়েছে। বর্ষাও বাংলার দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই বাঙালির ভ্রমণ পিপাসু মন আবার জেগে উঠেছে। এই বর্ষায় যদি ২ থেকে ৩ দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে আর আপনি যদি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তা হলে ঘুরে আসুন ঝালং থেকে।" শিলিগুড়ি থেকে ৯৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম। শিলিগুড়ি থেকে ভুটান যাওয়ার পথেই আসে এই গ্রাম। জলঢাকা নদীর ধারে অবস্থিত এই অঞ্চলের সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। এই সরু নদীতে গিয়ে মিশেছে ঝোলুং-এর মতো বেশ কিছু ঝোরা। জলের টলটলে নীল জল দেখে স্বপ্নের জগতে পৌঁছে যাওয়া যায়। নদীর উপরের দোলনা ব্রিজ অ্যাডভেনচার প্রেমীদের জন্য আদর্শ। সুমনদা বই পড়ে জানলেন, যাঁরা ভিড় পছন্দ করেন না, তাঁরা অনায়াসে ঝালং গিয়ে নির্জনতা উপভোগ করতে পারেন। চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং-এ। এখানে গাড়ি-হর্নের আওয়াজের কোনও চিহ্ন নেই। সারা দিন ধরেই ঝর্নার জলের শব্দ। বর্ষায় তার সঙ্গে বৃষ্টির আওয়াজ আর ঝিঁঝির শব্দ মিশলে পরিবেশটা আরও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। এছাড়াও সবুজে ঘেরা পাহাড়ি গ্রামে রঙ বেরঙের কাঠের বাড়িগুলি দেখার মত। সঙ্গে রয়েছে রাস্তার ধারে সার দেওয়া কমলালেবুর বাগান। বর্ষার সময়ে পুরো চিত্রটাই আরও রঙিন হয়ে ওঠে। রাতেও ঝালং-এর সৌন্দর্য দেখার মতো। রাতে জোনাকি যেন সৌন্দর্য আরও নিবিড় করে তোলে। আর একটু দূরে, ঝালং-এর কাছেই রয়েছে বিন্দু গ্রাম। এই পাহাড়ি গ্রাম নানা রকমের গাছ দিয়ে সাজানো। গ্রামে একটি বাঁধ রয়েছে, তার উপরে উঠলে ভুটানকে এক ঝলক দেখে নেওয়া যায়। চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং-এ। ঝালংয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। বনবাংলোর পাশে ঝোলুং ঝোরা এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে জলঢাকা নদীতে। সামনে জলঢাকার ওপর ব্রিজ। ঝালং থেকে পাহাড়ি পথে ছোট্ট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভুটান সীমান্তে ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। পথে পড়বে ঝালং-এ জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট, প্যারেনে রঙিন রঙিন কাঠের বাড়িঘর আর রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান। ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। রঙিন কাঠের বাড়ির জানলায়, বারান্দায় টব আলো করে রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের ওপর পায়ে হেঁটে ওঠা যায়, ছবি তোলা নিষেধ। হেঁটে আসা যায় ওপারে ভুটানের চৌহদ্দি থেকেও। হাটবারে ভুটানের গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ আসেন বিন্দুতে বাজারহাট সারতে। প্রয়োজন মুছে দেয় রাজনৈতিক সীমারেখা। এখানে বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গেছে ভুটান পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়। বুধবারে ঝালং-এ আর বৃহস্পতিবারে বিন্দুতে হাট বসে। শিলিগুড়ি থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১০৪ কিমি। ঝালং থেকে বিন্দু ১৩ কিমি। ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেড়িয়ে নেওয়া যায়। প্যারেন থেকে ঘুরে আসা যায় তোদে।