দুধগন্ধ

কলকাতা ৪২


ইদানিং রাতে প্রায় ঘুম ভেঙে যায়। একটা অচেনা গন্ধ ঘরময় ঘোরাঘুরি করে। এ গন্ধ পাশে শুয়ে থাকা রাকার না। পরিচিত কোনো পারফিউম, তাও না।  
সন্ধের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। এখন এই মাঝরাতে ভ্যাপসা গরম। মাটির সোঁদা গন্ধ‌ ভেদ করে সেই আশ্চর্য গন্ধটা আবার ফিরে আসছে। গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই। পিচ্ছিল নিরেট অন্ধকার। নিস্তব্ধ আকাশ। অগুনতি তারার মালা। শব্দহীন নৈঃশব্দ্যে বৃক্ষরা সব জেগে না ঘুমিয়ে জানি না। তবে আমার আর ঘুম আসবে বলে মনে হচ্ছে না। একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গন্ধের উৎস সন্ধান করি। আর তখনই বাগানের দিক থেকে গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে উঠে আসে সেই গন্ধ। আমাকে জড়িয়ে নেয়। আমি আকুল হই। আর চিনতে পারি, এটা হারিয়ে যাওয়া পরীদির বুকের গন্ধ। আমি সেই মায়া জড়ানো কিশোর বেলা ফিরে পাই। 
পরীদি দু' ক্লাস উপরে পড়ত। পাশাপাশি স্কুল। ওদের দেরিতে ছুটি হত। কিন্তু পরীদি বলে দিয়েছিল, 'দাঁড়িয়ে থাকবি আমার জন্যে। আগে যাবি না।' আমারও ভাল লাগতো পরীদির সঙ্গে ফিরতে। ধুলোমাখা পায়ে অনেকটা পথ হেঁটে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে হত। এক গ্রীষ্মের নিদাঘ দুপুরে হঠাৎ ছুটি হতে পরীদি বাড়ি ফেরার পথে বলল, “চ' আমবাগানে  গিয়ে খেলি।' 
আমি তো মহা খুশি। পরীদি খেলবে আমার সঙ্গে! সেদিন লুকোচুরি না, অন্য এক খেলা খেলেছিল পরীদি। ব্লাউজের হুক খুলে তার কোমল নরম বুকে আমার মুখ চেপে ধরেছিল। সে কী মিষ্টি আর ঘোরলাগা গন্ধ। আমি পোষমানা ছানার মত সেই নরম পেলব শীতলতার মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলাম। পরীদি আকুলি বিকুলি করছিল। শেষে তার স্তনবৃন্ত আমার মুখে গুঁজে দিয়ে বলল, 'খা, দুধ খা।' সেই মোহময় নোনতা জল, ঘামের গন্ধ, সেই গ্রীষ্ম দুপুরে এক কিশোরের বয়ঃসন্ধিকাল জেগে ওঠা!
পরীদি এখন আমাকে নিয়ে পা-ছাড়িয়ে বারান্দায় বসেছে। আমি যেন তার কোলের শিশু। অনেক যত্নে আর পরম মমতায় এবার স্তন্য পান করাবে। আমি দু'হাতে জোরে আঁকড়ে ধরি। চুল টানি। নখ দিয়ে মুখে আঁচড় দিই।
'ছাড়, আমার লাগছে।'
'লাগুক। আমাকে আমবাগানে ফেলে কোথায় চলে গিয়েছিলে?'
'ওঃ! রাগ হয়েছে বাবুর। এই নে দুধ খা।'
পরিদি আবার তার স্তন উন্মুক্ত করল। আর আমি হাঘরের মত আবার ঝাঁপিয়ে পড়লুম। আমি হারানো দুধগন্ধ আবার ফিরে পেলুম। এখন আমি খোলসশূন্য শামুক। শুঁড় বের করে আস্বাদনে ব্যস্ত। বাইরে অন্ধকার পৃথিবী তার নিস্তব্ধতা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে।

আজ তিনমাস হল পরিদি ব্রেস্ট ক্যান্সারে  মারা গেছে।

বৈশাখী ২০২৪