এক অপার সেতুর গল্প

বিষ্ণুপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

এ গল্প এক মায়াচ্ছন্ন বন্ধনের। এক অপার যোগসূত্রের। দিকচক্র জুড়ে  থাকা এক অপার অনুভব সেতুর গল্প। এ গল্পের শেষে তাই ধামাকাদার কোনও চমক নেই। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির মাপ জোক বা হিসাব নিকাশের কূটকচালি নেই। তবে হ্যাঁ, এ গল্পের ধূপছায়া যাত্রাপথের সবটুকু জুড়ে আছে নাম না জানা বুনো ফুল আর বনস্পতির তেজিয়াল মন উদাসী সুবাস। 
 গল্পের একাধিক চরিত্রের ভিড়ে দুই মূলকেন্দ্র বিন্দু দুই নারী। আঁখি আর সুমেধা। তবে আরও একজন আছে। অলক্ষে থাকা সে চরিত্রের উন্মোচন ঘটবে সময় মাফিক। সে উন্মোচনে পারিজাতের সুবাস মিশে যায় যেন এটুকুই প্রার্থনা।

গল্পের চরিত্র আঁখি নিপাট গৃহবধূ। বয়স আন্দাজ চব্বিশ। আর অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা সুমেধা ষাট টপকেছেন বছর দুই হল।

এবার আসুন ঢুকে পড়া যাক গল্পে।

নরম ঘাসের চাপড়াগুলো পায়ের পাতায় আলতো বিঁধতে থাকে। এগিয়ে চলে আঁখি। এ পথে একটা নদী পড়বে। ঠিক জানে আঁখি। সে নদীর পার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাশের মতো দুধ সাদা ফুলের বন। তবে কাশ নয়। এ বনের সবুজ সূচালো লম্বা লম্বা পাতায় আর ফুলে নদী থেকে উঠে আসা মৃদু মন্দ ঠাণ্ডা বাতাসে ঢেউ  জেগে থাকে।

নদীর বা ফুলের কারোও নামই আঁখির জানা নেই। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না। নাম সে কিছু একটা দিয়ে দেওয়াই যায়। আগে তো দেখা হোক।
 এই যেমন আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে যদি কেউ ডাকে, 'ও ভাই উদাসী নীল!' 
আকাশ কি রাগ করবে? না কি আপত্তি! 
 
 আর কিছুটা পথ পেরুলেই সে নদী। যার পার ঘেঁষে বাঁধা থাকে মন পবনের দাঁড় নৌকাখান। নৌকা খুলে দিয়ে পাটাতনের উপরে চিত হয়ে শুয়ে পড়লেই ব্যস! অচিনপুরের পানে শুধু ভেসে চলা। চরৈবেতী...চরৈবেতী! 

তীব্র স্বরে কলিংবেলটা বেজে ওঠে। চমক ভেঙে হাতের খোলা বইটা মুড়ে উঠে পড়ে আঁখি।
 দরজা খোলার আগে ডাইনিংয়ের খোলা জানালা দিয়ে সে দেখে নিয়েছে দরজায় অপেক্ষমান সুমেধা গোমসকে।

"একটু ঠাণ্ডা জল খাওয়াবি মা? একটু চার্চে গেছিলুম। এটুকু গরমেই দেখ না জিভ বেরিয়ে যাবার জোগাড়!"

সবে মে মাস পড়েছে। বেলা এগারোটাতেই আগুন ঝরছে বাতাসে।

ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল সবুজ ম্যাঙ্গো স্কোয়াসের সঙ্গে মিলে মিশে ধোঁওয়া ধোঁওয়া আমাজনের বৃষ্টি অরণ্যের রূপ নিয়েছে।
সব তৃপ্ত মানুষের মুখেই ঝিরিঝিরি ঝাউয়ের পাতার দোলা লেগে থাকে। সে দৃশ্যে আঁখির বড় তৃপ্তি লাগে। 

এই সুমেধা গোমস আঁখিদের যাকে বলে উঠোন পড়শি। দু-বাড়ির মধ্যে কোমর সমান উঁচু পাঁচিলের ব্যবধান মাত্র। সবচেয়ে মজার বিষয়  রান্নাঘরের জানালা দিয়ে নিত্য গল্প চলে  দুজনার। দু-বাড়ির রান্নাঘর যেন মুখোমুখি খোলা জানালা দিয়ে পরস্পরের রান্নার সুবাস নিতে উদগ্রীব সময়ে অসময়ে। 
সুমেধা মানুষটাকে আঁখির একটা বিশেষ কারণে বড় আপনার মনে হয়। যদিও আঁখি এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে এসেছে মাস ছয়েক হল। 
 মাটিতে আসন পিঁড়ি হয়ে বসে রান্না করেন সুমেধা। তখনও কোলে খোলা থাকে গল্পের বই।

এই সুমেধা গোমস মানুষটার নামে পাড়ার অনেকেই অনেক কিছু বলে। বাজারে না কি মানুষটার হাজারো দেনা। একটু আলাপ জমানোর পরেই না কি সুযোগ বুঝে টাকা ধার চান মহিলা।

খানিক এটা সেটা গল্প গাছার পর বিদায় নেন সুমেধা।

আজ সুকোমলের এমার্জেন্সি ডিউটি। সেই সকাল আটটায় টিফিন খেয়ে বেরিয়ে গেছে সে হসপিটালে। আঁখির তাই আজ অখণ্ড অবসর। আবার সে ডুব দেয় তার প্রিয় বইটাতে। এটা তার একান্ত যাপনের এক নিরালা বেলাভূমি। একটা বিশেষ ধরনের মনখারাপি হেমন্তবেলা যখন আঁখির মনের চাতালে থাবা বসায়, রাশি রাশি লালচে হলুদ ঝরা পাতার দল ঝিম ধরা কুয়াশায় ভেসে ভেসে নেমে আসে - তখনই এই বইটাতে ডুব দেয় আঁখি। 

এমনিতেই সেই কোন ছোটবেলা থেকেই গল্পের বইয়ের নেশা তার।
নবনীতা ছিল আঁখির প্রথম খেলুড়ে সই। আঁখিদের ভাড়া বাড়িটার সামনের বেলগাছ আর মাঠ টপকে একটা অন্ধকার গলির পেটে সেঁধিয়ে গেলে সে গলি উগরে দিত নবনীতাদের পাড়ায়। পুকুর পাড়ে খেলার ফাঁকে নবনীতাদের বাড়িতে জল খেতে ঢুকে প্রথমবার সে যখন দেখেছিল আনন্দমেলাকে তখন আঁখি ক্লাস ওয়ান। সেই সংখ্যার কভার পেজটা আজও ভোলেনি আঁখি। কভার পেজের সবটা জুড়ে মান্ডুর জাহাজ মহলের ছবি। তখন অবশ্য ওই মহল সম্পর্কে কোনও জ্ঞানই ছিল না তার। তবুও সন্ধ্যার অন্ধকার ছুঁয়ে দেওয়া সেই মহলের থমথমে রূপ আর ভিতরের পৃষ্ঠায় রবাব হাতে ছলছল চোখের রূপমতীকে দেখে আঁখির কী যেন হয়েছিল। নবনীতাদের কাউকে কিছু না বলেই বইটা বাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল সে।

মা বকেননি। শুধু বলেছিলেন, “কারোও কোনও জিনিস না বলে নেওয়াকে চুরি করা বলে। আর চুরি করা চরম অপরাধ!”

বইটা পরদিনই ফিরিয়ে দিয়েছিল আঁখি। এরপর থেকে প্রতি পক্ষে মানে মাসে দুটো করে আনন্দমেলার সংখ্যা আসতে শুরু করেছিল আঁখিদের বাড়িতে। 

এভাবেই শুরু। প্রতি বইমেলা আর জন্মদিনে স্টক বাড়ছিল। সঙ্গে ছিল স্কুলে প্রাইজে পাওয়া বইয়েরা।

এরপর আরও বার তিনেক সুমেধা গোমস এসেছিলেন আঁখিদের বাড়ি। শেষবার একটু কিন্তু মিন্তু করে টাকা চেয়ে বসলেন। আঁখি তৈরিই ছিল।
"মাসিমা, জানেনই তো আমি তো কোনো চাকরি করি না। অতগুলো টাকা আমার হাতে থাকে না।"

"একটু সুকোমলের কাছে চেয়ে রেখোখনে। বিশেষ প্রয়োজন। পেনশনের টাকা ঢুকলেই ফেরৎ দিয়ে দেব।"

আঁখির খুব অসহ্য লাগছিল। স্কুল ফান্ড তছরুপের কারণে সাসপেন্ড হয়েছিলেন সুমেধা । আর তাই পেনশনও শুরু 
হয়নি ততদিনে ওনার। একথা পাড়ার মহুয়া বৌদিই বলেছিল একবার আঁখিকে সুমেধা গোমস সম্পর্কে সাবধান করার সময়।

সুমেধা গোমস যখন কথা কটা বলে করুণ মুখে আঁখির দিকে তাকিয়ে ছিল, তখন আঁখির কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। যেন মিস্টার বাম্বলের অনাথ আশ্রমে অলিভার টুইস্টের মতো তাকে কেউ একটা অন্ধকার কয়লা কুঠুরিতে আটকে রেখেছে রাত ভোর। চরম একটা কষ্ট পাক দিয়ে দিয়ে উঠছিল তার গলা বেয়ে।

 রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাইমারি সেকসানে পড়ার সময় ক্লাস থ্রি থেকে সপ্তাহে একটা করে বই বাড়িতে এনে পড়ার অনুমতি ছিল আঁখিদের। শ্রেণী শিক্ষিকা মঞ্জুদি প্রথমবারের জন্য আঁখির হাতে তুলে দিয়েছিলেন অলিভার টুইস্ট বইখানা। সেই এক সপ্তাহে বইটা মোট তিন তিনবার শেষ করেছিল আঁখি। 

শেষ পর্যন্ত অবশ্য সুমেধা গোমসকে জেনেবুঝেই টাকাটা দিয়েছিল আঁখি। আর কোনও দিনও ফেরৎ পাবার আশা না করেই।

ডিসেম্বরে বড়দিনের কেক আর রোজকেক দিতে এসে সুমেধা বলেছিলেন, “একটু অসুবিধায় আছি তাই। তোমার টাকা মার যাবে না এটুকু বলে দিলাম!”

দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাস এল আবার চলেও গেল। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হয়ে গেল কলকাতা বইমেলা। জেলার মানুষ পথ উজিয়ে এক আধ দিন সামিল হত সেই আনন্দ যজ্ঞে। আঁখি সেদিন দুপুরে তৈরি হয়ে সুকোমলের অপেক্ষায় সামনের বারান্দায় পায়চারি করছে। সামনের রাস্তাটায় তখন সুমেধা গোমস চলেছেন। হাতে  বড় বড় দুই ঝোলা ব্যাগ। 
চোখাচোখি হতে তিনি বলেন, "ওই একটু বইমেলা চললাম। সারা বছরের স্টক মজুত করতে হবে তো! গেছিলে না কি এবার?"
হাত ঘড়ির দিকে তাকায় আঁখি। একঘন্টা আগে সুকোমলের আসার কথা! সে ব্যাটা তো লাপাতা। ফোনও বেজে যাচ্ছে। ধরেও না সে একবার। নির্ঘাত ওটিতে ফেঁসেছে! 
কাঁদো কাঁদো মুখে আঁখি বলে, "আমাদেরও আজ যাবার কথা ছিল। কিন্তু....."
সেবার একদিনও বইমেলায় যাওয়া হয়নি আঁখির।
সুমেধা গোমস মুখে আদিখ্যেতা দেখালেও প্রাণে ধরে কাউকে তাঁর বইপত্র পড়তে দিতেন না। সারাটা শীতকাল  মাথায় আঁচল বা চাদর দিয়ে রোদ আড়াল করে ছাদে ইঁট পেতে বসে বই পড়তেন। এই সব সময়গুলোতে আঁখির মনে সুমেধা গোমসের জন্য কেমন যেন এক ভালোবাসা ভুস করে ভেসে উঠত মগ্ন চড়ার মতো।
দেখতে দেখতে দুর্গাপূজা এল। বিজয়া দশমী সারতে নারকোল ছাপা আর রসগোল্লা নিয়ে আঁখি সেই প্রথমবারের জন্য সুমেধা গোমসের বাড়ি গেছে। পুরাতন কাঠের ফ্রেমে কাঁচ লাগানো আলমারিতে থরে থরে দাঁড়িয়ে সুনীল, বুদ্ধদেব গুহ, নারায়ণ সান্যাল প্রমুখেরা। 

"বইমেলার সংগ্রহের কত অংশ ফুরালো?" জানতে চায় আঁখি।

কিশোরী সুলভ মৃদু হাঁসি ঠোঁটে টাঙিয়ে সুমেধা বলেছিলেন, "টেনেটুনে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালাতে হবে তো!"

বছর ঘুরে আবার প্রখর গ্রীষ্মের দিন এসে গেল। মে মাসের শেষ দিকে এক ভোরে সুকোমলের ফোনটা বেজে উঠল। সুকোমলের ফোন বাজার কোনো সময় অসময় নেই। মাঝরাতেও পেসেন্টের ফোন আসে। এতেই আঁখি অভ্যস্ত।

প্রথমটা গা করেনি আঁখি। কিন্তু সুকোমলকে ধড়মড়িয়ে বিছানা থেকে নামতে দেখে আঁখি জানতে চায়, "কার কী হল গো? বেরতে হবে না কি?"

"পাশের বাড়ির মেসোমশাইয়ের ফোন। মাসিমা বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গেছেন।"

আঁখিও সুকোমলের পেছন পেছন দৌড় লাগায়। 
বিছানায় শোওয়ানো মানুষটার দেহ সামান্য ডান কাতে হেলে। ডান কষ দিয়ে গেঁজলা গড়িয়ে আছে। সুকোমল স্টেথো দিয়ে পরীক্ষা করে কার্ডিয়াক মাসাজ দিল খানিক। 
সুমেধা গোমস তাঁর সাধের সংগ্রহ ফেলে রেখে চিরতরে বিদায় নিলেন।

সুমেধা গোমসদের বাড়ি বিক্রি হয়ে গেল। 
মেসোমশাইয়ের একলা খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। ব্যাঙ্গালোর প্রবাসী ছেলে বাবাকে নিয়ে চলেছে সঙ্গে করে। বেশির ভাগ বই প্যাকিং শেষ। 
মেসোমশাই আর তন্ময়ের সঙ্গে শেষবারের জন্য দেখা করতে গিয়েছিল আঁখি।
মেসোমশাই জানতেন আঁখির কাছ থেকে সুমেধা গোমসের ধারের ব্যাপারটা।
তাই হয়ত বা বিদায়কালে কী মনে করে বলেছিলেন, "আর হয়ত দেখা হবে না। সুমেধার কিছু ঋণ রয়ে গেল। কিছু মনে যদি না করো, ওই আলমারি থেকে কয়েকটা বই পছন্দ মতো নাও মা।"

আপত্তি জানায়নি আঁখি। অবশিষ্ট বইয়ের একটা একটা করে হাতে তুলে নিয়ে দেখতে থাকে আঁখি। একজন মানুষের যত্নে গড়ে তোলা সংগ্রহ। এমনটাই এ পৃথিবীর নিয়ম। আজন্মকাল কষ্টার্জিত সম্পদ সব মহাকালের হাতে গচ্ছিত রেখে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হয় পিতার গৃহে, আপন আলয়ে। 

হঠাৎ একটা চটি বই হাতে নিয়ে থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে আঁখি। রাশিয়ান ভস্তক পাবলিকেশনের বহু পুরাতন একখানা এডিসান। কভার পেজের অসাধারণ জলরঙা চিত্রের পটভূমিতে লেখা  'পাখনায় গান গায়' নামটার উপর  আলতো করে হাত রাখে আঁখি।
আর ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলায়। মেসোমশাই আর তন্ময়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ধীর পায়ে ফিরে চলে আঁখি। 

পেছনে মেসোমশাইয়ের গলা ভেসে আসে, "ভালো থেকো মা। আর মাত্র ওই একটা বই! আর নিলে না যে!"

আঁখি মনে মনে বলেছিল, এ বইয়ের দাম যে অমূল্য।

দ্রুত বাড়ি ফিরে 'পাখনায় গান গায়' বইটা বুকে চেপে সম্মোহিতের মতো বসে থাকে আঁখি। কভার পেজে বিস্তীর্ণ তৃণভূমির বুক ছুঁয়ে আছে একটা নদী। পার ছোঁওয়া থইথই জলে ঝুঁকে আছে সবুজ লম্বাটে পাতা, কাশ জাতীয় গাছ। তাদের মাথা জুড়ে সাদা কাশের মতোই নাম না জানা বিদেশি ফুল। নদীর হাওয়ায় মাথা ঝুঁকিয়ে। আর নদীর অনতিদূরে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে দুই বালিকা। ভালিয়া আর ভাসিয়া। 
এই বইটার সঙ্গে কতদিন একসঙ্গে যাপন করেছে নবনীতা ও সে নিজে। তারা দুজন! ছবির ভাসিয়া ভালিয়ার মতো তারাও পরস্পর হাত ধরাধরি করে একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার করেছে যে কতবার তার ইয়াত্তা নেই কোনো।

 আঁখিরা তখন ক্লাস ফোরে নবনীতাকে নিয়ে ওর বাবা মা বোম্বে চলে গেল। ছোটবেলায় আঁখি অত বোঝেনি কর্কট রোগের কী মাহাত্ম্য। যাবার দিন আঁখি তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় 'পাখনায় গান গায়' বইটা নবনীতাকে দিয়ে বলেছিল,
"এই বইটা আমাদের একসঙ্গে কাটানো অনেক অনেকখানি সময়ের সাথী। আমি জানি এটা তোরও খুব প্রিয়। তুই সঙ্গে করে নিয়ে যা। তাহলে যতদিন না ফিরে আসিস আমরা জন্য মনখারাপ করলে এটা উল্টেপাল্টে দেখিস।"

"তোরও তো এটা খুব প্রিয় রে।"

"তাতে কী। তুই রাখ এটা। আমি আর একখানা কিনে নেব রে।"

 নবনীতা আর ফেরেনি। 
রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ততদিনে ভোস্তক পাবলিকেশনের দিনও শেষ।
এরপর বাবার সঙ্গে কত বইয়ের দোকানে আর কতবার বইমেলায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আঁখি। কোথাও মেলেনি আর।

শেষপর্যন্ত আর্ট পেপারে আঁকায় ও লেখায়  নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে আঁখি তার প্রিয় 'পাখনায় গান গায়।' আসলে সে বই যে আঁখি আর নবনীতার যৌথ যাপনের রঙিন শৈশব স্মৃতির দলিল। স্মৃতির ঝাঁপি থেকে এক একটা গল্পের হেড পিস তুলে এনে রঙে তুলিতে ভরিয়ে নিয়েছিল হাতে সেলাই করা তার 'পাখনায় গান গায়।'

বিছানার উপর আসল বই আর অনুলিপি পাশাপাশি মেলে রেখে সন্তর্পণে চোখের কোণা মুছে নেয় আঁখি। একদিন ঠিকই সব অপেক্ষার শেষ হয় ।

বৈশাখী ২০২৪