"আমার একমাত্র ছেলে মোহন তো পড়াশোনা শেষ করে বহুদিন বেকার বসে ছিল। ঠিক কোভিডের সময়ই কাজ পেল।" "বাহ্, বাহ্, খুব ভালো। আপনি ভাগ্যবান লোক, মশাই। কোভিডে তো ঘরে ঘরে কাজ চলে গেছে। আমার ছেলেটারও কারখানা বন্ধ হয়ে গেল সে সময়। আমি আবার দুই সন্তানের বাপ। ছেলের চাকরি আর মেয়ের বিয়ে এই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না, জানেন!" পরদিন দেখা হতেই একটা কাগজের ঠোঙা মোহনের বাবার দিকে এগিয়ে ধরেন তমালীর বাবা। বলেন, "সিঙ্গারাটা গরম আছে, খেয়ে নিন। এই ভাজল। দেখেই এমন লোভ লাগল যে, কিনে নিলাম।" তারপর ঝুলে পড়া কাঁধের ব্যাগটা উপরে ঠেলে তুলে বলেন, "মেয়েটার জন্য ভালো পাত্র খুঁজছি, বুঝলেন তো? যদি কিছু মনে না করেন, মোহন কি অবিবাহিত?" মুচকি মুচকি হাসেন মোহনের বাবা। সিঙ্গারায় কামড় বসিয়ে একদিকে ঘাড় নাড়েন। তারপর ধোঁয়াওঠা আলু-বাদাম-সব্জির টুকরোগুলো গালের এপাশে ওপাশে ঘুরিয়ে বলেন, "হুম। বাপ বলে বলছি না, মোহনের মতো ছেলে লাখে একটা মেলে মশাই। খুব খাটতে পারে ছেলেটা। শুধু বাঁধা ধরা ডিউটি নয় ওর।" "এটাই তো বয়স দৌড়ঝাঁপ করে কাজ করার। তা কত বয়স হল?" "এই তো ফাল্গুনে তিরিশে পড়েছে।" "প্রেম টেম করে নাকি? আজকালকার ছেলে..." "না, না। আমরাও তো ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছি। ভালো মেয়ে পেলেই…" "তাহলে একদিন ছেলেকে নিয়ে আসুন না আমার বাড়িতে।" কয়েকদিন পর মোহনের বাবা তমালীদের বাড়িতে বসে সমানে ফোন করে চলেন ছেলেকে। "কী রে, আর কত দেরি হবে? আমি আর তোর মা পৌঁছে গিয়ে বসে রয়েছি যে!" "আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকছি, বাবা।" "বুঝতেই পারছেন এমন কাজ..." বিড়ি খাওয়া দাঁতের কালো ছোপ উঁকি মারে মোহনের বাবার। কনে দেখা আলো মুখে মেখে তমালী ছাদের একপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মোহন চায়ে চুমুক দিচ্ছে। তমালী জানে, তার বাবা সবকিছুই জেনে নিয়েছে। তবু কী প্রশ্ন করবে ভাবতে ভাবতে বলে, "আপনার কাজটা আসলে কী?" মোহন হাসে। বলে, "সারাদিন বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আগুনের কাছে রেখে আসা।" "মানে?" অবুঝ চোখে তাকায় তমালী। "আমি শববাহী গাড়ির চালক। দেখুন, আপনাকে নিয়ে পঞ্চান্ন নম্বর পাত্রী দেখতে এসেছি। আপনারও যদি আমার এই কাজে কোনো আপত্তি থাকে, বলে দিতে পারেন!" মানুষের জীবন আসলে অনেকটা পুরনো ক্যাসেটের মতো, কারণে - অকারণে জড়িয়ে যায়। তমালী বলে, "পথে পথে ঘুরে শিল কাটার কাজ করেন আমার বাবা। আজকাল তো তেমন কাজই পান না..."