কিলার

বেহালা, কলকাতা ১৪১


কলেজে পরিবেশ ও সমাজ সচেতনতা নিয়ে বেশ বড়সড়,লম্বা চওড়া একটা লেকচার দিয়ে আজ বেশ ক্লান্তই সুদীপা। সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি ,হুড়োহুড়ি আর ব্যস্ততা। তবে বিশেষ করে এইসব দিনগুলোতে সুদীপার ব্যস্ততা থাকে গগনচুম্বী। কারণ, বিষয়ভিত্তিক কোনও লেকচার দিতে গেলেই তার প্রস্তুতির জন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই রাত জাগতে হয়। সারাদিন কলেজের ব্যস্ততা কাটিয়ে এই রাতগুলোতেই তো নিজের লেকচারের স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে সময় পায়। তাই লেকচার দেওয়ার শেষে কিছুটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে। আসতেই অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু মালবিকার ফোন। ব্যস, কাজকর্ম সব শিকেয় তুলে আবারও রোজকার রুটিনের মতো ব্যস্ত হয়ে উঠল সুদীপা ফোনালাপে। সারাদিনের শত ক্লান্তির মাঝেও বন্ধু মালবিকার সঙ্গে ফোনালাপটা যেন টনিকের মতো কাজ করে সুদীপার কাছে।
স্বাস্থ্য সমাচার দিয়ে শুরু হয়ে কর্মক্ষেত্রের হাল হকিকত, সংসারের নিত্যনতুন ফ্যাঁকড়া, কাজের মাসি থেকে ধোপার রোজনামচা, আর সিরিয়ালগুলোর একঘেয়ে প্যানপ্যানানি সেরে মগ্ন সুনিপুণ বার্তালাপ যখন রেসিপির ইনগ্রেডিয়েন্টস - এ ঘোরাফেরা করছে, ঠিক তখনই বেডরুমের জানালা দিয়ে সুদীপার চোখটা চলে গেল তাদের আবাসনের অদূরের বাচ্চাদের পার্কটির দিকে।
দেখল, তিন কী চার বছর বয়স হবে ছোট্ট একটি বাচ্চা ছেলে, অন্য বাচ্চাদের ঠিক বিপরীত একটি কাজ করছে চুপচাপ,  শান্তভাবে। বাচ্চাটি তার খালি চিপস্এর প্যাকেটটিকে ডাস্টবিনে ফেলেছে। সেইসঙ্গে আশেপাশের অন্য বাচ্চাদের  ফেলে দেওয়া পরিত্যক্ত লজেন্স, বিস্কুট চিপসের প্যাকেটগুলিও কুড়িয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলছে। দৃশ্যটি দেখে প্রথমে একটু চমকে পরক্ষণেই একটু থমকে দাঁড়াল সুদীপা। মনটা প্রথমে ভালোলাগায় আপ্লুত হয়ে উঠলেও পর মুহূর্তেই বেশ বড় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ল। মাত্র এইটুকু বয়সে ছোট্ট বাচ্চাটি তার পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে যতটা সচেতন, সে বা বড়রা কি ঠিক ততটাই সচেতন?
দেখল,স্নান করবে বলে বাথরুমে জল চালিয়েছিল,সেই জলে বালতি ভরে গিয়ে কখন থেকে না জানি গড়িয়ে পড়ছে, দরকার নেই তবুও প্রতিটি ঘরে লাইট -ফ্যান চলছে, টিভি চলছে। মালবিকা এই আবাসনেরই বাসিন্দা। রোজ দেখা হয়,গল্প হয়, তবুও রোজ রোজ দীর্ঘ এই ফোনালাপ... তাছাড়া পায়ে হেঁটে যে পথ অতিক্রম করা যায় তার জন্য যখন তখন স্কুটি বের করা, পলি প্যাক ব্যবহার করা...। প্রকৃতি,পরিবেশ ও নিজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্টে সেও নির্বিকারচিত্তে যোগদান করে চলেছে...
এই প্রথমবার তার মনে হল,পরিবেশ সুরক্ষা,পরিবেশ বাঁচাও নিয়ে হামেশা লেকচার দিলে কী হবে,সে তো আসলে সত্যিই একজন  কিলার, একজন সাইলেন্ট কিলার।
ফোনের রেড বাটনটা আস্তে করে টিপে দিল সুদীপা...

বৈশাখী ২০২৪