সহপাঠী

নিউ জার্সি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র

অচেনা নম্বর থেকে ফোন সচরাচর ধরেন না অতনু। কিন্তু এই নম্বরটা থেকে প্রতিদিন ফোন আসছে। 
“হ্যালো, চিনতে পারছিস?”
স্কুলে আবৃত্তিখ্যাত এ গলা চিনতে এত বছর পরেও অসুবিধা হয় না। কিন্তু সেটা ফোনের ওপারের মানুষটাকে জানতে দেওয়া ঠিক নয়।  
“আমি তো ঠিক চিনতে, মানে…”
“আরে আরে তোর ব্রেন ভীষণ ভ্যালুয়েবল। তুই মাথায় অত চাপ নিস না, আমি অভিজ্ঞান। সেই স্কুলের “ব্যাকবেঞ্চার!”
একটা ছদ্ম উত্তেজনা আনলেন গলায় অতনু। “আরে তুই? কতদিন পর, কেমন আছিস? একেবারে চিনতে পারিনি।”
“তুই এখন যে চিনতে পেরেছিস এই বেশি। কত বড় লেখক তুই। বহু কষ্টে তোর ফোন নম্বর পেলাম। কী দারুণ লিখছিস।”
ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসছে একঝুড়ি প্রশস্তি। অতনুর মুখ দিয়েও বেরোচ্ছে অন্যমনস্ক হুঁ হ্যাঁ। কিন্তু মন ভাবছে অন্য কথা।
ঠিক কী কারণে অভিজ্ঞান এতদিন পর ফোন করছে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। অতনুর নাম হয়ে যাবার পর থেকে অনেক চেনা অচেনা খেজুরে আলাপী উঠতি লেখক কথা বলতে চায়, কেউ বা চায় রিভিউ। এসব কোনও রকমে কাটিয়ে যান তিনি। মূর্খের দল বোঝে না যে ভালো লিখলে এমনিতেই নাম হবে, তার জন্য বড়ো লেখকের সাহায্যের দরকার নেই।।
অতনুকে কোনদিন কারোকে তেল দিতে হয়নি। প্রথম উপন্যাসের রিভিউ লেখেন এক্কেবারে অচেনা এক প্রৌঢ়। সত্রাজিৎ নামের সেই ভদ্রলোকের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রায়ই ঘুরে আসেন অতনু। ভদ্রলোক লেখেন ভালো। পড়াশোনা আছে। মূলতঃ পাঠ প্রতিক্রিয়া আর প্রবন্ধ। তাঁর প্রবন্ধের তথ্যে ভর করে কত গল্পই যে লিখেছেন অতনু। 
অভিজ্ঞান স্কুলেও খানিক গায়ে-পড়া ছিল। আজকাল নাকি লেখালেখি করে। জানা ছিল না। সেদিন আরেক সহপাঠী অর্চিস্মানের সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল। সে-ই বলল বই বেরিয়েছে। আজকাল তো রাম শ্যাম যদু সবাই লেখক। 
“তোর সময় নষ্ট করছি, না? আসলে তোর নতুন বইটা পড়ে এত ভালো লাগল যে আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না। ভালো থাকিস।”
ঘোর ভাঙল অতনুর। এবার একেবারে কিছু না বললে খারাপ দেখায়। বললেন, “তোর বইটা কিনব ভাবছি। শুনলাম ভালো লিখেছিস।”
“প্রথমেই বই কিনবি? এক কাজ কর ফেসবুকে আমার প্রোফাইলে গিয়ে অন্য লেখা পড়ে দেখ আগে। ও হ্যাঁ, ওখানে অবশ্য ছদ্মনাম। ফেসবুক আর ছাপা বইতে একনামে লিখি না। “ফেসবুক রাইটার” বিশেষণে কুখ্যাত হতে চাইনি। তবে তোর কাছে তো গোপন করার কিছু নেই। সত্রাজিৎ নামে প্রোফাইল। আমার পরলোকগত দাদুর নামে। তিনি অবশ্য লেখক নন, বিদ্বান পাঠক ছিলেন। আমার সাহিত্যগুরু। তোকে মুখবইতে নিমন্ত্রণ পাঠাব। আজ রাখি।” 
কেটে যাওয়া মোবাইলটা কানে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলেন অতনু।  

বৈশাখী ২০২৪