অবসরের আর মাত্র দুই বছর বাকি ছিল,এসময়েই এক দুর্ঘটনায় মানসিক স্থিতি টলে গেল নিখিলবাবুর। সারাজীবন সৎ ভাবে কাটিয়ে মতিভ্রম ঘটল বিদায় বেলায় এসে। সহকর্মীদের পাল্লায় পড়ে কিছুটা আর বাকিটা প্রয়োজনের তাগিদে। আপামর চাকুরিজীবী মধ্যবিত্তের স্বপ্ন থাকে অবসরের পূর্বে মেয়ের বিয়ে বা ছেলের চাকরির। শেষ বয়সের এই সুখ বা নিশ্চিন্ততা যখন নিজে থেকে ধরা দেয় না তখন সততার বলি চড়াতে হয় বৈকি। তবে সহকর্মীদের ফাঁদে এভাবে আটকে যাবেন বুঝতে পারেননি। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে ঘুষের টাকা হাতবদল করেছেন নিখিলবাবু। সেই টাকার বিন্দুমাত্র করায়ত্ত না করতে পারলেও কারাবন্দি হতে হয়নি। হারিয়েছেন নিজের চাকরিটা। খোয়া গেছে মান সম্মান আর মানসিক ভারসাম্য। আজকাল পার্কে এসে একা চুপচাপ বসে থাকেন। পুরনো ঘটনাবলি খাপছাড়া ভাবে স্মৃতিতে ধরা দেয়। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবরা সমালোচনা করে, সমবেদনা জানায় কিন্তু কেউ সঙ্গ দেয় না। সেদিনও পার্কে একা বসে থাকতে থাকতেই নজরে পড়েছিল ঘটনাটা। রঙিন আলখাল্লা পরা লোকটা বেদির ওপরে উঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছিল! কয়েকটা বাচ্চার কানমলে টাকা বের করে এনে সেটা দিয়ে আবার ফুল বানিয়ে দিচ্ছিল। ব্যাপারটা খুব মনে ধরেছিল নিখিলবাবুর। বাড়ি ফিরেই বৌকে বলেছিলেন, "টাকা সব ওর কাছে, আর চিন্তা নেই।" "কার কাছে গো!" বৌ বিস্মিত হয়েছিল। "ঐ যে মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে! কানমলা দিলেই টাকা বেরিয়ে আসছে যদিও পরে সেগুলো ফুল হয়ে যাচ্ছে।" "কী ফুল বাবা, ডুমুরের? টাকা নেওয়ার ছবি উঠল অথচ টাকা পাওয়া গেল না!" সাতাশ বছরের বেকার ছেলের কথায় ঝরে পড়েছিল শ্লেষ। "মতিভ্রম! সৎ মানুষটা তোদের কথা ভেবেই…" কথা শেষ না করেই মুখে আঁচল চাপা দিয়েছিল বৌ। "আমাদের অপবাদ, অসম্মান ছাড়া কিছু জুটলো কি?" ছেলের গলায় তখন ক্ষোভ। নিখিলবাবু বলেছিলেন "শুধু ওকে ধরব, তারপর দেখিস কানমলা দিলেই টাকা আসবে, সব ফিরিয়ে দেব তখন।" ঘুমের স্বপ্ন আর দিবাস্বপ্ন মিলেমিশে একাকার করে নিখিলবাবু আজও খুঁজে চলেন আলখাল্লার ভিতরের মানুষটাকে। কী ম্যাজিক জানে কে জানে? কিছুতেই ধরা দেয় না। শুধু শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাশিরাশি অবৈধ টাকার হদিস পাওয়া যায়। আজকাল বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেই অকুস্থলে পৌঁছে যায় এক উন্মাদ, চিৎকার করে বলে "ম্যাজিশিয়ান কে দেখেছো? ওকে এখনি ধরতে হবে নইলে সব টাকা ফুল হয়ে যাবে!" এড়িয়ে যেতে গিয়েও দুচারজন পথচলতি মানুষ বলে যায়, "কী কান্ড! এত টাকা কোত্থেকে এল?" নিখিলবাবু অপরাধীর মত অনুশোচনার হাত তোলেন। মনে মনে বলেন, "আমিই রেখেছিলাম।" এগুলো ক্যামেরাবন্দি হয় না।