“ডোন্ট হ্যাভ ইউ টাইম টু থিংক!” “আহ! তুই কী মানুষ!” প্রতীক চমকে গিয়ে বলল, “কেন রে কী হল!” “জিজ্ঞেস করছিস আবার! আমার চোখ দুটো যেত একটু হলেই!” “আমি তো কিছু করিনি।” “না করোনি!কনুই দিয়ে চোখে গুঁতো দিলি!” “আমি কখন এসব করলাম!” “ঘুমের মধ্যে এতো কথা বলিস কেন রে!” “ও ফাইনম্যান এসেছিলেন, স্বপ্নে কিনা জানি না!” “তুই কিন্তু ক্রমশ সাইকো হয়ে উঠছিস!” “সাইকো মানে বুঝিস?” “রাত তখন তিনটে হবে। এই সময় ফোটন- কণারা আসে। কী গতি ওদের! হওয়াটাই স্বাভাবিক!” এবার গৈরিকা এলো চুল ঠিক করে নিয়ে বলল, “মাঝ রাতে ফোটনকণার ক্লাস করব! আমার অফিস আছে!” “আমারও কী নেই!” “তোর তো হাওয়া অফিস। কোন টার্গেট নেই। অ্যাচিভমেন্ট নেই। শুধু ওয়েদার ফোরকাস্ট করা।” প্রতীক বলল, “ওটা সামান্য কাজ! এক সময় মানুষ সব কিছুকে ভয় পেত অকারণে।” “তোদের আগে পিঁপড়ে টের পায় ভূমিকম্প হবে কিনা!” “রাইট, কিন্তু তুই তো বিজ্ঞানটা বুঝছিস না।“ “খুব বুঝেছি। তুই এতো নাস্তিক কেন রে!” “আমি ঈশ্বর কণায় বিশ্বাস করি। অবাঙমানসগোচরম।” “ঈশ্বর কণা একটা অনুমান।” “ঈশ্বরও তো অনুমান।” “কিন্তু সেই অনুমানে রোমান্টিকতা আছে।” “এখানেও আছে।” “কিস্যু নেই!” “আছে।” “আমি বলছি নেই, তো নেই!” “এটা তো হিটলারি তত্ত্ব। গা-জোয়ারি।” “চা খাবি!” “ফ্যান্টাস্টিক! এই দেখলি তো ঈশ্বর কণা তোর মধ্যে কেমন ফ্যান্টাসি আনল! তুই রাত তিনটেয় চা করে দিবি আমায়!” “আগে করিনি! গাধা,গোরু!” “লেডারম্যান বাইবেল থেকে গল্প দিয়ে বোঝালেন ঈশ্বরকণা কেন!” হেমন্তের কুয়াশা পাতলা হতে ঢের দেরি। ওরা বাইরের বারান্দায় এল। চা নয়, কফি বানাল গৈরিকা। “কেমন হয়েছে রে!” “অভূতপূর্ব!” গৈরিকা খুব খুশি হল। সে সত্যি এত ভালো কফি বানাতে জানে! “ঠিক আছে শুনব, কী বললেন লেডারম্যান!” “টাওয়ার অফ ব্যাবেল। মানুষ হরেক রকমের কিন্তু ভাষা এক। তারা ঠিক করল সিঁড়ি বানাবে যা পৌঁছে দেবে স্বর্গে!” গৈরিকা বলল, “ঈশ্বর ভাষা আলাদা করলেন। একতাবোধ নষ্ট হয়ে গেল রে!” “রাইট। লেডারম্যান যোগ করলেন, মানুষের দুঃখ দেখে বিধাতা মর্তে এলেন। বিশৃঙ্খলা কমিয়ে এনে হাতে দিলেন অতীব সুন্দর ঈশ্বরকণা!” “রেপ্লিকা? তাঁর সৃষ্টির মডেল!” “বলতে পারিস!” আস্তে আস্তে অন্ধকার কেটে একটু আলো ফুটল। প্রতীকের মা ডাক দিলেন, “বউমা!” “যাই মা। আমার বেশ উপকার করলে। এখন কিচেনে যেতে হবে। এবার থেকে এটাই আমার কাজ করার নিউ টাইম টেবিল হবে।” “সকালের রান্না শাশুড়ি করেন। গৈরিকা সাহায্য করে। মাল্টিন্যাশনাল ফার্ম। টার্গেট আর অ্যাচিভমেন্ট। গাড়ি আসে। কখনও কখনও ওর গাড়িতে প্রতীকও যায়। স্বর্ণেন্দুও উঠেছে কয়েকদিন। প্রতীকের চেয়ে স্মার্ট, হ্যান্ডসাম। প্রতীকের কোন অধিকার বোধ নেই। গৈরিকা ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেলেও যেন কিছুই না। “আমি যদি আর না ফিরি কী হবে!” “তুই ফিরবি, আমি জানি। আমার বিশ্বাস রয়েছে।” “অত বিশ্বাস ভালো নয়। ধর ফিরলাম না। কী করবি তুই!” হাসল প্রতীক। বলল, “খুঁজব তোকে।” “কী ভাবে! তুই তো আস্ত গাধা - বাইক, গাড়ি কিছুই চালাতে জানিস না।” “সাইকেল চালাতে তো জানি।” “তুই আমাকে সাইকেল করে ফিরিয়ে নিয়ে আসবি! আমি উঠব না!” আবার হাসল প্রতীক। বলল, “সাইকেল কী খারাপ! আগেকার দিনে কালেক্টর সাইকেল চড়তেন!” “তুই কোন যুগে বাস করিস!” “জাপাানে,জার্মানিতে মানুষ সাইকেল চড়ে। দূষণ কম হয়। আমাদের দেশেও তাই করা উচিৎ!” “আমি জানি,তুই কেন এমন বলছিস!” “জানিস! কী জন্য বলছি!” “ফোটন কণারা তাহলে স্পষ্ট হবে!” “হ্যাঁ,ওরা ভর যুক্ত হলে দেখা গেলেও যেতে পারে!” গৈরিকা বলল, “ভরহীন হলে আলোর গতিপ্রাপ্ত হয়!” সত্যি সত্যি গৈরিকা একদিন ফিরল না। ভয়ংকর দুর্ঘটনা ওকে কেড়ে নিল। এলোমেলো হয়ে গেল প্রতীকের জীবন। কোন কিছু আর ভাল লাগে না। অফিসও যায় না। মা বলছে,আবার বিয়ে করতে। প্রতীকের ইচ্ছে করে না। কে ওকে বকবে! এখন আর ফোটন কণা দেখতে ইচ্ছে করে না। ঈশ্বর কণাও দেখে কী হবে! একাই কাটে প্রতীকের। কখনও ভুল হয়,মনে হয় ও ডাকছে, ‘ঠিক করে শুবি!’ এই করে হেমন্ত কবে চলে গেছে। মাঘ মাস। ছাদে উঠেছে প্রতীক। ঠাণ্ডা মালুম হয় না। এতো সে ভালোবাসত! অনেক দিন পর বাইরেটার দিকে তাকাল। কুয়াশার মধ্যেও দেখা যাচ্ছে এক বিচিত্র কণাকে।যেমন উজ্বল, তেমনি তার গতি। অনেক দিন পর নিজেকেই প্রশ্ন করল, ঈশ্বর কণা! সেই তো অন্য কণাদের ভরের ডিস্ট্রিবিউশন করে। কী অপূর্ব! কান্না পেল খুব। কাঁদলও প্রতীক। বিভ্রম ভাঙল। কণাটা ছিল ভালোবাসার রেণু। হারিয়ে যাওয়া সেই রেণুকে ফিরিয়ে দিয়ে ঈশ্বর কণা প্রতীককে নতুন ভর দিল। পরদিন থেকে এক নতুন মানুষ হল প্রতীক। আবার হয়তো মানুষও নয়,ফোটন কণা। যা জুড়ে যেতে চাইছে ঈশ্বর কণা বা ভালোবাসার সঙ্গে।