পরমা আজ ভেবেই নিয়েছিল কথাগুলো পূর্ণেন্দুকে বলবে। পূর্ণেন্দু যোগাম্যাটের ওপর বসে টানা ঊনচল্লিশ মিনিট সাতাশ সেকেন্ড ধরে প্রাণায়ামের পর এখন ওম উচ্চারণ করছে। এটাই নাকি সৃষ্টির আদি শব্দ, এই শব্দের তরঙ্গ ব্রহ্মাণ্ডকে একসূত্রে বাঁধে, শান্তি দেয়। অশান্তি কী কম জীবনে! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাদের দাবি দাওয়া বেড়েই চলেছে। ব্যাটারা আজ মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের সামনে ধর্নায় বসেছিল। রাজনৈতিক অধিকার চায়, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র তৈরি করে ফেলেছে। ওদের প্রতিনিধি রোবট সিরিয়া ওয়ান একজন সাহিত্যিক। কুড়ি হাজার কোটি শব্দ আছে ওর মধ্যে। তিনখানা বই বেস্টসেলার হয়ে গেছে। জোয়ান অফ আর্ক থেকে সমুদ্রের নিচের সার্ক, ইলিয়াড ওডিসি থেকে ইবন বতুতা, গ্রীক ট্রাজেডি থেকে ডার্ক কমেডি সব মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে। এর সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা মুশকিল। মাঝে মাঝে গান্ধীজির এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ থেকে ডায়লগ ঝেঁপেছে.. “…nothing once begun should be abandoned unless it is proved to be morally wrong.” আমাদের এই আন্দোলন আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য। কথাগুলো বলার সময় সিরিয়া ওয়ানের ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি বালি হাঁসের মতো উড়ে গিয়েছিল, পূর্ণেন্দুর মোটেও সেটা ভালো লাগেনি। পরমা জানলার পর্দা সরিয়ে ফলসা গাছের ডালের উপর বসে থাকা চারখানা চাঁদকে দেখছিল। ঠিক যেন চারটে লক্ষ্মী পেঁচা, একবার হুস করলেই উড়ে যাবে। গত নভেম্বরে ওগুলো আকাশে পাঠানো হয়েছে। কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণে জোয়ার ভাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য, তা না হলে কলকাতা এতদিনে জলের তলায় তলিয়ে যেত। ভিক্টোরিয়ার পরি তখন হয়ে যেত জলকন্যা আর মেয়র হিসেবে শ্রীযুক্ত পূর্ণেন্দু পালের ধুতরোর বীজ খেয়ে পাগল হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না। “একটা কথা বলব গো, তোমার সময় হবে?” সোনালি রঙের চশমাটা সবে নাকে গলিয়ে বাথরুমে ঢুকেছিল পূর্ণেন্দু। বহুদিন হল কথা কম বলে পরমা, দামি স্বচ্ছ পলিপ্রপিলিন দিয়ে যেন সব সময় নিজেকে ঢেকে রেখেছে, নাগাল পায় না পূর্ণেন্দু। “হ্যাঁ বলো না।” “বাজারে কোথাও গন্ধরাজ লেবু পাচ্ছি না। কাল একটু শামি কাবাব বানাব ভাবছিলাম, তোমার তো অনেক কন্টাক্টস, একটু জোগাড় করে দেবে? নাহ্, আজকেও কথাটা বলে উঠতে পারল না পরমা। এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে আটবার এল ছেলেটা। প্রথম যেদিন এল সেদিন পরমা ভাবল বোধহয় কাশ্মীরি শালওয়ালা, কাঁধে যে ব্যাগটা আছে সেখান থেকে এক্ষুনি লাল রঙের পশমিনা বের করে দেখাবে, তারপর পরমা দরাদরি করতে বসবে। বাদামের খোসার মতো চুলের রং, চোখের মণি নীলচে সবুজ। সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার হিন্দি ডাবিংএ যেরকম হয়.. মানে ঠোঁট নড়ে তামিলে কথা বেরোয় হিন্দিতে সেরকমই এই ছেলেটার। ও কথা বলে রাশিয়ানে, পরমা শুনতে পায় বিশুদ্ধ বাংলায়। আজব ব্যাপার! “নমস্কার, আমার নাম পুশকিন.. আমি আসছি ভবিষ্যৎ থেকে!” অন্য কেউ হলে মুখের উপরই ধড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিত পরমা.. কিন্তু এই ছেলেটাকে দেখে যে কী হল কে জানে! “ভবিষ্যৎ থেকে আসছ মানে? “হ্যাঁ, আমি একশো বছর পরের পৃথিবীর স্পেস সাইন্টিস্ট। নাসার হয়ে কাজ করি। আতাকামা মরুভূমিতে আমাদের একটা রেডিও টেলিস্কোপে হঠাৎ পৃথিবীর কাছাকাছি একটা ঘূর্ণায়মান 'ওয়ার্ম হোল’ ধরা পড়ে। এতদিন মহাজাগতিক ধুলো বা কসমিক ডাস্টে সেটা দেখা যাচ্ছিল না। আমাকে ওখানে পাঠানো হয়। ওখানকার তীব্র অভিকর্ষ সময়কে বেঁকিয়ে চুরিয়ে দেয়। সময় তখন অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এই সরলরেখার মতো না হয়ে একটা লুপের মত হয়ে যায় ওই ওয়ার্ম হোল এ। আলোর থেকেও বেশি গতিতে ছুটতে থাকা আমার মহাকাশযানটা সময়ের চক্ররেখায় ঢুকে যাওয়ায় আপনার পৃথিবীতে চলে এসেছি। এখানে কী মাস চলছে?” পরমা কিছু সেকেন্ডের জন্য ভ্যাবাচাকা খেয়ে গিয়েছিল। একবার ভাবল গাঁজা-টাজা খেয়েছে বোধহয় কিন্তু ছেলেটা আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি আর টাইম এন্ড স্পেস নিয়ে এতো গম্ভীর মুখে বকবক করে গেল যে কোলরিজের সেই বিখ্যাত 'উইলিং সাসপেনশন অফ ডিসবিলিফ'টা আপনি আপনিই তৈরি হয়ে গেল। তাছাড়া মহাভারতের রেফারেন্সও মাথায় এল ঝট করে, ব্যাসদেবও নাকি ভবিষ্যৎ ঘুরেটুরে এসে গুছিয়ে বসে তবে মহাভারত লিখেছিলেন। “আমার খুব খিদে পেয়েছে.. লাঞ্চ ট্যাবলেট আছে?” সেদিন বেগুন ভর্তা আর রুই মাছের কালিয়া করেছিল পরমা। সঙ্গে ঝুরঝুরে আলু ভাজা আর কিশমিশ দিয়ে পেঁপের প্লাস্টিক চাটনি । ছেলেটা হাপুস-হুপুস করে এক থালা ভাত খেয়ে ফেলল। বেগুন ওদের দেশে এককালে ফল হিসেবে খাওয়া হতো। এখন পৃথিবীর মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে তাই খাওয়া-দাওয়ার বিকল্প হিসেবে ট্যাবলেটই ভরসা। ওগুলো খেলে খিদে মিটে যায়। বহুদিন কেউ তারিফ করেনি পরমার রান্নার। পুশকিন খাওয়া-দাওয়ার পর পরমার হাতটা ধরে চুমু খেয়েছিল। চুমুটার গন্ধ পয়জন আইভির মতো। সারাদিন সুবাসিত রাখে। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর পরমা হাতটাকে নাকের কাছে নিয়ে আসে। ওর মনটা একটা অলীক ভালোলাগায় ভরে যায়। লাল ফড়িং এর ডানার মতো জটিল শিরায় ভরা অথচ নির্ভার, তিরতিরে একটা মনকেমন পেয়ে বসে ওকে.. ছেলেটাকে না দেখতে পাওয়ার সময়টুকুতে। আজকাল অপেক্ষা করে থাকে পরমা, পুশকিনের জন্য। এ অনুভূতির কী নাম দেওয়া যায়? পরমা জানে না। বহু বছর পর আজকাল নিজেই বাজারে যাচ্ছে পরমা। আগে ছেলে অভিনব যখন দেশে ফিরত, তখনই পরমা বাজারে যেত। ওয়ার্ম হোলটা হারিয়ে ফেলেছে ছেলেটা। ওটা খুঁজে পেলেই আবার চলে যাবে। পরমা মনে মনে চায় ও যেন কোন দিন ওয়ার্ম হোলটা আর খুঁজে না পায়। কাল আবার আসবে ছেলেটা। বলছে কাল একটা সারপ্রাইজ আছে। পদ্মগোখরোর ফনার মত জড়িয়ে ধরে এই সারপ্রাইজ শব্দটা পরমাকে। আমেরিকান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি থেকে সেবার শ্রেষ্ঠ গণিতবিদের পুরস্কার পেয়েছিল অভিনব। কম্বিন্যাটরিয়াল অ্যানালাইসিস এর ওপর তার যুগান্তকারী গবেষণাপত্র হইচই ফেলে দিয়েছিল। পরমা সেদিন একবার জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল ছেলেকে। দিনটার কথা ভাবলেই বুকের বালিয়াড়িতে কান্নার ভরা কোটাল আছড়ে পড়ে.. “আই হ্যাভ এ সিক্রেট টু শেয়ার মা, ইউ উইল বি সারপ্রাইজড..” “এখনই বল। “নাহ্, কাল একটা দুর্দান্ত ভার্জিন দ্বীপে যাচ্ছি ভ্যাকেশনে, তোমাকে একটা ভার্চুয়াল ট্যুর করাব তারপর বলব..” পরমা কোনদিন জানতেই পারল না সেই সিক্রেট। হাইওয়েতে একটা ভয়ংকর রাগিঅ্যাক্সিডেন্টে ছেলেটার দলাপাকানো শরীর দেখতেও আর ইচ্ছে করেনি। মোক্ষম সময়ে গাড়িটার এয়ার ব্যাগগুলোও কাজ করেনি। একটি পাহাড়ি অর্কিড ছিল পরমার বারান্দায়, পাতাগুলোতে রক্তফোঁটার ছাপ ধরানো। ওটাকেই বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়েছিল সেদিন। আত্মজর কোন অবশেষ রাখেনি নিজের কাছে। “একটা বড় কলাপাতায় সাজিয়ে মৌরলা,পুটি, কাজরি, চাঁদা, খলসে সবাই একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এসেছিল বউটা। আমি যেতেই এক গাল হেসে গছিয়ে দিল আমাকে। দেখো, তোমার কেমন লাগে। এরপর পর যখন আসবে তখন বর্ষায় এসো, তাহলে ইলিশ খাওয়াব... তোমাদের কি উৎসব অনুষ্ঠানের দিনেও ওই ট্যাবলেটই খাওয়ায়?” খেতে খেতে একটু লালা পড়ে যায় পুশকিনের মুখ থেকে। এভাবে খাওয়ার অভ্যাস নেই তো! মাছের মুড়োগুলো চুষে চুষে থালার ধারে সাজিয়ে রাখছিল, পরে ওগুলোও কড়মড় করে খেয়ে নেবে। বয়স কত হবে কে জানে ছেলেটার? “-নাহ্... ওই ক্রিসমাসে হয়। বছরে দুবার কিংবা তিনবার। তাও খাবারগুলো বড় বিস্বাদ। তাছাড়া সবাই তো তোমার মত রাঁধতে পারে না। তুমি হলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শেফ্!” হা হা করে হেসে উঠে পরমা। ছেলেটা কি যে বলে! খাওয়ার সময়ও পুশকিন মোটা জামাটা পরে থাকে। গরম লাগে তো মানুষের। একবার বলেছিল ওটা পাল্টে নিতে। রাজি হয়নি। পরমা আগে সব রকম কাপড় পরতে পারত এখন সুতি ছাড়া যাই পরে শরীরটা হাঁসফাঁস করে। আগের মত নেই আর শরীরটা। কতগুলো ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় একটা মেয়ে? দশ লক্ষ, ঋতুমতী হতে হতে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় চল্লিশ হাজারের মতো, এরমধ্যে তিনশো থেকে চারশোটার সুযোগ থাকে জীবন হওয়ার বাকিগুলার আর কোন কাজে লাগে না। পরমারও ঋতুর দিন ফুরিয়ে আসছে। মারা গেলে পৃথিবীতে তার আর কোন চিহ্ন থাকবে না। “তুমি যেমন এসেছো আমাদের সময়ে, আমাকে তেমনভাবে নিয়ে যেতে পারো না তোমাদের সময়ে? কিছুদিন থাকব তোমার সঙ্গে তোমাদের পৃথিবীতে।” “পারবেন না, আপনার কষ্ট হবে। তাছাড়া আপনার স্বামীকে কী বলবেন?” “ওকে যা খুশি একটা বানিয়ে বললেই হবে, ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার থাকা না থাকাতে তেমন কিছু যায় আসে না। “--ওরকম মনে হয়। আসলে যদি ছেড়ে থাকতে হয় তখন টের পাবেন ..আপনাদের এতদিনের সংসার। “--তুমি কি করে জানলে, তুমি বিয়ে করেছ? “--না, আমাদের এই প্রজন্মদের আর বিয়ে টিয়ে হয় না। এক সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিয়ে এক বছরের বেশি কাটানো নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এক বছর হয়ে গেলে এক্সপায়ারি ডেট হয়ে যায় সম্পর্কের, তখন বেরিয়ে আসতে হয়। আমরা মায়ায় জড়াই না। আজ শেষ পাতে পায়েস করেছিল পরমা। চামচ দিয়ে খুঁটে খুঁটে সবটা খেলো ছেলেটা। খাওয়া-দাওয়ার পর বেসিনে যখন হাত ধুচ্ছিল তখন টাওয়েলটা নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়েছিল পরমা। মায়ায় জড়ায় না এরা.. কী বোকা পরমা! নিজের বোকামিতে তো হঠাৎ খুব কান্না পেল ওর। “কী হল, আপনি কাঁদছেন কেন?” “তুমি কী করে বুঝলে? আমার চোখে তো জল নেই..” “মানুষ কি সব সময় চোখ দিয়েই কাঁদে?” “ওহ্... সেসব কিছুও বুঝতে পারো বুঝি?” “হ্যাঁ...পারি, আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি!” “সবই যখন বোঝো তাহলে আর কোনোদিন এসো না কেমন? তুমি হয়তো থাকো এক ঘন্টার জন্য কিন্তু তোমাকে আমার সারাক্ষণ ধরে মনে পড়ে। এই টান বাড়িয়ে কী লাভ বলো?” পুশকিন হাসল। আকাশে ডানা মেলা পাখির পেটের নিচের লালচে আভা ওর গালে.. পকেট থেকে স্ফটিকের তৈরি একটা ছোট্ট পেপার ওয়েট বের করে পরমার হাতে দিল। তাজমহল, ভাসমান একটা জেলির মধ্যে একখণ্ড সাদা চৈতি পূর্ণিমার চাঁদের কণা ভেঙে তৈরি করেছে যেন। ছোট্ট কিন্তু নিখুঁত। ওটা ওলোটপালট করলে ঝিরঝির করে বরফ পড়ে। “তাজমহল কোথায় পেলে তুমি? তোমাদের ওখানে কি এখন তাজমহলে বরফ পড়ে?” “এটা আমাদের ফ্যামিলির একটা সম্পদ বলতে পারেন। বহু বছর ধরে আমাদের কাছে আছে। ওলগা বলে একটা মেয়েকে আপনার ছেলে দিয়েছিল। মেয়েটা যেদিন জানিয়েছিল যে সে মা হতে চলেছে সেদিন এটা দিয়ে প্রপোজ করেছিল অভিনব। তারপর একটা মিসহ্যাপ হল ..আরেকটা মিথ্যা কথা বলেছি আপনাকে। আমি ওয়ার্ম হোল খুঁজে পাইনি। লেজার লাইট দিয়ে গ্র্যাভিটি তৈরি করে, সেই গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স দিয়ে সময়ের চক্রকে ভেঙেই ঢুকেছি আমার প্যাটারনাল ওরিজিন দেখব বলে...” তাল সামলাতে না পেরে চেয়ারটাতে বসে পড়ল পরমা। মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা বাইবাই করে ঘুরছে। নীহারিকাপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে পরমা এগিয়ে যাচ্ছে একটা কালের চক্র থেকে আরেকটা কালের চক্রে। ছেলেটা বলে কী! ওর সোনালি চুলগুলোর ফাঁকে অভিনবর দুএকটা কালো চুলও আছে, নিঃশেষ হয়ে যায়নি সবকিছু! এই সৃষ্টিতে থেকে যাবে তারও অংশ। রক্তের মধ্যে কেমন সুখের খলবলানি হয় পরমার। ছুঁয়ে দেখে পুশকিনকে। আজ পরমা বিলকুল খোশমেজাজে। অনেকদিন পর বিছানায় পূর্ণেন্দুর গা ঘেঁষে শুয়েছে। পূর্ণেন্দুর আঙুলগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, আঙুলগুলোও ওকে নাড়াচাড়া করছে। “কাল একটা প্রেসমিট আছে...কী প্রশ্ন করা যায় বলো তো সিরিয়া ওয়ান কে...যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে ওদের হাতে আর ক্ষমতা তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। একশো বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপোরভকে হারিয়ে দিয়েছিল আইবিএমের ডিপ ব্লু নামের কম্পিউটার। তখনই মানুষের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। দাবার ইতিহাস লিখল মানুষ, তার ওপর জয়ের শেষ স্বাক্ষর করে দিল কি না একটা যন্ত্র!” “জিজ্ঞেস করো তাজমহল কে বানিয়েছে? “ওমা, এত সহজ প্রশ্ন সবাই জানে উত্তর, শাহজাহান।” “না মশাই, তাজমহল বানিয়েছিল কুড়ি হাজার শ্রমিক। দিনরাত এক করে পাথর ছেঁচে কবিতা লিখেছিল। তোমার রোবটের ভারি বয়েই গেছে সেইসব অনামি মানুষদের মনে রাখতে। সাধারণ মানুষদের যারা মনে রাখে না তারা সাধারণের প্রতিনিধিত্ব করবে কী করে? রক্ত, জল দিয়ে যাদের শরীর তৈরি হয় নি তারা কী করে সেই তরল অনুভূতি স্পর্শ করবে?” যুক্তিটা ভারি মনে ধরে পূর্ণেন্দুর! আনন্দের চোটে পরমাকে জড়িয়ে বলে, “সত্যি গো, এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আমার আর কেই বা আছে এমন আপন...” বাঁ দিকের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে পরমার, তাজমহলটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, ‘আছে আছে..একজন আছে, তার জন্য আমার হৃদয়ে আছে একটা উষ্ণ গর্ত, যাকে বলে ওয়ার্ম হোল!’
2 Responses
অসাধারণ. এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম. তুই ই পারিস Sci-fi এর মধ্যেও সুক্ষ অনুভূতি এইভাবে inject করতে. সাধু সাধু.
অসাধারন।। ❤❤