এই যে এখানে বসে আছি, নামগোত্রহীন ঝর্ণার পাশে; একটু পরেই ডেকে নেবে যাত্রীবাহী বাস— নিষ্ঠাপরায়ণ, ভীষণ তৎপরতায় পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। তবু ফিল্টার কফি অর্ডার করেছি— কয়েক মুহূর্ত শুধু চুরি করে একটা খন্ডচিত্র কেরালার পথে স্বাক্ষরহীন। এই যে ঝর্ণাটা অনেকটা আমারই মতো। ভ্রমণ-ম্যাগাজিনে, ওয়েব-সাইটে কিংবা ট্র্যাভেল এজেন্টের ঝকঝকে প্যামফ্লেটে ওর ছবি তুলবে না কেউ। সেরাদের তালিকায় ওর নাম নেই— এমনকি দ্বিতীয় সারিতেও। আকর্ষণ হিসেবে নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর— তবু... ওই "তবু" টুকুই আসলে জীবন, শুচিস্মিতা! অনেকটা দীর্ঘশ্বাস জমা হ'লে নিজের সীমানাটা চিনে নেওয়া যায়— মেনে নিতে হয় শুধু এটুকুই আসার ছিল, এরপর পথ নেই আর। মাঝেমাঝে ভাবি, একেবারে অপ্রাপ্তি ভালো ছিল, সম্পূর্ণ অস্বীকৃত থাকা ছিল শ্রেয়— মধ্যমেধার এই স্বীকৃতির চেয়ে। তবু এইখানে, এই মুহূর্তে এ ঝর্ণাকে প্রকৃতির সূক্ষ্মতম কাজ মনে হয়। এই মেঘ শামিয়ানা, পাহাড়, ধোঁয়া, ফেনায়িত স্টিলের গেলাসে মুখোমুখি আমরা দুজন; জীবনের স্কোর থেকে দুটো রান চুরি ঠিক এই মুহূর্তে তোমার চোখের ছায়ায় আমিও কি অসাধারণ হয়ে উঠছি না, শুচিস্মিতা? যাত্রীবাহী বাস হর্ন দেয়... অনেকগুলো বছর কেটে গেল 'পরিণতি', 'সফলতা', 'জয়'— শব্দগুলোকে ঘষেমেজে নিতে।