"এভাবে অ্যাডজাস্ট করে আর থাকা যায় না সোম। আমি আর পারছি না!” বিরক্তির আঁচ স্পষ্ট তিস্তার চোখে-মুখে। "তুই তো নিজে বদলাবি না। তোর আসলে উপরে ওঠার কোনো ইচ্ছে নেই। সংবাদমাধ্যমে পার্টটাইম করে আর শখে গল্প,কবিতা,উপন্যাস লিখে ভালোভাবে বাঁচা যায় না সোম", একসঙ্গে একরাশ বিষবাণ ছুঁড়ে থামে তিস্তা। কলকাতার নামি হোটেলে রিসেপশনিস্টের চাকরি করে ও। আয় বেশি, তাই দেমাকও চরমে। 'জোর যার,মুলুক তার' ওই আর কী! তিস্তা সুন্দরী। রূপে-লাবণ্যে আধুনিকা এক নারী। ওদের লাভ-ম্যারেজ। সব জেনেশুনেই তিস্তা বিয়ে করেছিল। এই সোমকেই তো সে ভালোবেসেছিল। কিন্তু এখন ভালোবাসে অন্য কাউকে। রণিত। তিস্তার বস আর নামি হোটেলের মালিক। টল,স্মার্ট,হ্যান্ডসাম রণিতের চোখের ইশারার সঙ্কেতে আগে সেরকম পাত্তা না দিলেও এখন ওর প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে তিস্তা। গত রবিবার রণিত নিজে মার্সিডিজ ড্রাইভ করে তিস্তাকে নিয়ে গিয়েছিল, 'সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস্'-এ ওর পছন্দের ডায়মন্ড রিং কিনতে। সোম কোনওদিনই দিতে পারেনি এত দামি উপহার! সারাক্ষণ ফোনে হাসি-ঠাট্টা,গল্পগুজব। একদিন সোম বলেছিল, "যেটা করছিস, সেটা ঠিক করছিস না। আমাদের ভালোবাসাকে এভাবে মিথ্যে হয়ে যেতে দিস না।" শ্রাগ করে তিস্তা বলেছিল, "রাখ তোর জ্ঞান। থাকতে হলে থাক, না হলে বলে দে চলে যাচ্ছি। থাকার জায়গা আছে আমার।" চলে গিয়েছিল তিস্তা। থাকার জায়গার অভাব হয়নি ওর। ভালোবাসার বীজ থেকে যে চারাগাছ জন্মেছিল,তা পিষে দিয়ে চলে ও। কেটে গেছে বেশ কিছু বছর। ক্যালেন্ডারের বয়স বেড়েছে বেশ। তিস্তা এখন একা। ওই চাকরি চলে গেছে ওর। রণিত ওকে ভালোবাসে না আর। নতুন রিসেপশনিস্ট সারা এখন ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী। মানুষ চিনেছে তিস্তা। বাপের বাড়িতে থাকে না ও, জায়গা হয়নি। এক কামরা ভাড়া নিয়ে থাকে,একটা পার্টটাইমের চাকরি। ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসে তিস্তা। শীতের এই মরসুমে দার্জিলিং খুব প্রিয় ওর। অনেক বছর পর আবার এসেছে ও। পাশের রুমের ভদ্রমহিলা জানিয়েছিলেন এই ক্যাফের কথা। ওখানেই বসে আছে এখন। ক্যাফের টেরেসে মুখোমুখি সোম আর তিস্তা। সোম এই ক্যাফের মালিক। সংবাদমাধ্যমের কাজ ছেড়ে লোন নিয়ে এই ক্যাফের শুরু। গল্প,কবিতা,উপন্যাস এখনও লেখে। তিস্তা সব বলেছে, নতুন করে শুরু করার কথাও। সোম সব শুনেছে। জমে থাকা রাগ পুষে রাখেনি আর। জীবন বড় ছোট। মান-অভিমানের বেড়াজালে নিজেকে আটকে রেখে কী লাভ! ভালোবাসার চারাগাছটা ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে আবার। বিকেলে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে এখানে। পরিবেশ মনোরম। জ্যোৎস্নালোকে হাতে হাত রেখে ওরা গাইছে রবিঠাকুরের গান।