" আই ওয়ান্ট দ্য বেস্ট ডক্টর্স টু ক্যারি মাই কফিন টু ডেমনস্ট্রেট দ্যাট, ইন দ্য ফেস অফ ডেথ, ইভেন দ্য বেস্ট ডক্টর্স ইন দ্য ওয়ার্ল্ড হ্যাভ নো পাওয়ার টু হিল। " মহামারীর অভিঘাতে হত পৃথিবী খুঁজে চলেছে জীবনদায়ী উপশম, যা আরাম দেয়, রোগ প্রতিরোধ করে আরেকটু এগিয়ে দেয় জীবনের দিকে। কিন্তু যখন উপশমই হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী, প্রথম বিশ্বের মহৌষধের যুপকাষ্ঠে গলা দেয় তৃতীয় বিশ্বের গরীব ফুটপাথবাসীরা, কি হয় তখন? উপন্যাসের মূল্য উপজীব্য এটাই৷ "ক্লিনিক্যাল ড্রাগ ট্রায়াল " নামটির কথা এখন প্রায়শই শোনা যায়। যেকোনো ওষুধ রোগীকল্যানের জন্য খোলাবাজারে উপলব্ধ হওয়ার আগে তাকে বিভিন্নরকম ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথমে নানারকম প্রাণী ও শেষমেশ মানুষের ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখা হয় ওষুধের কার্যপ্রণালী। যদি সেই ওষুধ মানুষগুলির কোনোরকম ক্ষতি না করে রোগ উপশমে সক্ষম হয় তবেই তা সেই রোগের চিকিৎসাকল্পে সেই ওষুধটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এটিকেই " ক্লিনিক্যাল ড্রাগ ট্রায়াল " বলা হয়। সাধারণত এইসব ট্রায়াল চলাকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের খোঁজ করা হয়, যাঁরা স্বইচ্ছায় এগিয়ে আসেন পরীক্ষাগুলির রূপদানে। কিন্তু সর্বদা তা হয়না৷ বিশেষ করে প্রথম বিশ্বের কিছু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধের ট্রায়াল গোপনে চালানো হয় তৃতীয় বিশ্বের ফুটপাথবাসী গরীবগুর্বো মানুষদের ওপরে। তৃতীয় বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে তাদের এইসব পরীক্ষা চালাতে বিশেষ অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয়না, ফলতঃ বহু মানুষ মারা যায় ট্রায়ালের সাইড এফেক্ট সহ্য করতে না পেরে, যার কোনো ডেটা পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে কিছু ধরপাকড় হয় ঠিকই, তবে বাস্তব এখনো সেই তিমিরেই। বিভিন্ন প্রাইভেট নার্সিংহোম এবং প্রভাবশালী মানুষদের তত্ত্বাবধানেই চলে এই বেআইনি ট্রায়াল, যার খবর জানলেও জানাতে চায়না কেউই৷ এমন একটি স্পর্শকাতর ও মারাত্মক ঘটনাকে উপন্যাসে তুলে আনার জন্য প্রথমেই সাধুবাদ প্রাপ্য লেখিকার৷ মেডিক্যাল ট্রায়াল জিনিসটিকে অনেক সহজবোধ্য করে উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি৷ এক দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার করণ ডি'সুজা যখন নিজেই হয়ে ওঠে এক আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত ওষুধ কোম্পানির ক্লিনিক্যাল ড্রাগ ট্রায়ালের গিনিপিগ, আদৌ কি বাঁচতে পারে সে! আজন্মকাল তাকে অবচেতনে তাড়া করে বেড়ানো " কাওয়ার্ড " শব্দটা কি সে মুছে ফেলতে পারে নার্স ডরোথির সামনে? যে চিকিৎসকগণ এইসব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা সকলেই কি খুনী! নাকি ডাক্তার - নার্স ও রোগী তাঁরা সকলেই বোড়ে মাত্র! অলক্ষে থেকে দাবার চাল দিচ্ছে কোনো সহস্রাক্ষ শয়তান! প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে গেলে পড়তেই হবে এই বই। এক ভয়াবহ মানবিক অন্তঃসারশূন্যতার কাহিনী বুনতে গিয়ে ফল্গুধারার মতো ভালোবাসার করুণ সুর চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছেন লেখিকা, অন্ধকারের ঘনত্ব কমে ঝিলমিল করে উঠেছে রোদ। এলভিস প্রিসলির গান এই উপন্যাসের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে, রয়েছে সকল চড়াই উৎরাই এ, আবেদনে - নিবেদনে, প্রেমে অথবা মৃত্যুতে। " টেক মাই হ্যান্ড, টেক মাই হোল লাইফ টু, ফর আই কান্ট হেল্প ফলিং ইন লাভ উইদ ইউ...!" বইটিতে মুদ্রণপ্রমাদ বিশেষ নেই বললেই চলে, প্রচ্ছদও আকর্ষণীয়। তবে কিলার করণ বারবার মনে করিয়েছে লেখিকার আরেক স্বনামধন্য সৃষ্টি গোয়েন্দা অধিরাজকে, যেন একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ দুইজন৷ মহাভারতের কর্ণকে হারতে হয়েছিল ছলনার জন্য, তবু আজও " দাতা" নামক পবিত্র শব্দটির পাশে বসে তাঁর'ই নাম। খুনী করণ শেষমেশ জিতেছিল কিনা জানতে হলে আপনাকে পড়তেই হবে উপন্যাসটি, শুধু এটুকু বলতে পারি, একনিঃশ্বাসে শেষ না করে ওঠা যাবেনা। সবমিলিয়ে বইটি উপভোগ্য ও চিকিৎসা সাম্রাজ্যের অন্ধকার দিকটাকে অনেক সহজভাষায় প্রকাশ করে। এই উপন্যাস পড়তে পড়তে কখনো ঘৃণায় গুলিয়ে উঠবে শরীর, কখনো অব্যক্ত বেদনায় ভিজে আসবে চোখ। রবিঠাকুরের মতো অমোঘ মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করবে, " আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিনশেষের শেষ খেয়ায়, ওরে আয়..."।। বইএর নামঃ- মিথ্রিডেটিস লেখিকাঃ-- সায়ন্তনী পূততুণ্ড প্রকাশনঃ- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স মূল্যঃ- দুইশত পঞ্চাশ টাকা