আজ ইচ্ছা করেই গাড়িটা নিয়ে আসেনি মল্লার। এরকম ইচ্ছা ওর বৃষ্টি হলেই কামড়ে ধরে। ভোগান্তি জেনেও ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেয়। ছাঁট এসে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে রুবির মোড়,তবুও ছুট দিল এসি থার্টি সেভেন দেখেই। দমদম যাবে বাসটা, নিশ্চিত। আহ, বাসটা প্রায় ফাঁকা। উঠে জানলার ধারে বসতেই মনে হলো একদম সামনের সিটে মৌসুমী বসে আছে। মৌসুমী! যাহ সত্যি? বিশ্বাস হল না, সে আসবে কী করে এখানে! মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে আছে, মল্লার এদিক ওদিক উঁচু হয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগল,তার বুকে এখন দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। আহ যার সাথে দেখা করার সে পাগল, সে আজ এ ভাবে চলে আসবেএখানে, বৃষ্টিদিনে বাসে পাবে, কে জানতো! একটু কি থামল শেষে! ঝিরঝিরানির ক্রমাগত আওয়াজ, সেই শনশনে দমকা বাতাস ধরে এলো বাইরে। মৌসুমী? বাস ভাড়া দিতে গিয়ে নিচু হলো,ঘাড়ের কাছের মুসুর ডালের আকারে সেই তিল। যেই তিলে মল্লার কতদিন মুখ ডুবিয়েছে। দিঘার সমুদ্রের বৃষ্টি স্নান, মন্দারমণির ট্রিপ, একবার গ্যাংটকে ঝিরে ঝিরে বৃষ্টিতে গাড়ির চাকা স্লিপ করে ঘুরে বিপদজনক অবস্থায় চলে গেছিল তারা। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে উঠেছিল প্রায়। একি, মৌসুমী কি ঊঠল নেমে যাবার জন্য? হ্যাঁ ওই তো ওই নেমে যাচ্ছে সে! হে ঈশ্বর সে কি করবে এখন! এবারেও মৌসুমীকে সে বাঁধা দেবে না! চলে যেতে দেবে! এই সুযোগ! মল্লার উঠে দাঁড়ালো, সেও দুড় দাড় করে নেমে গেল লেক টাউনেই। আহ কই সে, কই! কোথাও নেই! সে নিজের চুল খামচে ধরল! দপ দপ করছে তার সারা মাথা! মল্লারের বেশ রাত হয়ে গেল বাড়ি ফিরতে। নন্দিনীকে পাশ কাটিয়ে সে উপরে চলে এলো। নন্দিনী শুধু তাকাল উদ্ভ্রান্ত মল্লারের দিকে, কোন কথাই জানতে চাইল না , নীরবে বেডরুমের ভারি দরজাটা লক করে দিয়ে গেল। মল্লার ব্যালকনিতে ঝুঁকে জলস্রোত দেখছে। এঁকে বেঁকে জল ছুটছে ভারী শব্দ করে। কেউ জানেনা, তার বুকের মধ্যেও একটা গোপন নদী আছে। বৃষ্টি এলেই সেই নদীটা বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে। মৌসুমী পাতা হয়ে আসে আবার ভেসেও যায় সেই নদীতে দূর থেকে দূরে --