প্রথম অংকের পরে


প্রথম অংকের পরে

সুব্রত বসু 
চুঁচুড়া, হুগলি 

( মঞ্চ একটি সাধারণ ফ্ল্যাটের বেডরুম ও ড্রয়িং রুম, ড্রয়িং রুম সংলগ্ল বাইরের যাবার দরজা। বেডরুমের খাটে একটি মেয়ে শুয়ে আছে,বছর পঁয়ত্রিশের একটি লোক চাদর দিয়ে মেয়েটির পা ঢেকে দেয়, বেডরুম ছেড়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকে মোবাইল ফোনে কারুর সঙ্গে কথা বলে, তারপর  রবিশংকরের সেতারের ডিস্ক বাজাতে দেয়। উজ্জ্বল আলো কমে আসে, লোকটি সোফায় বসে মাথা এলিয়ে দিয়ে বাজনা শুনতে থাকে। কিছুক্ষণ পর বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ। শশব্যস্ত লোকটি বাজনা বন্ধ করে দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলা মাত্র এক পুলিশ ইন্সপেক্টর হাতে ছোট রুল, বগলে ফোলিও ব্যগ  ঘরে ঢোকেন।)
ইন্সপেক্টরঃ- আমি ইন্সপেক্টর পাকড়াশী, আপনি কি অবনীশ চৌধুরী?
অবনীশঃ- আমিই অবনীশ চৌধুরী।
ইন্সঃ- ওঃ! ফোনটা তাহলে আপনিই করেছিলেন? 
অবঃ- হ্যাঁ।
ইন্সঃ- বডি কোথায় রেখেছেন? 
অবঃ- আজ্ঞে,  বেড রুমে।
ইন্সঃ- চলুন। (ড্রয়িং রুমের আলো নিভে গিয়ে বেড রুমের আলো জ্বলে ওঠে। ইন্সপেক্টর  মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন।)
ইন্সঃ- এ্যাপারেন্টলি তো কোন ইঞ্জুরি দেখছি না, পায়ের পাতা ঢেকে রেখেছেন কেন ,ওখানে কোন আঘাতের চিহ্ন আছে নাকি।(ইন্সপেক্টর ঢাকা দেওয়া চাদরটি সরিয়ে দিলেন, অবনীশ হাঁ হাঁ করে বাধা দিতে গেল) 
অবঃ-  না না, চাদর’টা সরাবেন না,  ওখানে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই।
ইন্সঃ- তাহলে?
অবঃ- আমি অদিতির পায়ের পাতা দেখে ওর প্রেমে পড়েছিলাম।(কথাটা শুনে ইন্সপেক্টর শ্রাগ্‌ করলেন) ভারী সুন্দর ওর পায়ের পাতা, আমি চাই না ওটা আর কেউ দেখুক। 
ইন্সঃ- এতই যখন প্রেম, তাহলে খুন করলেন কেন? আর  মারলেনই বা  কিভাবে? 
অবঃ- চায়ের সঙ্গে কড়া ঘুমের ওষুধ, তারপর ঘুমিয়ে পড়ার পর খালি  হাইপোডারমিক ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের পুরো এয়ার ওর শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছি, সেটাই হার্টে ধাক্কায় দেওয়া কার্ডিয়েক ফেল করেছে। পোস্ট মর্টেমে এসব কিছুই ধরা পড়বে না, ন্যাচারাল ডেথ লেখা ছাড়া ডাক্তারের কোন রাস্তা নেই।
ইন্সঃ- তাই! চমৎকার,  অনেক কিছু জানেন দেখছি। বেশ পরিকল্পনা করে  আট ঘাট বেঁধেই নেমেছেন,কী বলেন। তা আপনার হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ’টা কোথায়?
অবঃ- ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছি কমোডের ভেতর , যাতে এই অফেন্ডিং ওয়েপেনের সন্ধান কেউ না পায়, খুনের মামলায় ওটা মূল্যবান এক্সজিবিট। 
ইন্সঃ- ক্রিমিনোলজি গুলে খেয়েছেন দেখছি,তবে যা ভাবছেন তা নয়, এত সহজে নিস্তার পাবেন না, অনেক কিছু জানার আছে,  চলুন ওঘরে যাই। (বেডরুমের আলো নিভে ড্রয়িং রুমের আলো জ্বলে ওঠে)।
ইন্সঃ- (ঘরে ঢুকতে ঢুকতে)প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বললেন তো, কি এমন হল যে  তারপরেও নিজের স্ত্রীকে  মেরে ফেলতে হল? 
অবঃ- ও অন্য লোকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।( অবনীশ সোফায়, ইন্সপেক্টর সোফা চেয়ারে বসলেন)
ইন্সঃ- আপনি কি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন না? 
অবঃ-বদলী হওয়ার দরুণ, বছর দেড়েক আমাকে বর্ধমানে থাকতে হচ্ছে, সপ্তার শেষে বাড়ী যেতাম, মাঝে মাঝে আমার স্ত্রীও যে  এখানে আসতেন না তা নয়, যেমন গতকাল এসেছিলেন।
ইন্সঃ- তাহলে আপনার স্ত্রী কলকাতাতেই থাকেন?
অবঃ- হ্যাঁ। ওখানকার একটা কলেজে পার্টটাইম লেক্‌চারার, আর সেটাই আমার আপত্তি।
ইন্সঃ- কেন?  
অবঃ- যা কিছু সর্বনাশ হবার ওখানেই হয়েছে, বার বার বারণ করা সত্ত্বেও ওখানকার কাজটা ছাড়তে রাজী ছিল না।
ইন্সঃ- তার মানে ভীষণ স্বাধীনচেতা ছিলেন।   আচ্ছা মিঃ চৌধুরী আপনাদের কতদিন হল বিয়ে হয়েছে?  
অবঃ- সাতবছর। 
ইন্সঃ- কোর্টশিপ? 
অবঃ আরো তিন বছর ধরুন। 
ইন্সঃ- দশ বছর ধরে ঘনিষ্ট ভাবে মেলামেশা করেও তার চরিত্র সম্বন্ধে কিছুই বুঝতে পারলেন না, আর যখন বুঝলেন তখন একেবারেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হল?
অবঃ- দুর্ভাগ্য আমার!
ইন্সঃ দুর্ভাগ্য কেন বলছেন, আপনি নিজেই তো ষড়যন্ত্র করেছেন। সামান্য কটা কথা বলে যা বুঝেছি আপনি আদ্যন্ত একটি শয়তান লোক। এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে কোন অনুশোচনা নেই,  যাইহোক আপনাদের বাচ্চাকাচ্চা আছে?
অবঃ- আজ্ঞ ,  বছর দুয়েকের একটি ছেলে আছে।
ইন্সঃ- তারপরেও বলছেন , আপনার স্ত্রীর সঙ্গে  কারুর গোপন প্রণয় রয়েছে,…আপনি তাকে চেনেন?
অবঃ- না। 
ইন্সঃ-  দেখেছেন কখনো? একসঙ্গে?  
অবঃ- না। সেরকম দেখলে তো সমস্যা মিটেই যেত, এত প্ল্যান করতে হত না । 
ইন্সঃ- আপনার স্ত্রীর মোবাইল ফোন কখনো চেক করতেন? সেখান থেকে কি কোন ক্লু পেয়েছিলেন?  
অবঃ- ওর মোবাইল ফোন বায়োমেট্রিক সিসটেমে লক করা থাকত। তাই কখনো চেষ্টা করিনি। 
ইন্সঃ- আই সি! তার মানে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল, আপনি তাকে চেনেন না, কখনো দেখেন নি, মোবাইলে কোন  এস এম এস বা হোয়াটস্‌ এ্যাপে কোন সন্দেহজনক মেসেজ পড়েনি,  শুধুমাত্র সন্দেহের বশে......।
অবঃ- কি বলছেন কি আমার স্থির বিশ্বাস,তার সঙ্গে আমার স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক ছিল।  
ইন্সঃ- কেউ কি আপনাকে বলেছে এই কথা ? নাকি শুধুমাত্র অনুমান?  
অবঃ- না, না  তা বলবে কেন, এসব কথা কি কেউ কাউকে বলে নাকি।  কিছু কিছু প্রমাণ পেয়েছি তার থেকেই আমি নিঃসন্দেহ।
ইন্সঃ- কিন্তু এতখানি নিশ্চিন্ত হচ্ছেন কি করে?  
অবঃ- আমার জমা করা প্রমাণগুলো দেখলে আপনিও আমার মত নিশ্চিন্ত  হবেন। দাঁড়ান এক মিনিট।( অবনীশ উঠে  গিয়ে ছোট্ট কাগজের বাক্স নিয়ে এসে  ইন্সপেক্টরের হাতে দেয়)দেখুন এগুলো।
ইন্সঃ- কী ওটা ?  
অবঃ- দেখুন না খুলে। (ইন্সপেক্টর ফোলিও ব্যগ থেকে ছোট ফরসেপ আর একটী ম্যাগ্নিফ্লাইং গ্লাস বার করে বাক্সে থাকা জিনিসগুলি পরীক্ষা করতে থাকেন, ফরসেপে করে তুলে নিজের চোখের কাছে নিয়ে আসে) 
ইন্সঃ- এটা তো দেখছি একটা মাথার চুল, ব্রাউন কালারের ডাই করা হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে, তাই না। তা এটা দিয়ে আপনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন? 
অবঃ- আমাদের কলকাতার ফ্ল্যাটে শোবার ঘরে বালিশের তোয়ালেতে এটা আটকে ছিল। আমাদের বিছানায় যে কেউ একজন শুয়েছিল সে ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ।
ইন্সঃ- আমিও নিঃসন্দেহ, কিন্তু একটা কথা মিঃ চৌধুরী ,আপনি আপনার স্ত্রীর পায়ের পাতা দেখে প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন, এখন বোধহয় তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখার সময় পান না।
অবঃ- কেন একথা বলেছেন কেন?
ইন্সঃ তার কারণ আপনার স্ত্রীর মাথায় বয়েস কাট চুল, তিনিও ব্রাউন কালার ডাই ব্যবহার করতেন, চুলের ওপর দিকে ভাল করে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়। 
অবঃ- তার মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি?  
ইন্সঃ-  বলতে চাইছি এই চুলটা আপনার স্ত্রীরও হতে পারে। যাই হোক এটা আমি  ফরেনসিক এক্সজামিনেশনের জন্যে পাঠাব।  আচ্ছা আর একটা জিনিস দেখছি তো একটা সিগারেটের শেষ অংশ। যত্ন করে রেখে দিয়েছেন দেখছি, এটা কোথায় পেয়েছেন? 
অবঃ- এটাও আমি আমার শোবার ঘর থেকে পেয়েছি।  
ইন্সঃ- ইন্টারেস্টিং, ভালো কথা, কী মনে হয়েছে আপনার এটা দেখে?
অবঃ- খুব সোজা, এটা বোঝায় আমাদের শোবার ঘরে কোন একজন পুরুষ মানুষের উপস্থিতি।
ইন্সঃ- বাহ! খুব ভাল অবজারভেশন! কিন্তু মিঃ চৌধুরী এখানেও যে সেই একই সংশয়, আপনার স্ত্রীর ডেডবডি পরীক্ষার সময়ই লক্ষ্য করেছি তার তলার ঠোঁটে কালো ছোপ,  তিনি একটা গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতেন, তার মানে তিনি স্মোক করতেন। আপনি কি সেটাও জানতেন না? এই সিগারেট এন্ডটা ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, হালকা লালচে দাগ, মনে হচ্ছে আপনার স্ত্রীরই লিপস্টিকের দাগ, তবুও সিওর হবার জন্যে আমাকে এটাও ফরেসিকে পাঠাতে হবে। আর কিছু?
 
অবঃ- এর পর যে কথাটা আপনাকে বলব,তার সঙ্গে নিশ্চয়ই একমত হবেন।সেটা দেখার পরই আমার খুন করার কথা  মাথায় আসে।
ইন্সঃ- কী সেটা?  
অবঃ- প্রায় মাস ছয়েক আগে,সেদিন ছিল শুক্ বার, অফিস সেরে বাড়ি পৌঁছতে একটু রাত হয়েছিল,জামা কাপড় ছেড়ে, হাত মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকেছি,হঠাৎ দেখি কমোডের জলে একটা কন্ডোম ভাসছে, তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাশ টেনে দিয়েছি।
ইন্সঃ- সেকী! ওটা কোথায়? 
অবঃ- কী? বলছেন কী? একটা ইউসড কন্ডোম কমোডের জল থেকে তুলে আমি রাখব? 
ইন্সঃ- নিশ্চয়ই। ওটাই টতো আপনার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
অবঃ- ইন্সপেক্টর আপনি বুঝতে পারছেন না ওই কন্ডোমটা কমোডের জলে ফেলে রাখা হয়ছিল আমাকে দেখানোর জন্যে, আমি চাইনি যে ও জানুক আমি ওটা দেখেছি, তাই তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাশ টেনে দিয়ে ছিলাম, ওকে বুঝতেও দিইনি যে আমি ওটা দেখেছি। 
ইন্সঃ- তার মানে আপনার স্ত্রী কোন প্রকারে তার relationship  এর কথাটা জানাতে চাইছিল,আপনিও সেটা জেনে না জানার ভান করে তাকে তার তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাইছিলেন।
অবঃ -Exactly। আপনি ঠিক ধরেছেন, তাই ওকে যখন আসতে বললাম একটুও দ্বিধা করেনি। 
ইন্সঃ- কিন্তু মিস্টার চৌধুরী এটা আপনার মুখের কথা , কোন সাপোর্টিভ এভিডেন্স নেই আপনার বক্তব্যের সপক্ষে।
অবঃ-কী বলতে চাইছেন? আমি কি আশপাশের প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দেখাব আমার স্ত্রী ব্যভিচার করছে।
ইন্সঃ- একটা ছবিও কিন্তু তুলে রাখেননি আপনি, যাকগে যাক, একটা কথা বলুন তো মিঃ চৌধুরী, এই ঘটনাটা ছ’মাস আগে বললেন না।
অবঃ-হ্যাঁ। 
ইন্সঃ- আপনাদের তো বছর দুয়েকের একটি ছেলে আছে ,তাই না? 
অবঃ- হ্যাঁ। সে  নেহাতই শিশু। 
ইন্সঃ- আচ্ছা আপনার স্ত্রী তো একটি কলেজের পার্টটাইম লেকচারার  ছিলেন, তিনি কলেজে গেলে সেই সময় আপনাদের ছেলেকে কে দেখাশুনা করত?
অবঃ- আমার শাশুড়ীমা, ওনার কাছে মেসি খুব ভাল থাকে।  
ইন্সঃ- মেসি মিন্‌স দ্যাট ফুটবলার।
অবঃ- হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন।
ইন্সঃ- এই গ্যাপটা তো অনেকটা, প্রায় পাঁচ ছঘন্টা তো বটেই, আপনার স্ত্রীর কলেজে যাওয়া ও ফিরে আসার মধ্যে।
অবঃ-হ্যাঁ। তা তো হবেই, বেশীও হতে পারে, শুধু তো পড়ানো নয়।    
ইন্সঃ-হ্যাঁ, সে তো নিশ্চয়, আচ্ছা  আপনার ছেলে  তো নিশ্চয়ই ব্রেস্ট ফিড করে।
অবঃ-  এখন একটু আধটু সলিড খাবার খেলেও ওটা এখনো ছাড়েনি।
ইন্সঃ- যখন ওর মা থাকে না, সেই সময়?
অবঃ-  না না, ওর বটল ফীড করারা অভ্যাস আছে। 
ইন্সঃ- আই সি। আমি ঠিক এটাই জানতে চাইছিলাম,আচ্ছা মিঃ চৌধুরী আপনি তো ভাল করে দেখার আগেই কমোডের ফ্ল্যাশ টেনে দিয়েছিলেন।
অবঃ- হ্যাঁ, তাতে কী হয়েছে?   
ইন্সঃ-  কমোডের জলে যেটা ভাসছিল, সেটা আপনার  ছেলের বটলের ইউসড নিপিল নয় তো, কেউ ভুল করে ফেলে দিয়েছিল হয়ত। 
অবঃ- কেন আপনি বারে বারে আমার মনের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চাইছেন?
ইন্সঃ- তার কারণ আপনি যেটা করেছেন শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন। আপনার কোন প্রমাণই যথেষ্ট নয় এটা বোঝাতে যে আপনার স্ত্রী অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। সুতরাং আপনি culpable homicide not amounting murder এর কোন সুবিধে পাবেন না,  আপনার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হবে, তার সাজা কি জানেন তো, হয় ফাঁসী নয় যাবজ্জীবন, you are under arrest. চলুন, এক মুহূর্ত দেরী করবেন না । (ঠিক সেই সময় কলিং বেল বেজে ওঠে)
অবঃ- কেউ এসেছে মনে হয়?  
ইন্সঃ- যান, দরজা খুলে দিন, পালাবার চেষ্টা করবেন না, বাইরে পুলিশ আছে।( অবনীশ সোফা ছেড়ে দরজার দিকে যাওয়া মাত্রই ড্রয়িং রুমের আলো নিভে যায়, স্পট লাইট দরজার ওপর, দরজার খুলতেই এক মহিলার প্রবেশ, পরনে জিনস্‌ টপ,বয়েস কাট চুল। চোখের গগলস্‌ খুলে মহিলার প্রশ্ন অবনীশকে)
কী হল ভূত দেখলে নাকি?(আলো জ্বলে উঠল, ড্রয়িং রুমে কেউ নেই)
অবঃ- কি ব্যাপার অদিতি, তুমি হঠাৎ?  
অদিঃ কেন তুমি আসতে বললে তবে আসতে হবে,এমনি আসতে নেই বুঝি।
অবঃ- না তা নয়।  
অদিঃ- কী  হয়েছে বলো তোমার, ভয় পেয়েছ না কি? 
অবঃ-না না ভয় পাবো কেন? মেসি কোথায়? 
অদিঃ- ওকে মায়ের কাছে  রেখে এসেছি, এদিকে ওর দুধ ফুরিয়ে গেছে, একদম সময় পেলাম না, মাকে টাকা দিয়ে এসেছি কিনে নেবার জন্যে। (জুতো খুলে বেড রুমে ঢুকে সটান বিছানার ওপর,বালিশে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে) 
অদিঃ- এক গ্লাস জল খাওয়াও তো।( অবনীশ জল আনতে যায়, অদিতি, ব্যাগ থেকে সিগারেট বার করে ধরায়। ।গ্লাস হাতে অবনীশ ঢোকে। 
অদিঃ -দাও। (জল খেয়ে খালি গ্লাসটা সাইড স্টুলের ওপর রাখে।)
অবঃ একটু চা করি? (অদিতি অবনীশের মুখের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থাকে) 
অদিঃ আবার চা করবে? বসো না গল্প করি,  একী, তুমি আজকাল ঘুমের বড়ি খাও নাকি?  (ওষুধের স্ট্রিপ’টা দেখাতেই তাড়াতাড়ি অবনীশ সেটা নিয়ে নেয়) 
অবঃ- না মানে রেগুলার নয় মাঝে মাঝে দরকার হয়।
অদিঃ- আজ দরকার হবে নাকি? (কথার জবাব না দিয়ে হতভম্বের মত অবনীশ দাঁড়িয়ে থাকে)
 
(মৃদু হেসে অদিতি বিছানার ওপর সটান শুয়ে পড়ে, অবনীশ তাড়াতাড়ি অদিতির পায়ের পাতা চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়)
                            যবনিকা  

বৈশাখী ২০২৪