আখর-যাপন

  
প্রিয়দর্শিনী,

    তোমার জন্য কবিতা লেখার কথা ছিল, কিন্তু আমি তো শব্দের প্রথাবহিভূর্ত ব্যবহার জানি না। তোমাকে ভাবলেই যে কথাগুলো  চালচিত্রের নকশা গড়ে তোলে সেগুলোই শুধু আমার সম্বল। অজস্র রঙিন পাখির উড়ন্ত ঝাঁকের মত কত অসংখ্য কথা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, কোনো একটা কাঠামোর খোঁজে। কিন্তু কাঠামোর নির্মাণ যে সম্পূর্ণই হয়নি। যেদিন হবে সেদিন তোমার আঁখিপল্লবে লিখব নিটোল কবিতা, তোমার গভীর ঠোঁটে তুলির টানে এঁকে দেব গাঢ় চুম্বন।

তুমি স্বপ্নের মত মায়াজ্যোৎস্নার আলোমাখা, জ্বরের সময়ে যেমন লাগে মায়ের মুখ। 
কুয়াশার শীতল ক্ষুধার্ত ভোরে নরম আলো ছড়িয়ে আসা খাবারের গাড়ি ভিয়েতনামের কোনো নাম না জানা গ্রামের উলঙ্গ শিশুর কাছে যে হাসি হয়ে ঝরে,
তুমিও তাই।

স্বপ্ন:

স্বার্থের শ্বদন্ত ঘাড়ে কাস্তের কোপ বসানোর আগেই তোমার ডাক আসে পরিত্যক্ত ইমারতের টেরাকোটা থেকে। ধুলোর ওপর আঙ্গুল দিয়ে আঁকা আল্পনা, ঝোড়ো হাওয়ায় ঘেঁটে যাবার আগেই তোমার বাড়ানো হাত আমায় বেঁধে নেবে আদুরে আলিঙ্গনে,
তোমার উত্তাপ জারিত করবে সিক্ততা।

এক সমুদ্র অপেক্ষার শেষে একটা মায়াবী সাঁঝবেলা আসে।
তোমার জন্য ছায়াপথ থেকে কুড়িয়ে আনি খসে পড়া তারা, হেমন্তের মরা ধান। তোমার গোলাপী হাতপদ্ম উপভোগ করে তাদের প্রাণ ফিরে পাবার উষ্ণমুহূর্ত। তোমার ভাগ্যরেখায় লেগে থাকে আমার নিবেদনের সুঘ্রাণ।

বুকে আলো নিয়ে একটা একটা করে রঙিন নাম-না-জানা ফুল  ফুটে ওঠে কলঙ্করঙা প্রদোষের আকাশে। ফসলি সমতল মিশে যায় দূরে মেঘ-জোয়ারি সমুদ্রে।

তুমি কাজলে সূর্যাস্ত লাগা বকের পালক ডুবিয়ে চিঠি লিখতে বসো আমার জন্য।
শান্ত প্রদীপের আলোয় তোমার মুখ হয়ে ওঠে গুহাচিত্র।

গাঁথা হয় আখরমালা।

বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত