তখন আমি কৃষ্ণনগর উইমেনস কলেজের বি এস সি ফার্স্ট ইয়ার। থাকি হোস্টেলে, আমাদের হোস্টেলের পিছনেই কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট গার্লস হোস্টেল আর বাগান। দিনের বেলাতেও কেমন যেন ছায়া ছায়া অন্ধকার। সামনেই আমাদের কলেজের তিনতলা বিল্ডিং, সঙ্গে বিশাল মাঠ। মাঠে বটগাছের মত ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছ। রাতে বারান্দা দিয়ে ডাইনিং রুমে যেতেও খুব ভয় লাগত আমার। ভাবছি মাকে চিঠি লিখব, এখানে আর থাকব না জানিয়ে। সেকেন্ড ইয়ারের মন্দিরাদি বলল, “বোকা মেয়ে, কেউ হোস্টেল ছাড়ে? তোর কোনো ভয় নেই, সবসময় আমার সঙ্গে থাকবি।” সত্যি মনুদি খুব ভালো, আমার ভয় উধাও হয়ে গেল। একদিন চুপিচুপি বলল, “আজ রাত বারোটায় আমরা প্ল্যানচেটে বসব। ম্যাথস টিচার কিছুদিন আগে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, তাঁকে ডাকব।” শুনেই আমার গা কাঁপছে। “মনুদি আমায় ছেড়ে দাও। ভূতে আমার খুব ভয়। আমি ট্রিগোনোমেট্রি ভুল করতাম, স্যার খুব বকতেন।” মনুদি ফিসফিস করে বলল, “ওরে বুদ্ধু ঐজন্যেই তো স্যারকে ডাকব, স্যার অঙ্ক বুঝিয়ে দেবেন।” রাত্রে ওদের ঘরে ঢুকে দেখি একটা মাত্র মোমবাতি জ্বলছে। মনুদির নির্দেশে সবাই একমনে স্যারকে ডাকছি। টেবিলের মাঝখানে আমার হাত, হাতে কাগজ-কলম। আমাকে ছুঁয়ে আছে অন্যরা। হঠাৎ মোমবাতিটা নিভে গেল, সেইসময় কাচের জানলায় টকটক শব্দ। মনুদি চাপা গলায় বলল, “স্যার এসে গেছেন, এবার ঘরে ঢুকবেন। আমার সারা শরীর কাঁপছে। তখনই একটা আলোর রেখা পড়ল মনুদির বিছানায়। মনে হল সাদা চাদরে ঢাকা ডেডবডি। মনুদি কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “স্যার তোকে অঙ্ক শেখাতে ডাকছেন।” তারপর --- জ্ঞান ফিরতে দেখি মনুদির বিছানায় আমি, ঘরে হাসির হুল্লোড়। মলি বলল, “দেখলি তো কেমন শয়তান মনুদি, তোকে বুদ্ধু বানাল!” বুদ্ধুই বটে আমি, একটুও বুঝতে পারলাম না! আমি রেগে বললাম, “ভয়ে আমি মরে ভূত হলে কী হত?” এবার দরজায় ঠকঠক আর মেট্রনের গলা শুনে মনুদি আলো নিভিয়ে বলল, “চুপ কর বুদ্ধু, না হলে মেট্রন গালমন্দ দিয়ে সবাইকে ভূত বানিয়ে দেবে!”