তমসা কলিং

কল্যাণী, নদীয়া

আজকের টিভি শো-টার জন্য খুব উত্তেজিত বিনতা। সাম্প্রতিক কালে কার্সিয়াং শহরের ডাউহিলের ওপর যে গবেষণামূলক কাজ, তার জন্যই শোতে আমন্ত্রণ। শো শেষে বাড়িতে ফিরে বিনতা ফোন ঘাটতে বসে গেল অবসরে। ঠিক এই সময় একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঢুকল ফোনে। তমসা রয়। কুয়াশাঘেরা পাহাড় কভার ফটোতে আর প্রোফাইলে চাঁদ ওঠা অন্ধকার আকাশ। বিনতা বন্ধুত্ব গ্রহণ করল। রাতে তমসা এসএমএস করে বিনতাকে।
“আপনার আজকের শো টা দারুণ।”
“ধন্যবাদ”
“আমিও ডাউহিলের রাস্তায় রাত কাটিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসে গেছে।”
“কী রকম?”
“একা ডাউহিলের রাস্তায় আমি হঠাৎ আর্তচিৎকার শুনি কারও। তারপর পিঠে অনুভব করি তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর থেকেই কেউ আমায় দেখতে পাচ্ছে না আর দেখলেও ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আমি যেখানে খুশি পৌঁছে যেতে পারছি।”
“রিয়েলি?”
“আসব আমি?”
“এখন থাক”
 হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় আর দূরে কর্কশস্বরে ডেকে ওঠে কোনো পাখি। বিনতা ফোনটা রেখেই ওর স্বামী রুদ্রের কাছে দৌঁড়ে যায়। ফোনে আবার ভেসে  ওঠে “Tamasa calling!”      
এরপর কিছুদিন সব চুপচাপ। বিনতা মাস ছয়েক পর রিশপ পাহাড়ে ঘুরতে যায় রুদ্রের সঙ্গে। রাতে হোটেলের ঘরে ওকে রেখে রুদ্র কাজে বেরিয়েছে। তমসার মেসেজ ঢোকে ফোনে।
“আমিও চলে এলাম আপনার পেছন পেছন রিশপে।”
“মানে?”
“কাঠের হোমস্টের ওপরের ঘরে আপনি আর খাদের ধারে আমি। দেখবেন?”
তমসার ভিডিও কলটা বিনতা এবার ধরেই ফেলে। বিকেলে দেখে আসা ওই খাদটাই তো স্কিনের ওপারে। কাউকে দেখতে পায় না বিনতা তবে শুনতে পায় হাড়হিম করা শব্দ। ফোনটা অফ করে, কিন্তু বাইরেও তো ভৌতিক পরিবেশ। কুয়াশা ঘেরা আবছায়া, ঝিঁঝিঁর শব্দ, ডানা ঝাপটাচ্ছে কোনো পাহাড়ি পাখি। 
 ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি পথে দৌড়ে রুদ্রকে খুঁজে পায় বিনতা।
“আমি এখানে থাকব না।”
“কেন?”
“ভালো লাগছে না এখানে।”
 “তমসা ফোন করেছিল?” রুদ্র জানতে চায়।
“তুমি জানো?”
“হা হা, ওটা তোমার বন্ধু নমিতার ফেক প্রোফাইল। ও এখানেই আছে।”
“এসব কী?”
“সাহসী বন্ধুকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা আর আমি একটু ওকে সাহায্য করছিলাম আর কী!”
বিনতা দেখতে পায় পাহাড়ি পথ ধরে ফোন হাতে এগিয়ে আসছে নমিতা।

বৈশাখী ২০২৪