মহাদেব ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে লক্ষ্মীবালার বিয়ে হয়েছিল আজ থেকে বছর ষাটেক আগে। লক্ষ্মীবালার বয়স তখন বছর তেরো। খুবই রোগাসোগা চেহারা ছিল লক্ষ্মীবালার। ঐ বয়সে শরীরে যৌবনের চিহ্নগুলো সেভাবে ফুটে ওঠেনি। মহাদেব তখন যুবা পুরুষ। গ্রামের মোড়লের মেয়ে টগরকে মনে ধরেছিল মহাদেবের। বেশ ডাগরডোগর চেহারা ছিল টগরের। কিন্তু নিচু জাতের মেয়ের সঙ্গে যদি হরিপদ ভট্টাচার্য্য নিজের ছেলের বিয়ে দেন, তাহলে হরিপদের নরকবাস কেউ ঠেকাতে পারবে না, এটাই হরিপদের মা বরদাসুন্দরী বিধান দিলেন। সুতরাং ঠাকুমা এবং বাবার মিলিত সিদ্ধান্তের ফলে, মহাদেবের মনের বাসনা পূর্ণ হল না। মনে যন্ত্রণার পাথর নিয়ে, হাঁটুর বয়সি মেয়ে লক্ষ্মীবালাকে বিয়ে করতে বাধ্য হল মহাদেব। বিয়ের সময় মহাদেবের বড় জেঠিমা বলেছিলেন, “লক্ষ্মীবালা'র নামটা পালটাতে হবে। আমরা ওকে দুর্গা বলে ডাকব। মহাদেবের বৌ লক্ষ্মী – এ কথা, বাপের জম্মে কেউ শুনেছে নাকি!” “আমার 'লক্ষ্মীবালা' নামটা আমাদের গুরুদেব ভবানন্দজী রেখেছিলেন। উনি একজন সিদ্ধপুরুষ। ওনার দেওয়া নামটা কি পালটে দেওয়া উচিত হবে? বরঞ্চ আপনাদের বাড়ির ছেলের নামটা পালটে নারায়ণ রেখে দিন।” ঘোমটার আড়াল থেকে নিম্ন কিন্তু তীক্ষ্মস্বরে বলেছিল লক্ষ্মীবালা। যদিও নামটা দিয়েছিলেন লক্ষ্মীবালার ঠাকুমা নিরুপমাদেবী। “হায় ভগবান, এ কোন মেয়েকে ঘরের বৌ করে আনা হল। শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেই নিজের বরের নাম বদলে দিতে চাইছে।” আঁতকে উঠেছিলেন জেঠিমা। “আঃ..., কারোর নাম বদলানোর দরকার নেই। ভবানন্দজী কি তোমাদের গুরুদেব?” জানতে চান মহাদেবের জেঠু। “উনি আমাদের গুরুদেবের গুরুদেব।” নম্রভাবে বলে লক্ষ্মীবালা। “তাহলে তো উনি নমস্য পুরুষ।” কাল্পনিক চরিত্রের উদ্দেশ্যে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন মহাদেবের জেঠু। যাইহোক, বয়সে এবং উচ্চতায় ছোট হলেও, বুদ্ধিতে এবং গলার স্বরে যে বড়দের থেকে পিছিয়ে নেই সে, এই প্রমাণ লক্ষ্মীবালা প্রথম দিনেই দিয়ে দিল। ফুলশয্যার রাতে একহাত ঘোমটা টেনে খাটে বসেছিল লক্ষ্মীবালা। ননদ ও জা'য়ের দল ঘিরে রেখেছিল তাকে। মহাদেব ঘরে ঢোকার পর স্ত্রী-আচার পালন করা হয়। কিন্তু মহিলাকুল ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর লক্ষ্মীবালার স্বরূপের সঙ্গে পরিচিত হল মহাদেব। “শুনলাম তোমার নাকি মোড়লের মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে?” ঘোমটার আবডাল সরিয়ে জানতে চায় তেরো বছরের লক্ষ্মীবালা। “এসব কথা তোমাকে কে বলল?” তোতলাতে থাকে লক্ষ্মীবালার দ্বিগুণ বয়সের স্বামী। “সেসব কথা তোমার জানার দরকার নেই। বিয়ের আগের ভালোবাসার জন্য যদি বিয়ের পরেও পরাণে ব্যথা হয়, তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই। তবে সেই ব্যথা বুকের ভেতরে পাথরচাপা দিয়ে রেখে দেবে। কিন্তু সেই পরাণের ব্যথা নিয়ে যদি মাতামাতি করতে যাও, তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে পাথরচাপা দিয়ে মেরে ফেলব। এটা লক্ষ্মীবালা বামনীর সাবধান বাণী।” ফুলশয্যার রাতে যেসব মধুময় বাণী মহাদেবের কানের ভেতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করল, তাতে সে কিঞ্চিৎ ভীত হয়ে পড়ে। নিজের ভবিষ্যতের সংসারিক কর্মপন্থা সেই মুহূর্তে স্থির করে নেয় মহাদেব। এরপর থেকে সারাজীবন মহাদেব ভট্টাচার্য্য নিজের সমস্ত ইচ্ছার জলাঞ্জলি দিয়ে লক্ষ্মীবালা নামক মহিলার ক্রীতদাস হয়ে কাটিয়ে দিল। তাদের ছেলেমেয়েরাও জানত, সংসারে মায়ের কথাই শেষ কথা। সংসারের দায়িত্বের বেশিরভাগ এসে পড়েছিল লক্ষ্মীবালার কাঁধে। কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত মনের জোর আর অবশিষ্ট ছিল না মহাদেবের। এভাবে ষাট বছর একসঙ্গে কাটিয়ে প্রায় ছিয়াশি বছর বয়সে চুরি করে সন্দেশ খেতে গিয়ে, সেই সন্দেশ গলায় আটকে মৃত্যু হয় মহাদেবের। “ওগো আমার কী সব্বোনাশ হল গো...ও বলাই, ও পুঁটি, তোদের বাপ কতবড় বেইমান দেখলি! আমার কথা একটুও ভাবল না মানুষটা। সারাজীবনে লোকটা আমায় এতটুকু সুখ দিল না। খাটতে খাটতে আমার দুধে-আলতা রঙ কালো হয়ে গেল...,” সুর করে কাঁদতে লাগল লক্ষ্মীবালা। ব্রাহ্মণ মানুষ, তার উপর ছিয়াশি বছর বয়সে অপমৃত্যু, তাই মৃত্যুর পরেই মহাদেব ভট্টাচার্য্য বাড়ির সামনের বেলগাছে ব্রহ্মদৈত্য হয়ে থেকে গেল। গাছে পা দুলাতে দুলাতে লক্ষ্মীবালার নাকি কান্না শুনে ব্রহ্মদৈত্যের তো বিষম খাওয়ার অবস্থা। ঐ কালো রঙকেও দুধে-আলতা বলে চালাতে চাইছে দজ্জাল মেয়েমানুষটা! ইচ্ছে করছে গাছ থেকে নেমে ঘাড়টা মটকে দিই–মনে মনে বললেও, কেমন যেন ভয় পেল ব্রহ্মদৈত্যমশাই। “কেঁমন আঁছ, মহাদেঁবদাঁ?” একটা পেত্নি এসে দাঁড়িয়েছে ব্রহ্মদৈত্য-মহাদেবের সামনে। “আরে ! টগর ! তুই এখানে?” ব্রহ্মদৈত্যের ঘরঘরে আওয়াজের গলা উত্তেজনায় কাঁপছে। সদ্য যৌবনে পদার্পণকারী যুবকের মত ব্রহ্মদৈত্যের বুকের ভেতর আরম্ভ হয়ে গেল উথালপাথাল। পেত্নি টগর লজ্জায় মুখটা নিচু করে রয়েছে। অপরদিকে উঠোন থেকে মড়াকান্না ভেসে আসছে। “সুগারের রোগী। তবুও মিষ্টির লোভ গেল না...হাতের কাছে পেলে, মানুষটাকে কয়েক ঘা দিয়ে দিতাম। ওগো...., তুমি আমাকে রেখে কোথায় চলে গেলে গো...,” লক্ষ্মীবালার চিৎকারে মাঝে মাঝেই পিলে চমকে উঠছে ব্রহ্মদৈত্যের। মহাদেব ভট্টাচার্য্য নিমগাছের উপর থেকে দেখল, তার ছেলে আর জামাই তার মৃতদেহটা কাঁধে তুলে নিল। তারপর 'হরিবোল' ধ্বনি দিতে দিতে শ্মশানের দিকে এগিয়ে চলল শবযাত্রা। ছেলেটার চোখ দুটো ছলছল করছে। লক্ষ্মীবালার মুখটাও যেন কেমন শুকনো শুকনো। হঠাৎ করেই মহাদেবের মনটা খারাপ হয়ে যায়। দজ্জাল হলেও লক্ষ্মীবালা মানুষটা খুব একটা খারাপ ছিল না। শক্ত হাতে সংসারের রাশটা টেনে রেখেছিল। ছেলেমেয়েগুলো ওদের মাকে ভীষণ ভয় পেত। তাই বখাটে বাচ্চাদের দলে নাম লেখানোর সাহস দেখায় নি। মহাদেবের পৈত্রিক সম্পত্তি নেহাত কম ছিল না। সেগুলো যক্ষের মত আগলে রেখেছিল লক্ষ্মীবালা। “যাঁই বঁল মহাঁদেবদাঁ, তোঁমার বৌঁটা কিন্তু ভীঁষণ দঁজ্জাল। তুঁমি ভাঁলোমানুষ, তাঁই ওঁর সঙ্গে এঁতদিন ঘর কঁরেছ। সেঁরকম লোঁকের হাতে পঁড়লে, কঁবে ঐ রকম মঁহিলাকে ঘাড়ধাঁক্কা দিঁয়ে বের করে দিঁত।” বলল টগর। টগরের কথাটা খুব একটা পছন্দ হয় না মহাদেবের। কথাটা হয়ত সত্যি, কিন্তু তবুও অন্য কেউ লক্ষ্মীবালার নিন্দে করুক, এটা আজও মেনে নিতে পারে না মহাদেব। তাই প্রসঙ্গ পালটে দেয়। “তুই কীভাবে এখানে এলি টগর?” জানতে চায় মহাদেব। “তুঁমি তো আঁমার কোন খঁবরই রাঁখতে না, তাঁই জাঁনতে পাঁরনি। ট্রেঁন এ্যাঁক্সিডেন্টে মরেঁছি আঁমি।” পেত্নির গলায় যথেষ্ট অভিমান। “আমার অবস্থা তো সবই জানিস। তোর খবরাখবর নেওয়ার মত অবস্থায় ছিলাম না আমি। তবে তোর মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম!”একটু উদাস গলায় বলে ব্রহ্মদৈত্য। “এখঁন আঁমি গেঁলাম গো মহাঁদেবদাঁ। কাঁল আঁবার আঁসব।” চলে গেল টগর। ও থাকে একটু দূরে কেওড়া গাছে। যখন মানুষ ছিল, মহাদেবের দিকে নজর ছিল টগরের। হরিপদ ভট্টাচার্য্যের সম্পত্তি নেহাত কম ছিল না। একবার মহাদেবের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলে, পায়ের উপর পা তুলে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারত টগর। কিন্তু মনুষ্য জীবনে সেই সাধ তার পূরণ হয়নি। মৃত্যুর পর অতিপ্রাকৃতের জগতে এসে, সেই অপূর্ণ সাধ এবার পূরণ করবে টগর। টগর হল কেওড়া গাছের পেত্নি। সুতরাং ভৌতিক সমাজে সে খুব একটা উন্নতমানের জায়গা নিতে পারেনি। কিন্তু যদি ব্রহ্মদৈত্যকে বিয়ে করতে পারে, তাহলে টগরের সম্মান অনেক বেড়ে যাবে। মামদো, মেছোভূত, গেছোভূত, পেত্নি, শাঁকচুন্নি সবাই খুব শ্রদ্ধা করে ব্রহ্মদৈত্যকে। গুরু বলে মান্যি করে। টগর ভাবে যদি সে মহাদেবকে বিয়ে করতে পারে, তাহলে সেও ব্রহ্মদৈত্যের বউ হওয়ার সুবাদে গুরুপত্নীর সম্মান পাবে। সেই রাতে পাশের গ্রামের ভবানী ঘোষের জামাই অনেকগুলো মিষ্টির প্যাকেট মুটের মাথায় চাপিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসছিল কেওড়া গাছের তলা দিয়ে। সেই সময় সেখান থেকে একটা বড়সড় প্যাকেট সরিয়ে নিল টগর। পেত্নিরা হাত অনেক লম্বা করতে পারে, সুতরাং একটা প্যাকেট ঝুড়ি থেকে তুলে নেওয়া কোন সমস্যাই নয়। “ মহাঁদেবঁদা, তু়ঁমি সন্দেশ খেঁতে ভাঁলোবাস। তাঁই নিয়ে এঁলাম।” টগররের কথায় ব্রহ্মদৈত্যের চোখে জল চলে এল। এই সন্দেশ চুরি করে খেতে গিয়েই তো মহাদেবের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল। টগর তাকে এত ভালোবাসে! সাত-আটটা সন্দেশ টপাটপ খেয়ে নিয়ে ঢেকুর তুলল মহাদেব। ব্রহ্মদৈত্যের তো আর রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ চিনির ভয় নেই। তাই যতখুশি মিষ্টি খাওয়া যেতেই পারে। “তুই বড্ড ভালো রে টগর। আমার কত যত্ন নিচ্ছিস।” “ব্রহ্মদৈঁত্যঠাঁকুর, আঁমার ছেঁলের কাল অঁন্নপ্রাশন। আঁপনাকেঁ পৌরোহিঁত্য কঁরতে হঁবে।” একটা কালো শুঁটকো মেছোভূত এসে বলে। “সে কী! ভূতের ছেলের অন্নপ্রাশন! এমন কথা তো বাপের জন্মে শুনিনি!” “হেঁ, হেঁ, কেঁমন কঁরে শুঁনবেন। আঁপনি তো সঁবে পঁটল তুলেছেঁন। ঐ দেঁখুন আঁজ আঁপনার শ্রাঁদ্ধ। আঁপনার বৌ সাঁদা থাঁন পরে ঘুঁরে বেড়াঁচ্ছে।” সত্যিই তো। অপমৃত্যু হয়েছে। তাই তিনদিনে শ্রাদ্ধের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্মীবালা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। সেই দাপট আর নেই। মহাদেবের মনের ভেতরটা কেমন হু হু করে ওঠে। “আঁপনি আঁমার ঘঁরে আঁসবেন তো?” মেছোভূত কাঁচুমাচু মুখে জানতে চায়। “নিঁশ্চয়ই যাবেন। তবে তোঁমাদের গুঁরুদেব কিন্তু সন্দেশ খেঁতে খুব ভাঁলোবাসেন, এঁটা মাঁথায় রেখো।” জানিয়ে দেয় টগর। “আঁজ্ঞে, সেঁটা নিয়ে আঁপনাদের চিন্তা কঁরতে হবে নাঁ।” প্রণাম জানিয়ে চলে যায় মেছোভূত। বেশ ভালোই কাটছে মহাদেবের। টগরের সঙ্গে প্রেমটাও বেশ জমে উঠেছে। মাঝে মাঝে ফেলে আসা জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। তখন হয়ত একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মানুষ মরার পর ব্রহ্মদৈত্য হতে পারে। কিন্তু ব্রহ্মদৈত্যের পক্ষে কি আর মনুষ্যজীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব? তাই টগরই তার ভবিতব্য। এছাড়া টগর যথেষ্ট যত্নবান মহাদেবের প্রতি। প্রায় পাঁচমাস হয়ে গেল মহাদেবের এই ব্রহ্মদৈত্যের জীবন। পৌরোহিত্য করে উপহার নেহাত কম পাচ্ছে না। এবার সে টগরকে বিয়ে করবে। যদিও তাদের বিয়ে নিয়ে ভূতেদের সমাজে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছে। ব্রহ্মদৈত্য হয়ে পেত্নিকে বিয়ে করছে, এটা বাকি ভূতেরা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তবুও বিয়েটা হচ্ছে আগামীকাল। “জানিস পুঁটি, ঐ বেলগাছের তলা দিয়ে গেলেই আমার কেমন যেন মনে হয়, তোর বাবা আশেপাশেই কোথাও রয়েছে।” মেয়েকে বলে লক্ষ্মীবালা। “ওটা তোমার মনের ভুল মা। বাবা প্রায় পাঁচ মাস হল, আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তুমি আর বাবার জন্য মনখারাপ করবে না। আমরা সবাই তো আছি।” একটু অভিমানের সুর পুঁটির গলায়। “আসলে লোকটার সঙ্গে প্রায় ষাট বছর সংসার করলাম। অশান্তি, রাগ, অভিমান হলেও আমরা একসাথে থেকেছি। এগুলো আমার অভ্যাস। তেমনই তোর বাবার প্রতিটা নিশ্বাসের শব্দ আমার চেনা, ও পাশ দিয়ে গেলে আমি টের পেতাম। আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে, তোর বাবা আশেপাশেই রয়েছে।” “তুমি থাক এই বেলতলায়, আমি ঘরে গেলাম।” পুঁটি দুমদুম করে পা ফেলে ঘরে গিয়ে ঢোকে। “না, আমার ভুল হচ্ছে না। মিনসেটা আশেপাশেই কোথাও রয়েছে। শুনছো, কোথায় তুমি?” হুংকার ছাড়ে লক্ষ্মীবালা। ওদিকে বেলগাছের উপর সবে বিয়ে শুরু হয়েছিল। ব্রহ্মদৈত্যমশাই পরিচিত হুংকার শুনে কেঁপে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাতের মালাটা গেল পড়ে। পা গেল পিছলে। সেই পায়ে লেগে মগডাল থেকে বড় একটা বেল গিয়ে পড়ল লক্ষ্মীবালার ব্রহ্মতালুতে। সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীবালার ভবলীলা সাঙ্গ হল। ব্রহ্মদৈত্যমশাই ঠকঠক করে কাঁপছে। তার সামনে তারই হাত থেকে ফসকে যাওয়া মালাটা পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লক্ষ্মীবালা। মালাটা হাত ফসকে মোক্ষম জায়গায় গিয়ে পড়েছে। “তোঁমাকে ফুঁলশয্যার রাঁতেই সাঁবধান করে দিঁয়েছিলাম, পঁরাণের ব্যাথা নিয়ে মাঁতামাতি কঁরবে না। তুঁমি আঁমার কঁথা শুঁনলে না। এখন লঁক্ষ্মীবালা বাঁমনী এসে গেঁছে, এবার ঝাঁটা মেরে তোঁমার ব্যথা দূঁর কঁরব।” হুংকার দিয়ে ওঠে বেলগাছের পেত্নী লক্ষ্মীবালা। ব্রহ্মদৈত্য মহাদেবের বিয়ে অবশ্য সেইদিনই হয়েছিল। শুধুমাত্র কনে পালটে গিয়েছিল। কেওড়া গাছের টগর পেত্নির বদলে বিয়ে হয়েছিল বেলগাছের লক্ষ্মীবালা পেত্নির সঙ্গে। এই বিয়ে নিয়ে অবশ্য ভূতেদের সমাজে কোন আপত্তি ছিল না। তবে ব্রহ্মদৈত্যমশাই এতে খুশি হয়েছিলেন নাকি দুঃখ পেয়েছিলেন সেটা বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, লক্ষ্মীবালা-পেত্নীর কথা অমান্য করার দুঃসাহস কিন্তু মহাদেব-ব্রহ্মদৈত্য দেখাতে পারেনি।।