লাস্ট ট্রেন

শিলিগুড়ি, দার্জিলিং

সাধারণত আমি প্রতিদিন সন্ধে সাতটা পাঁচের ট্রেন ধরে শিয়ালদা ফিরি। কখনও ওটা মিস্ হয়ে গেলে সাতটা পঁয়তাল্লিশেরটা ধরতে হয়। এর চেয়ে বেশি দেরি কখনও হয় না। আজ শেষ মুহূর্তে অফিসের নতুন ছেলেটা এতগুলো ফাইল নিয়ে এল যে সব দেখেশুনে সই করতেই আটটা বেজে গেল। অফিস থেকে বেরিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে স্টেশনে এসে লাস্ট ট্রেনে উঠেছি। অত ব্যস্ততার মধ্যেও বাকি প্যাসেঞ্জারদের দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। এই বগিটা এত ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও অন্য ভিড় বগিগুলোতে সবাই ধাক্কাধাক্কি করে উঠছিল। 

আজ গরম খুব বেশি। তবে এখন ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতে বেশ লাগছে। উল্টোপাশের দরজার সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে। পুরো ফাঁকা বগিতে আমরা এই দুটো প্রাণী। জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেটাকে, “কোথায় নামবে তুমি?” 
“নৈহাটি।”
“আমি শিয়ালদা।”
“এই বগিতে কেন উঠলেন?”
“ফাঁকা পেলাম তাই।”
“কেউ ওঠে না এখন আর। সবাই ভয় পায়।”
“ভয়? কীসের ভয়? আর তুমি যে উঠেছ...”
“আমি ভয় পাই না।”

ছেলেটার কথা শুনে আমার কেমন একটা খটকা লাগল। আমি মোবাইলে এই ট্রেনের নাম সার্চ করে পুরনো খবর ঘেঁটে দেখতে লাগলাম। খবরে বলছে, গত বছর ট্রেনের এই বগি থেকে নিরঞ্জন নামের একটা ছেলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকেই নাকি এই বগিতে ভয়ে কেউ ওঠে না।

আমি ঈষৎ হেসে ছেলেটাকে বললাম, “একটা ছেলে আত্মহত্যা করেছিল জন্য সবাই ভয় পায়। অদ্ভুত! বিজ্ঞান এত এগিয়েছে। তারপরেও মানুষ ভূতের ভয় পায়।”
ছেলেটা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ না ঘুরিয়েই বলল, “ওটা আত্মহত্যা নয়। খুন ছিল।”
আমি অবাক হলাম, “খুন!”
“হ্যাঁ, খুন। নিরঞ্জনকে ওর প্রিয় বন্ধু দৈবায়ন খুন করার জন্য ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। তারপরে অবশ্য দৈবায়নও বাঁচেনি। তার ঠিক কয়েকদিন পরেই তাকে এক অজানা শক্তি এই চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। নিরঞ্জনের মতোই স্পট ডেড!”
“তুমি এসব কীভাবে জানলে?”
ছেলেটা আমার দিকে ঘুরে বলল, “আমি দৈবায়ন।”

বৈশাখী ২০২৪