“এই যে তুমি সারারাত জেগে জেগে রাগ সংগীত শোনো, তোমার ভালো লাগে? তোমার কোনো কষ্ট আছে? এই যে এত ফুল কিনে ফুলদানীতে রেখেছ আজ.কিছু কারণ আছে তো নিশ্চয়ই!” “সবকিছুর কারণ খুঁজতে নেই, বুঝলে। সব সত্যের সামনে দাঁড়াতে নেই। না, কোন কষ্ট আমার নেই, আবার আছেও হয়তো!” “তুমি আজকাল বড্ড শক্ত শক্ত কথা বলো।” “কোথায় শক্ত! জলবৎ তরল কথাই তো বলি। এই যে রাগ সংগীত, এই যে গজল ঠুমরি এসব গতজন্মের স্মৃতি। এ তো আমার রক্তে মিশে আছে।” “সে কী! একটু খুলে বলো, শুনি।” “বছর বারো আগে এক বৈশাখের সকালে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে বকুল এসেছিল। দ্বিতীয় বৈশাখ। সেদিনও আমি গজল শুনছিলাম, জগজিৎ সিং।” “তোমার প্রিয় শিল্পী।” “হুম। তারপর তো সবটাই জান। বকুলের কাছে আসা, চলে যাওয়া।” তা”র মানে আজ বারো বছর পূর্ণ হল!” “হল! তবে সেজন্য নয়। জাতিস্মর না হলেও বলতে পারি বেনারস, লক্ষ্ণৌ বা দিল্লীর শহরগুলি, সেই শহরের অলিগলি আমাকে ডাকে। আমার খুব চেনা মনে হয়। একটা বাইজিকে ভালোবাসতাম। অসাধারণ নাচত সে। কী তার রূপের ছটা। কোথায় যে হারিয়ে গেল! আমি কেবল তার ফর্সা পা দুটো দেখতে পাই কল্পনায়, ঘুমচোখে। পায়ে জড়ানো ঘুঙুর। মাঝে মাঝে দৌড়ে চলে যায় একটু দেখা দিয়েই। ঘুমের ভিতর সে আসে অথচ বাস্তবে সে কোথায়! কোথাও নেই। রাতের বেলায় মনে হয় এই তো এসে যেন দাঁড়াবে আমার সামনে। অথচ তার মুখটাই তো মনে নেই আমার।” “তাহলে বকুল বা অন্য কারও ভিতর কি সে ছায়া দেখেছিলে তুমি?” “না, তাকে আমি খুঁজে চলেছি। এরা কেউ নয়। এই যে রাগগুলি শুনি। রাত জেগে থাকি। আসলে সে আসবে বলে। একদিন নিশ্চয়ই সে আসবে। আসতে তাকে হবেই।” দশ বছর ধরে বাড়িটায় কেউ থাকে না। যিনি ছিলেন তিনি একটা দুর্ঘটনার পর আর ফেরেননি। পাড়ার লোকেরা মাঝে মাঝে গভীর রাতে শুনতে পান চাপা স্বরের কথাবার্তা। ভেতর থেকে ভাসে আসা ঠুমরি গজল...বেগম আখতার, জগজিৎ সিং...গন্ধ আসে রজনীগন্ধা কিংবা বেল...একটা আরামকেদারা হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খায় তখন...
1 Response
বেশ একটা হাল্কা গা ছমছমের সুরেলা চাদর!
ভালো লাগল।