একটি ভূত বা স্ট্র্যাটেজিক প্রেমের গপ্পো

গড়িয়াহাট রোড, কলকাতা

 


পটার মন-টন খুব খারাপ। 
 
বছর বাইশের পটা বেঁটেখাটো, গাঁট্টাগোঁট্টা, কালোকুলো। পড়াশোনায় লবডঙ্কা। দু’বার হায়ার সেকেন্ডারিতে গাড্ডু মেরে গত বছর কলেজে ঢুকেছে। তবে ফুটবলে দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার। বল নিয়ে যখন দুর্দান্ত স্পিডে অপোনেন্টের গোলের দিকে ঘোঁতঘোঁত করে দৌড়য়, এই মফস্বল শহরের দর্শকদের থেকে সমবেত আওয়াজ ওঠে “মারাদোনা” “মারাদোনা।” গত বছরই ডিস্ট্রিক্ট খেলে ফেলেছে। বন্ধুমহলের স্বপ্ন - আর দু-তিন বছরের মধ্যেই পটা বেঙ্গল খেলবে, তারপরই আইএসএল। 
 
তো সে ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে। এদিকে বর্তমানের ক্যাঁচালটা বেশ গভীর। পটা প্রেমে পড়েছে। একটা বাইশ বছরের ছেলের প্রেমে পড়াটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু মুশকিলটা হল পটা ফেঁসেছে টেঁপির পেনাল্টি বক্সে।
 
বছর কুড়ির টেঁপি ছোটবেলায়ই মা-কে হারিয়েছে। বাবা অজিতেশ নিপাট গোবেচারা, ডিস্ট্রিক্ট অফিসের কেরানি। আঁটোসাঁটো গড়নের টেঁপির শ্যামলামুখে বড়বড় চোখে ব্যক্তিত্ব বেশ গম্ভীর। বাবা-মেয়ের ছোট্ট সংসারে টেঁপিই সর্বময়ী কর্ত্রী। মেয়েটা দুর্দান্ত কাজের, তবে ছোটবেলা থেকেই সংসার সামলে মেজাজটা সবসময়ই মিলিটারি, মুখের রাখঢাক নেই, কাজেই সবাই তাকে একটু সমঝে চলে। আর খ্যাঁচাকলটা সেখানেই – বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? 
 
টিমের গোলকিপার পাঁচুকে ধরেছিল পটা। পাঁচু টেঁপির সঙ্গে এক ক্লাসে পড়েছে। খানিকটা দহরম মহরম আছে। পাঁচু বন্ধুকৃত্য করতে এক সকালবেলা টেঁপির বাড়ি হাজির। স্নান সারছিল টেঁপি। দু-তিনবার ডাকাডাকির পর মাথায় ভেজা গামছা জড়িয়ে বেরিয়ে এলো, “কে? ও – পাঁচু! সাতসকালে..কী ব্যাপার?” 
 
পাঁচু ঢোঁক গিলল, “ব্যাপার সেরকম কিছু নয়…মানে…তোকেই দরকার একটু।” 
 
গামছা দিয়ে চুলের জল ঝাড়তে ঝাড়তে টেঁপি বলল, “আমাকে দরকার! কী ব্যাপারে?”
 
“ব্যাপার বেশ গুরুচরণ! মানে...আমাদের পটা...চিনিস তো?”
 
“ফুটবলার পটা? তো? কী হয়েছে?”
 
পাঁচু মাথা টাথা চুলকে, বুকে আর গলায় বিস্তর সাহস এনে বলেই ফেলল কথাটা, “না …মানে ইয়ে পটা বোধহয় তোকে কিছু বলতে চায়……ঠিক ইয়ে পাচ্ছে না….মানে……ও বোধহয় তোর ব্যাপারে বেশ ইয়ে হয়ে পড়েছে…….মানে…….খুব ইয়ে আর কী...”
 
এরপর কেউ কেউ নাকি দেখেছে - পাঁচু চটি হাতে প্রাণপণে দৌড়ে বেরোচ্ছে টেঁপির বাড়ি থেকে, দরজায় দাঁড়িয়ে টেঁপি, মুখ লাল, হাতে খুন্তি! 
 
দুদিন পর। সন্ধের অন্ধকারে সরকারদের রকে বসেছিল পটা। মন মেজাজ পঞ্চতিক্তঘৃত একেবারে। কী করে টেঁপির মনের পেনাল্টি বক্সে ঢোকা যায়, সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ভাবছিল সে। হঠাৎ হাওয়ার মতো পাশে এসে বসল কেউ। ভীষণরকম চমকাল পটা, “কে?”
 
“কী রে? ভয় পেয়ে গেলি?” অন্ধকারের ভেতর একটা কুয়াশা মিহিন ছায়াশরীর, কোটরগত চোখদুটোর ভেতরে যেন টর্চ জ্বলছে।
 
“কে? কে আ...আপনি?”
 
“অবনীমোহন.......টেঁপির বাপ অজিতেশের ঠাকুরদা, পঞ্চাশ বছর আগে দেহ ছেড়েছি, কিন্তু এই জায়গাটার মায়া আর ছাড়তে পারছি নে”
 
বোঝো কান্ড! ঝুপসি অন্ধকারে সে কি না বসে আছে এক ভূতের পাশে! একটা ঠাণ্ডা স্রোত পটার শিরদাঁড়া বেয়ে হিলহিল করে নেমে গেল! 
 
পটা অবিশ্যি সাহসী ছেলে। প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও, একটা স্ট্র্যাটেজি মাথায় আসতে সাহসটা ধাঁই করে বেড়ে গেল। ড্রিবলে গোল আসছে না। এবার ভূত-ঠাকুরদার সঙ্গে ওয়াল-পাস খেলে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখবে।
 
“কেমন আছেন দাদু?”
 
“আছি দিব্যি...তা কোন ক্লাসে উঠলি এবার?”
 
“ক্লাস কী দাদু! আমি তো এখন কলেজে - সেকেন্ড ইয়ার!”
 
“বলিস কি! স্কুলে তো বছর বছর ফেল মারতি...ফেল মারতে মারতে সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলি! দিনকাল কী পড়ল!” 
 
চটলে হবে না। পটা মোলায়েম হাসল, “তা আপনার শরীর-টরির কেমন দাদু?” 
 
“ভুতের আবার শরীর কী রে...সবই তো হাওয়া! তবে হাওয়ার শরীরেও পেটটা সবসময়ই চুঁইচুঁই করে...ছাড়ল...উহু উউউ!”
 
পটা ঘাবড়ে গেল, “কী ছাড়ল? পেট?”
 
“ধুস গাধা, কচুপোড়া খা, …আরে দেখছিস না, রামলখন আলুর চপ ছাড়ল... কড়াইতে! আঃ!” 
 
ও! তাও ভালো! অবিশ্যি অবনীমোহনের দোষ নেই। রামলখনের সাত দিনের বাসি শ্যাওলারঙা তেলে ভাজা আলুর চপ আর বেগুনিরও যা স্বাদ! ভূতদাদুও তাহলে রামলখনের ফ্যান! 
 
পটা আর দেরি না করে ওয়াল-পাসটা বাড়াল, “তা…..ইয়ে……বলছিলুম কী দাদু……টেঁপির বিয়ে-টিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন না কেউ? বয়সও তো হল!”
 
“বিয়ে? হ্যাঁ, বিয়ে তো একটা দিতেই হয়.......তবে মুশকিলটা হচ্ছে.......করবেটা কে? টেঁপির মুখের যা সুনাম…….বাঃ………বেড়ে হচ্ছে!”
 
“বেড়ে হচ্ছে? কী দাদু?”
 
“আরে অপক্ককদলী……দেখছিস না…রামলখন তেলের ভেতর হাতা দিয়ে থাবড়াচ্ছে আর আলুর চপগুলো কেমন ব্যাঙফোলা হয়ে ফুলে উঠছে…….আহাহা…….”  
 
পটা মরিয়া, “তা পাত্র তো হাতা গুটিয়ে রেডি”
 
“সেটা আবার কে?”
 
“কেন? আপনার সামনেই তো বসে আছে”
 
“তুই? বোঝো কারবার! তোর নিজেরই তো কোনও চালচুলো নেই”
 
“এখন নেই.......কিন্তু আর বছর দুয়েকের মধ্যেই দেখবেন আমি বেঙ্গলে খেলবই…..সঙ্গে সঙ্গে চাকরি…….তারপরই আইএসএল……...আপনি শুধু টেঁপিকে রাজি করান।”
 
“টেঁপিকে রাজি করাব আমি? ব্যস তা হলেই... হয়ে গেছে!”
 
“ কী আবার হয়ে গেল?”
 
“আলুর চপ......রেডি......রামলখন ছেঁকে তুলছে.......কি রে ভোচু........আনবি নাকি দুটো?” 
 
প্রেমের খাতিরে এই খ্যাঁটনকুড়ো ভূতের জন্যে দশটা টাকা গেলে কী আর আসবে যাবে? অগত্যা!
 
চোখ বুজে আলুর চপে কামড় দিয়ে অবনীমোহন বললেন, “এত যে টেঁপি টেঁপি করছিস, টেঁপি যখন তোর ঘেঁটি ধরে টেপাটেপি লাগাবে, সামলাতে পারবি তো?”
 
“ওটা আমার পেনাল্টি শটের কেস”, পটা হলুদ কার্ড বার করল, “আপনি ওসব নিয়ে একদম চাপ নেবেন না দাদু........আপনি শুধু টেঁপিকে গোল লাইনে ফেলে দিন.......ব্যাস!”  
 
“এত করে বলছিস যখন, দেখি কী করা যায়...ওদিকে ঐ দ্যাখ...রামলখনের বেগুনিও রেডি...কী রে ঘোচু না কী নাম বললি যেন, পচু বোধহয়...একবার টুকি মেরে আসবি নাকি...বেশি নিসনি – দুটো!”
 
মফস্বলে শীতের সন্ধে হুড়মুড়িয়ে নামে। আজ অফিস থেকে বেরোতে দেরি হয়ে গেছে অজিতেশের। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছেন আর দ্রুত পথ হাঁটছেন। শর্টকাট করার জন্যে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা সরু রাস্তাটা ধরলেন। আর তখনই বিপত্তি। বাঁশবনের মাঝামাঝি পৌঁছে দেখলেন দিনের আলো নিভে গেছে। অন্ধকার গাঢ় হয়ে থাবা গেড়েছে। ঝিঁঝির ডাকে কানে তালা লাগার জোগাড়, কোথাও কোনও আলোর আভাস নেই। খেয়াল ছিল না আজ অমাবস্যা। ইতস্তত জোনাকির ওড়াউড়ি তমসার গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। 
 
এত রাতে বাঁশবনে ঢোকাটা বুদ্ধির কাজ হয়নি, ভাবতে ভাবতে দ্রুত পা চালাচ্ছিলেন অজিতেশ। ঠিক তখনই “আঁক” করে থমকে গেলেন। পাঁচ গজ দূরে একটা ঝুপ্পুস গাছের নীচে তালঢ্যাঙ্গা এক মূর্তি। কুয়াশার মতো দীর্ঘ শরীরটা ঘিরে যেন অসংখ্য জোনাকির খেলা। মূর্তিটা যেন হাওয়ায় ভেসে এগিয়ে আসছে অজিতেশেরই দিকে। কী বিপদেই পড়া গেল!
 
অজিতেশ কাঁপা গলায় “রাম” “রাম” জপ করতেই চিল-চিৎকার, “হারামজাদা ভেড়ুয়া, মারবো টেনে কানের গোড়ায়, এই বাঁশবন টপকে ভুশুণ্ডির ঝিলে গিয়ে পড়বি। আবার রামনাম করা হচ্ছে...এই অবনীমোহনের নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, তার নাতি হয়ে তুই কিনা একটা ভীতুর ডিম, ব্যাটা বংশের কুলাঙ্গার! ছ্যা ছ্যা...আমার তো ঘেন্নায় আবার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে রে!”  
 
বোঝো! ইনিই তবে পঞ্চাশ বছর আগে গত হওয়া ঠাকুরদা! অবিশ্যি উনি যে কথাগুলো এতক্ষণ বললেন কোনওটাই মিথ্যে না। ওনার দোর্দন্ডপ্রতাপে সত্যিই বাঘে-গরুতে এক সময়ে এক ঘাটে জল খেত। আর নাতি সম্বন্ধে যা বললেন সেটাও পুরোদস্তুর সত্যি। অজিতেশ বরাবরই মুখচোরা, ঘরে-বাইরে অষ্টপ্রহর রকমারি ভয়ের নিদারুণ চাপে জেরবার, যেন কাছারি-অফিসে কেরানিগিরি করার জন্যই তাঁর জন্ম। সে না হয় হল। কিন্তু ঠাকুরদা হয়ে দুর্বল নাতিকে এরকম একটা বেয়ারা সময়ে পাকড়ে চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করা কেন রে বাবা?
 
অজিতেশের ভয়টা হঠাৎই যেন অনেকটা কেটে গেল। ঠাকুরদা হয়ে নিশ্চয়ই ইনি নাতির ঘাড় মটকাবেন না। এটা ভাবতেই অনেকটা বল এল মনে। মাথা-টাথা চুলকে বলেই ফেললেন শেষমেশ, “প্রণাম দাদু, আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে বেশ ইয়ে হল। এবার যদি দয়া করে যেতে দেন, টেঁপিটা আবার আমার অপেক্ষায়...ইয়ে আর কী...”  
 
“চো-ও-প! আবার মুখের ওপর চোপা!” জোর ধমক এল একটা, যদিও বায়ুভূত হয়ে বাঘাটে গলাটা একটু মিয়োনো, তাও জীবৎকালের তেজটা বেশ বোঝা যাচ্ছে, “চুপটি করে দাঁড়িয়ে যা বলছি মন দিয়ে শোন!” 
 
অবনীমোহন কী যেন ভাবলেন খানিকক্ষণ। ভাবার ঢঙটি বেশ মনোহারী। ভাবনার ঢেউয়ের সঙ্গে কুয়াশাশুভ্র শরীরটা দুলতে লাগল। দুলতে দুলতে এক সময়ে ছায়াশরীরটা স্থির হয়ে গেল, তারপর হঠাৎ সামনে ঝুঁকে এল। অজিতেশ সভয়ে দু’পা পিছিয়ে এলেন। 
 
“তুই তো থাকিস নিজের তালে! অপোগণ্ড!” অবনীমোহনের গলার স্বর এবার অনেকটা মোলায়েম, “মেয়েটার বয়স বাড়ছে...ওর বিয়ে-থা-র কথা ভেবেছিস কিছু?” 
 
বিয়ে? টেঁপির? বোঝো ক্যাঁচাল! এই তো সেদিন মেয়েটা ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ধরল। অফিস থেকে ফিরে টেঁপির হাতের আচার দিয়ে মাখা মুড়ি-বাদাম আর রাত্তিরে ডিমভাজা দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে আর নিজের দশটা-পাঁচটার কেরানিগিরি নিয়ে দিব্যি ছিলেন অজিতেশ। এর মধ্যে টেঁপির বিয়ের ভাবনা অনুপ্রবেশের সুযোগই পায়নি! 
 
অস্বীকার করে লাভ নেই। হ্যাঁ না গুলিয়ে মাথা নাড়লেন অজিতেশ, “না দাদু, টেঁপির বিয়ে নিয়ে সত্যিই কিছু 
ভাবিনি! আসলে এত তাড়াতাড়ি, আর তা ছাড়া আমার পকেটও তো ফক্কা, পাত্র পাব কোথায়? আজকালকার ছোকরারা ভারী সেয়ানা!” 
 
“তা সেয়ানা তো ভাল রে। আজকাল তো সেয়ানাদেরই রাজত্ব। তোর মতো অপক্ককদলীদের তো সারা জীবন কেরানিগিরি করেই কাটাতে হবে। তাতে লাভ আছে কিছু? এখন যা বলছি মন দিয়ে শোন... আমাদের  পটা, চিনিস তো? ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন, দুর্দান্ত স্ট্রাইকার, মারাদোনার মতো বল নিয়ে ঘোঁতঘোঁত করে দৌড়য়। আর দু-তিন বছরের মধ্যেই বেঙ্গলে খেলবে, সে বেচারা টেঁপিকে নিয়ে খুব উলঝুল হয়ে আছে...টেঁপিকে রাজি করিয়ে লাগিয়ে দে প্যাঁপোর-পোঁ”
 
“টেঁপিকে রাজি করাবো আমি? মেরেছে! রাত্তিরে একটু খিচুড়ি জুটত, সেটাও মারবেন দেখছি!”
 
বেজায় বিরক্ত হলেন অবনীমোহন, “আচ্ছা, তুই কী রে? ফতুয়া না পায়জামা? কেরানিগিরি আর খিচুড়ি নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলি। এই ছাপোষা জীবনটা থেকে বেরো না এবার”
 
“সে না হয় বেরোলুম” অজিতেশের গলায় সংশয় চাপা থাকল না, “কিন্তু দাদু, টেঁপিকে রাজিটা করাবো কী করে? পটার তো এখনও কোনও চালচুলোই নেই”
 
“আরে বাবা, এখন না হয় নেই, হতে কতক্ষণ? আমি তো রয়েছি না কি?”
 
“আপনি! আপনি কী করবেন?”
 
“কেন? পটা যখন বল নিয়ে ঘোঁতঘোঁত করে দৌড়বে, আমি পেছন থেকে অপোনেন্টের গোলকিপারশুদ্ধু সবকটাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেব, আমাকে তো কেউ দেখতে পাবে না...ফাঁকতালে পটা গোলের পর গোল ঢুকিয়ে যাবে, ব্যাস...ফটাফট মোহনবাগান – ইস্টবেঙ্গল - বেঙ্গল – আইএসএল...আছিস কোথায়?”  
 
এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। ভূতের ল্যাং মারার স্ট্র্যাটেজিটা মন্দ লাগেনি অজিতেশের। বাড়ি ফিরে টেঁপিকে ভূত-ঠাকুরদা থেকে শুরু করে ল্যাং মারা স্ট্র্যাটেজিতে পটার স্টার হয়ে ওঠার পরিকল্পনা অব্দি সব কিছু সবিস্তারে জানাবার পর ভেবেছিলেন বৃত্তান্ত শুনে টেঁপি একটা মারকাটারি রিঅ্যাকশন দেখাবে, কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছুই হল না। টেঁপি সব শুনে একটা মোনালিসা হাসি দিয়ে শুধু বলল, “সব্বাইকে ছেড়ে শেষমেশ ভূত-ঠাকুরদা!” মানে...গোল লাইন ক্লিয়ার!
 
তো প্যাঁপোর -পোঁ-টা লেগেই গেল। পটা আর টেঁপির যৌথ সংসারতরণী রৌদ্রতাপ–জলোচ্ছ্বাস সামলে জীবনসমুদ্রে ভাসমান। টেঁপি পটার ঘেঁটি ধরে টেপাটেপি শুরু করেছে কি না আর করলে পটা সেটা কেমন ভাবে সামলাচ্ছে, জানা নেই। তবে পটা খুব মন দিয়ে ফুটবলটা খেলছে, মানে ফুর্তিতেই আছে। 
 
গপ্পোটা এখনেই শেষ হতে পারত। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। পটার মতো একটা ছেলের খাতিরে অবনীমোহনের ভূত এত কান্ড করলেন কেন? 
 
এ প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব তো কেউ দেবে না। তবে পটার বন্ধুমহলের আন্দাজ – এর পেছনে আছে পটার দূরদর্শী স্ট্র্যাটেজি।
 
কারণ, আজকাল প্রায় রোজই সন্ধের আঁধার ঘন হলে দেখা যাচ্ছে পটাকে – রামলখনের সামনে হিপ পকেট থেকে টাকার পার্স বার করতে। আর তার পরে পরেই অনেকেই নাকি দেখেছে, অবনীমোহনের কুয়াশাবৃত ছায়াশরীর,  সরকারদের অন্ধকার ঝুপসি রোয়াকে আলুর চপ আর বেগুনির ঠোঙা হাতে, খুশিতে জ্বলজ্বলে ছায়ামুখে খেলে বেড়াচ্ছে সহস্র জোনাকির আলো।

1 Response

  1. Mrityunjoy Chatterjee says:

    Excellent story. Enjoyed throughly.